কোলাহলে মুখরিত কুয়াকাটা

কোলাহলে মুখরিত কুয়াকাটা

স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে দেয়ার পর সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত পর্যটকদের কোলাহলে মুখরিত হয়ে উঠেছে। করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটিতে পর্যটকদের আনাগোনায় সৈকত যেন চিরচেনা রূপে আর্বিভূত হয়েছে। ঢল নেমেছে ভ্রমণ পিপাসুদের। 

দীর্ঘ পাঁচ মাস পর হাজার হাজার পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়ে মিলনমেলায় রূপ নিয়েছে সৈকতজুড়ে। পর্যটকদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও থানা পুলিশসহ কলাপাড়া উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম মাঠে কাজ করছে।

পর্যটন ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা জানায়, করোনা ভাইরাসের কারণে কয়েকমাস পর্যটকশূন্য ছিল সূর্যোদয় সূর্যাস্তের বেলাভূমি সাগর কন্যা কুয়াকাটা। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়া হয় আবাসিক হোটেল-মোটেলসহ সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বিশাল জলরাশি, দীর্ঘ সৈকত, বালুকনা, সমুদ্রের গর্জনে যেন কাছে টানে ভ্রমন পিপাষুদের। তাইতো শুক্র ও শনিবার দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটিতে পর্যটকদের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে সমুদ্র সৈকত। সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে হইহুল্লোরে মেতে উঠতে দেখা গেছে ভ্রমণ পিপাসুদের। অনেকেই সৈকতের ঢেউয়ে গা ভাসিয়ে উপভোগ করছেন প্রকৃতির মনমুগ্ধকর সৌন্দর্য।

দেখা গেছে, খুশির ছোঁয়া স্থানীয় পর্যটন নির্ভর ব্যবসায়ীদের মাঝে। পসরা সাজিয়ে বিকিকিনি করছে ব্যবসায়ীরা। নিজেদের এই স্মৃতি ধরে রাখতে ক্যামেরার ফ্রেমবন্দি করে রাখছে অনেক পর্যটক। আবার সৈকতে খেলায় মেতে উঠেছে পর্যটকরা। মোটরবাইকে চেপে পর্যটন কেন্দ্রের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখছেন ভ্রমন পিপাসুরা। পিকনিক পার্টি মেতেছে আনন্দে।
সুন্দরবন সংলগ্ন পূর্বে টেংরাগিরির বন, লেম্বুর বন, গঙ্গামতির লেক, ঝাউবাগান, লাল কাকড়ার চর, বৌদ্ধ বিহার রাখাইন পল্লী, এশিয়ার বৃহত্তম মিস্ত্রিপাড়া বৈৗদ্ধ বিহার পর্যটকের উপচে ভীড়। আবাসিক হোটেল-মোটেলে রয়েছে বুকিং। বেচা বিক্রি হচ্ছে খাবার হোটেল, শামুক ঝিনুকের দোকান, আচার, বার্মিজ সামগ্রীর দোকানগুলোয়। সব মিলিয়ে ব্যবসায়ীরা খুশি। করোনা ভাইরাসে বন্ধ থাকার পর পর্যটকদের আনাগোনায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে কুয়াকাটা তাই বেচা বিক্রি করে খুশি বলে জানালেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স এসোশিয়েশনের সাধারন সম্পাদক ও কুয়াকাটা গেস্ট হাউসের সত্ত্বাধিকারী আবদুল মোতালেব শরীফ জানান, দীর্ঘ পাঁচ মাস বন্ধ থাকার পর প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থবিধি মেনেই পর্যটকদের রাখা হচ্ছে। তবে বহু দিন ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ থাকার পর পর্যটকদের কিছু সমাগম হয়েছে। দূর থেকে পর্যটকরা তেমন আসছেন না। কাছাকাছি জেলার মানুষই বর্তমানে ঘুরতে আসছে। তাই হোটেলের ৩০ শতাংশ রুম বুকিং আছে। তবে যেহেতু বর্ষা মৌসুম সেহেতু পর্যটক এখন একটু কম আসছে। আর এক-দেড় মাস পর কুয়াকাটায় পর্যটকদের বেশ আনাগোনা হবে। কারণ তারা আসার জন্য যোগাযোগ করছেন।

কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল খালেক জানান, কুয়াকাটায় বেশ পর্যটকের সমাগম হয়েছে তাই স্বাস্থ্যবিধি মানতে তাদেরকে মাইকিংসহ বিভিন্ন ভাবে সতর্ক করা হচ্ছে। পুরো কুয়াকাটা জুড়েই রাখা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পর্যটকদের যে কোন ধরনের সমস্যা তাৎক্ষণিক সমাধানের জন্য মাঠে কাজ করছে পুলিশ। জিরো পয়েন্ট থেকে সকলের চলাচলের জন্য মাইকিং এর মাধ্যমে সচেতন করা হচ্ছে। এছাড়াও হ্যান্ড মাইকিংয়ের মাধ্যমেও সতর্ক করা হচ্ছে পর্যটকদের।

কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদুল হক বলেন, পর্যটকদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে প্রশাসন, থানা পুলিশ ও ট্যুরিষ্ট পুলিশের সার্বক্ষণিক নজরদারি রয়েছে। আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম কাজ করছে। স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়েও সকলে একযোগে কাজ করছে।