কোরবানির ঈদে মাংস পাবে দুই লাখ পরিবারের ১২ লাখ রোহিঙ্গা

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, বিজিপি ও সেখানকার মগ-মুরংদের হাতে ধর্ষণ, হত্যা ও লুণ্ঠনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে রোহিঙ্গাদের এবার কোরবানি ঈদের মাংস বিতরণ করবে স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন সংস্থা। কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩২ টি ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মাঝে প্রায় ২ লাখ ১২ হাজার পরিবার কোরবানির এই মাংস পাবে। পরিবারগুলোতে মোট রোহিঙ্গা জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ১২ লাখ। ইতোমধ্যে প্রতিটি পরিবারের মাঝে কোরবানির মাংস বিতরণ করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে তালিকা প্রণয়ন কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোতেও মাংস বিতরণের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানিয়েছেন, কোরবানির ঈদে রোহিঙ্গারা যেন কিছুটা হলেও আনন্দ-উচ্ছ্বাস করতে পারে, সে বিবেচনা থেকে এই উদ্যোগ। তবে প্রতি পরিবারের মাঝে কত কেজি করে মাংস বিতরণ করা হবে তা চূড়ান্ত হয়নি। শুধু রোহিঙ্গারা নয়, স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝেও ৩০ ভাগ মাংস বিতরণের নির্দেশনা রয়েছে। ৭০ ভাগ বিতরণ হবে আশ্রিত রোহিঙ্গা পরিবারের মাঝে। তাই প্রতিটি পরিবার কোরবানির মাংস পাবে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) আবুল কালাম বলেন, আমরা বিভিন্ন ব্যক্তি ও এনজিওর মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের জন্য যেসব গরু পেতে যাচ্ছি। ঘাটতি থাকলে সরকারি উদ্যোগেও গরু কেনা হতে পারে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ক্যাম্প ইনচার্জদের তত্ত্বাবধানে মাংস বণ্টন করা হবে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ৮৫ হাজার ৫৫৭। তবে পরিবার রয়েছে প্রায় ২ লাখ ১২ হাজার।
স্থানীয় একটি এনজিও সূত্রে জানা গেছে, তুরষ্ক ভিত্তিক এনজিও ডায়নেট ফাউন্ডেশন ৫০ হাজার কেজি মাংস বিতরণ করবে রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মাঝে। ওই এনজিও’র একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিশ্বের ১৬০টি দেশে ওই এনজিও কোরবানির মাংস বিতরণ করে থাকে। এবার সর্বোচ্চ পরিমাণ মাংস বিতরণ হবে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ও স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে।
উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোরবানির ঈদে মাংস বিতরণের খবরে তারা বেশ উৎফুল্ল রয়েছে। নিজেদের মাঝে আনন্দ ভাগাভাগি করে তারাও একজন মুসলমান হিসেবে স্বাচ্ছন্দ্যে কোরবানির ঈদ উদযাপন করতে চান।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে তাদের নিজ মাতৃভূমি ছেড়ে পালিয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছে বাংলাদেশে। এর আগে আরও দুইটি কোরবানির ঈদ এখানেই করতে হয়েছে তাদের তবে এবারের মতো তালিকা করে কোরবানির মাংস বিতরণের প্রক্রিয়া গেল দুই ঈদে হয়নি। তাই যেটুকু মাংস পাওয়া যাবে তাতেই তারা সন্তুষ্ট থাকবেন বলে প্রত্যাশা প্রশাসনের।