চাপের মুখে মুমিনুল

চাপের মুখে মুমিনুল

‘অধিনায়কত্ব এমন দায়িত্ব, পারফরম্যান্স না করলে চাপে পড়তেই হবে’- দক্ষিণ আফ্রিকায় দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ হেরে বিমানবন্দরে নেমে কথাগুলো বলেছিলেন বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক। এই কথার সঙ্গে তার সাম্প্রতিক অবস্থা মিলে যায়! ২০১৯ সালে ভারত সফরে হুট করে অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়ার পরই ছন্দ হারান তিনি। বিচ্ছিন্নভাবে বেশ কিছু ইনিংস থাকলেও আদতে গত কিছুদিন নিজের ছায়া হয়ে আছেন। বাঁহাতি ব্যাটার বারবার বলার চেষ্টা করেছেন, ফর্ম নিয়ে তার দুচিন্তা নেই। কিন্তু বাংলাদেশ অধিনায়কের ম্যাচের পর ম্যাচ ব্যর্থতা দুচিন্তা বাড়িয়েই যাচ্ছে।

চট্টগ্রামে তিন সেশনের অনুশীলনে রানে ফেরার তীব্র তাড়না দেখা গেলেও কিছুটা যেন বিভ্রান্ত তিনি। আজ (বৃহস্পতিবার) কয়েক দফা নেট করেছেন ‘পকেট ডায়নামো’ খ্যাত এই ব্যাটার। সকালে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতে কিছুটা জড়তা থাকলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেটি কাটিয়ে ওঠেন। প্রেসবক্স প্রান্তের নেটে স্থানীয় এক অফ স্পিনারের বিপক্ষে খেলতে নেমে ব্যাটে বল লাগাতেই পারছিলেন না! তার এক ওভারের চারটি বলেই লাইন মিস করেছেন বাঁহাতি ব্যাটার।

অনুশীলনের পুরো সময় অস্বস্তি নিয়ে ব্যাটিং করতে দেখা গেছে মুমিনুলকে। বাংলাদেশ অধিনায়কের অস্বস্তিকর ব্যাটিংয়ের ভিডিও করছিলেন এই প্রতিবেদক। তাকে লক্ষ্য করে মুমিনুল বিরক্ত গলায় বলে উঠলেন, ‘এখানে ভিডিও করার কী আছে!’ অথচ সংবাদকর্মীদের নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবেই প্রতিবেদক ভিডিও ধারণ করছিলেন। মুমিনুলের এমন বক্তব্যেই আন্দাজ করা যায় কতটা চাপে আছেন তিনি।

পরিসংখ্যানের দিকে তাকালেও মুমিনুলের চাপে থাকার কারণ স্পষ্ট হয়ে যাবে। টেস্ট ক্রিকেটের নেতৃত্ব পাওয়ার পর নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন। সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলা চার ইনিংসের একটিতেও দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেননি। ইনিংসগুলো যথাক্রমে- ০, ২, ৬ ও ৫। অবস্থা এমন যে শুধু ব্যাটিংয়ে নয়, অধিনায়ক হিসেবেও ব্যর্থ হচ্ছেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম টেস্টে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত না নিয়ে করেছেন ‘ভুল’। এরপর বোলার বদলেও বিচক্ষণতা দেখাতে পারেননি।

অধিনায়ক হিসেবে ১৫ টেস্ট খেলেছেন মুমিনুল। ২৮ ইনিংসে ৩ সেঞ্চুরি ও ২ হাফসেঞ্চুরিতে তার রান ৯০১। অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর প্রথম ৭ টেস্টে তিনটি সেঞ্চুরি পেলেও পরের ৮ টেস্টে সেঞ্চুরিহীন মুমিনুল। সব মিলিয়ে টেস্টে সর্বশেষ ১২ ইনিংসে মুমিনুলের রান ১৬৬, গড় ১৪! এই ১২ ইনিংসে দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পেরেছেন মাত্র তিনবার। অন্যদিকে তিনবার রানের খাতা না খুলেই আউট হয়েছেন। এই সময়ে কোনও সেঞ্চুরিও নেই টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিয়ানের। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের ম্যাচে তিনি খেলেছিলেন ৮৮ রানের ইনিংস। অথচ অধিনায়ক হওয়ার আগে তার গড় ছিল প্রায় ৪১। অন্যদিকে ১৫ ম্যাচ অধিনায়কত্ব করে সেই গড় এখন নেমে এসেছে ৩৪-এ।

মুমিনুল চাপ থেকে বেরিয়ে লড়াই করলেও পেরে উঠছেন না। তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট চট্টগ্রামে বলেই আশাবাদী হওয়া যায়। হয়তো নিজের পয়মন্ত ভেন্যুতে রান খরা কাটাবেন তিনি। কেননা মুমিনুলের ১১ সেঞ্চুরির সাতটিই এই ভেন্যুতে। এমনকি নিজের ক্যারিয়ারসেরা ১৮১ রানের ইনিংসও এসেছে চট্টগ্রামেই। নিজের লাকি ভেন্যুতে মুমিনুলের প্রত্যাবর্তন হবে এমন কিছু আশা করাই যায়। যদিও সর্বশেষ খেলা চট্টগ্রাম টেস্টে মুমিনুলের ব্যাট হাসেনি। দুই ইনিংসে তার রান ৬ ও ০।

বাঁহাতি ব্যাটার চট্টগ্রামে তিনটি সেশনে নেটে দীর্ঘক্ষণ ঘাম ঝরিয়েছেন। অনুশীলন শেষ করেও নেট ছাড়েননি। ড্রেসিং রুম প্রান্তে ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্সের সঙ্গে নিমগ্নচিত্তে কাজ করতে দেখা গেছে। মুমিনুলের অফফর্ম নিয়ে বিন্দুমাত্র দুচিন্তা নেই সিডন্সের, ‘আমি ওকে বলেই যাচ্ছি... সে চট্টগ্রামে সাতটি সেঞ্চুরি করেছে এবং এখানে আরও একটি সুযোগ আরও গোটা দুই সেঞ্চুরি করার। এই মাঠ সে ভালোবাসে। আমরা চেষ্টা করছি তাকে তৈরি করে তুলতে এবং সে দারুণ আত্মবিশ্বাসী।’

সিডন্সের মতো ক্রিকেটপ্রেমীদেরও আশা, চট্টগ্রামে হাসবে মুমিনুলের ব্যাট। তার ব্যাট হাসলে হাসবে বাংলাদেশও!