কোভিড-১৯ পলিটিক্স

কোভিড-১৯ পলিটিক্স

শিরোনাম দেখেই বুঝতে পারছেন কি নিয়ে কথা বলবো- করোনাভাইরাস যত ব্যাথা দিয়েছে তার অধিক দিয়েছে করোনা রাজনীতিবিদরা। তাই আলাদাভাবে বলা যায় ‘কোভিড-১৯ পলিটিক্স’। করোনাকে কেন্দ্র করে রাঘব বোয়ালরা দেখিয়ে যাচ্ছে একের পর এক সার্কাস। সরকারের দেয়া সহায়তা পূজি করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। দ্রব্য মূল্যের দাম বাড়িয়ে গরিবের পেটে লাথি মারে। ইচ্ছে মত নীতিনিরধারণ করে চলছে বাজার-ঘাট। গাড়ি ভাড়াসহ সকল স্থানেই রয়েছে করোনার প্রভাব। করোনা যেন এক উৎসবে পরিণত হয়েছে। যাই হোক কথা বললে চাকরি থাকবে না। তেমন অবস্থায় আমরা না যাই। মুখ বুজে দুটি ভাত খেয়ে সচেতন-সতর্ক থেকে সুন্দর জীবন কাটিয়ে দেব সকলে। জীবন হোক সুন্দর। 

গত বছর মার্চের ২৩ তারিখ বাংলাদেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। হয়ত দেশের অনেকেই লকডাউন শব্দ জানতে না। শুরুতেই গুটিয়ে গেছে সাধারণ মানুষ। আবার ছিলো পুলিশের লাঠিপেটার ভয়। কান ধরানোর ভয়। আবার অনেকে বাইরে বের হয়ে রঙিন শরীরে ব্যাথা নিয়ে ঘরে ফিরেছিলেন। তাই কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা গেছিল সে সময়ের লকডাউন।

এবছর তার চিত্র ব্যতিক্রম। ব্যতিক্রম কেন সবাই অনুমান করতে পেরেছেন। বাংলার মানুষ জেনে গেছে লকডাউন কি জিনিসি। পুলিশকে ফাঁকি দিতে পারলেই আমি রাজা। অবস্থা খানিকটা তেমন। করোনাভাইরাস রোধে দেশে এবছর (৫ এপ্রিল) সাত দিনের জন্য দ্বিতীয় বারের মত লকডাউন ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার। বরিশাল নগরীতে করোনাভাইরাস রোধে সর্তকতামূলক কাজ করছেন মেট্রপলিটন পুলিশ। নগরীতে ঘুরে ঘুরে গাড়িবহর, মাইক বাজিয়ে, করোনার প্রতিচ্ছবি দেখিয়ে বিভিন্নভাবে সর্তকতা দিখেয়ে চলছেন অনবরত।  

এতকিছুর পরেও সরকারের দেওয়া দুইটি লকডউন এর চিত্র তুলে ধরলে হাজারও প্রশ্ন জাগে। তার উত্তর নেই কারো কাছে। কেন উত্তর নেই? সেই প্রশ্ন নেই। তবে তাকে হাস্যকরভাবে একটু রঙ মাখিয়ে বলা যায় ভয়ংকর লকডাউন।

ভয়ংকর লকডাউন এই কারণে পর্যালোচনা করলে ভয়ংকর’ই মনে হবে। দেশেরে শিল্প-কলকারখানা খোলা, বইমেলা চলছে, অফিস-আদালত সীমিত পরিসরে, শুরু হয়েছে বাংলাদেশ গেমস, আর কাঁচাবাজার খোলা না থাকলে খাবো কি? যেগুলা বন্ধ আছে লকডাউনের জন্য  তা হলো- বাস, রাইড শেয়ারিং, ট্রেন-লঞ্চ।

এবার প্রশ্ন আপনার কাছে- ভাবুন! শিল্প-কল কারখানায় শ্রমিক কিভাবে পৌঁছোবে? বইমেলা কাদের জন্য খোলা? সরকারি অফিস-আদালতে যারা চাকরি করে সবার কি গাড়ি আছে? বাংলাদেশ গেমসের দর্শক কে? কাঁচাবাজারে নিয়ন্ত্রণ নেই কেন? লকডাউন ঘোষণার পরপরই হইহুল্লো লেগে গেছে স্থানীয় বাজারসহ দেশের সব স্থানে।  তবে কেমন লকডাউন? 

গরমে জনশূন্য বরিশাল নগরী এমন কথা পুরোটাই মিথ্যা। রাস্তায় যানবাহনও চলছে, চলছে জনসমাগমের আড্ডা, চলা ফেরা। এদিকে বরিশালে করোনা পরিস্থিতি গত বছরের তুলনায় দশগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে মৃত্যুর হার বিগত বছরের সর্বোচ্চ রেকর্ড ছাড়িয়েছে।

গতবছরে একই সময় দেখা গেছে লকডাউনের শুরুতে দোকানপাটও বন্ধ ছিল। এবছর অন্য রকম, সকাল থেকেই খুলেছে বসেছে দোকানপাট। নিত্যপণ্য ছাড়াও অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা দেখা গেছে। দেখা গেছে রাস্তাঘাটে হকারদের কেউ মুড়ি নিয়ে, কেউ মাছ নিয়ে আবার কেউ দেশি মোরগ নিয়ে হইহুল্লোড়।

দুপুর ঘনিয়ে বিকেল সব দিনের থেকে আজ একটু আলাদা তাই হয়ত আমার নগরবাসী ছন্দে আনন্দে বেরিয়ে পরেছিলেন করোনা উৎসব দেখতে। বঙ্গবন্ধু উদ্যোনে, মুক্তিযোদ্ধ পার্কে, শিশু পার্কে, ত্রিশ গোডাউনে, এমনকি দুর্গা সাগরেও। কোথাও একটু ফাঁকা জায়গা ছিলন। 

আমাদের জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী তাঁর বক্তবে বলেছেন, মানুষকে ঘরে থাকতে হবে, সকলকে সহযোগিতা করতে হবে। তাহলে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ কারা যেতে পারে। এবার আমরা দেখছি সংক্রমণ খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। তাই সবাইকেই সংযত আচরণ করতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

কোভিড-১৯ পলিটিক্স, ভয়ংকর লকডাউন, করোনা উৎসব সব কিছু থামিয়ে আমার এবার আমাদের জীবনের জন্য লড়তে হবে। জীবন খুব দামী।