গৌরনদীতে চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে জেলেদের বরাদ্দকৃত চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ

বরিশালের গৌরনদীতে জাটকা শিকারে বিরত থাকা জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত বিনামূল্যে খাদ্য সহায়তার (বিশেষ ভিজিএফ) চাল বিতরণে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ৩ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। করোনার দুর্যোগের সময় জেলেদের মাঝে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের চাল বিতরণ না করে আত্মসাত করার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।
প্রকৃত জেলেরা সরকারি খাদ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তাদের পরিবারে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অপকর্ম ঢাকতে একজন চেয়ারম্যান কতিপয় জেলের মাঝে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের বরাদ্দকৃত ৮০ কেজি চালের পরিবর্তে নগদ ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা করে প্রদান করেন। এ ছাড়া ২জন চেয়ারম্যান তাদের নিকটাত্মীয়, ব্যবসায়ী, কৃষক, বিদেশ ফেরতসহ অন্য পেশার অনেক ব্যক্তির নাম জেলে তালিকাভুক্ত করে আত্মরক্ষা করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউপি সদস্য বজলুর রশিদ অভিযোগ করেন, বার্থী ইউনিয়নে ৮০ জেলের নামে বরাদ্দকৃত ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের সরকারি চাল উত্তোলন করে আত্মসাত করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহ্জাহান প্যাদা। এ কারনে তার ওয়ার্ডের অধিকাংশ জেলে ২ মাসে বরাদ্দকৃত ৮০ কেজি চাল প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছে। জেলেদের চাল আত্মসাতের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর চেয়ারম্যান শাহজাহান প্যাদা নিজস্ব লোক দিয়ে কয়েকদিন আগে বার্থী সহ বিভিন্ন এলাকার কিছু সংখ্যক জেলেদের বাড়িতে ৫০০ থেকে এক হাজার করে টাকা পৌঁছে দেয়।
বার্থী গ্রামের তালিকাভূক্ত জেলে মনির হাওলাাদার, অমূল্য হালদার, কালাম সরদার অভিযোগ করেন, তালিকাভূক্ত জেলে হয়েও তারা সরকারি চাল পাননি। অথচ প্রবাসী হালিম সন্যামত, বিদেশ ফেরত হাবুল হাওলাদার, মিজানুর রহমান ব্যবসায়ী পরিতোষ দত্ত ও ইউপি চেয়ারম্যানের চাচা আমিন আরশেদ প্যাদার নামে চাল বিতরন দেখানো হয়েছে।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, চলতি বছর ওই উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ৮৫৫ জন কার্ডধারী জেলের নামে খাদ্য সহায়তার সরকারি চাল বরাদ্দ হয়েছে। খাঞ্জাপুর ইউনিয়নে ১১১ জন, বার্থী ইউনিয়নে ৮০জন, চাঁদশী ইউনিয়নে ৮০ জন, মাহিলাড়া ইউনিয়নে ৯০ জন, বাটাজোর ইউনিয়নে ৯০ জন, নলচিড়া ইউনিয়নে ১৫০জন, শরিকল ইউনিয়নে ১৫০ জন ও পৌরসভায় ১০৪ জন জেলে সরকারি খাদ্য সহায়তার তালিকাভুক্ত।
সরকারি বিধি অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মে মাস পর্যন্ত জাটকা শিকারে বিরত থাকা তালিকাভুক্ত জেলেদের ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে মোট ১৬০ কেজি চাল দেয়ার কথা। ইতিমধ্যে প্রথম দফায় ২ মাস ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের চাল বিতরণ হওয়ার কথা। বাকী দুই মাস দেয়া হবে দ্বিতীয় ধাপে।
অভিযোগ অস্বীকার করে বার্থী ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান প্যাদা বলেন, তার ইউনিয়নে ৮০জন জেলের নামে বরাদ্দকৃত ২ মাসের চাল তিনি ১৬০ জন জেলের মাঝে ৪০কেজি করে বিতরণ করেছেন।
শরিকল ইউপি সদস্য আফজাল হোসেন মোল্লা অভিযোগ করেন, তাদের না জানিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মো. ফারুক হোসেন মোল্লা ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের বরাদ্দকৃত ১৫০ জন জেলের নামে ৮০ কেজি করে চাল উত্তোলন করেন। কিন্ত বিতরণের সময় তিনি জেলেদের ৮০ কেজির পরিবর্তে নিজের খেয়াল খুশি মতো ৪০ কেজি করে চাল বিতরণ করেছেন। তাও আবার তালিকাভূক্ত সব জেলেদের দেয়া হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন।
তবে শরিকল ইউপির চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন মোল্লা জেলেদের চাল আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার ইউনিয়নে জেলের সংখ্যা বেশী হওয়ায় তিনি ১৫০ জন জেলের ২ মাসের চাল উত্তোলন করে ৩০০ জেলের মাঝে ৪০ কেজি করে বিতরণ করেছেন।
নলচিড়া ইউনিয়নে প্রকৃত জেলে নয় এমন ব্যক্তিদের চাল দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নলচিড়া ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম হাফিজ মৃধা অভিযোগ অস্বীকার করেন, তার ইউনিয়নে ৭১০ জনের নাম জেলেদের তালিকায় রয়েছে। এরমধ্যে এক-তৃতীয়াংশ প্রকৃত জেলে। অন্য পেশার মানুষ উপজেলা মৎস্য অফিসে জেলে তালিকাভুক্ত হওয়ায় বরাদ্দকৃত চাল নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের বরাদ্দকৃত চাল তালিকাভুক্ত জেলেদের মাঝে বিতরণের মাস্টাররোল কপি এখনও তিনি পাননি।
গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান বলেন, জেলেদের চাল বিতরণে অনিয়মের কোন অভিযোগ তিনি পাননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।