প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত নার্সরা

আন্তর্জাতিক নার্স দিবস ছিলো বৃহস্পতিবার। করোনা মহামারিকালে সম্মুখসারির অন্যতম যোদ্ধা ছিলেন নার্স ও মিডওয়াইফরা। করোনা আক্রান্ত রোগীদের পাশে থেকে তারা নিরলসভাবে সেবা দিয়েছেন। এমনও হয়েছে, অনেক সময় পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থাও পাননি।
করোনা মহামারি শুরুর পর সম্মুখসারির যোদ্ধাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে নার্সিং অধিদপ্তর থেকে ২২ হাজার ৮৩ জন নার্সের জন্য প্রণোদনার আবেদন করা হলেও পেয়েছেন ১৩ হাজার ৫৫২ জন। বাকিদের আবেদন মন্ত্রণালয়ে গেলেও তারা প্রণোদনা পাননি।
নার্সিং অধিদপ্তরের তথ্য মতে, করোনার সবচেয়ে কঠিন দিনগুলোতে পেশাগত দায়িত্ব পালন করার সময় পাঁচ হাজারেরও অধিক নার্স ও মিডওয়াইফ করোনা আক্রান্ত হন। এসময়ে তাদের মধ্যে মারা যান ৩৬ জন।
সম্মুখসারির যোদ্ধা হয়েও প্রায় নয় হাজার নার্স প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রণোদনা কেন পাননি, জানতে চাইলে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার আব্দুল লতিফ বলেন, ‘প্রণোদনা হাসপাতালগুলোর মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। প্রণোদনার টাকা নার্সদের দিতে হয়তো কিছু হাসপাতাল গড়িমসি করতে পারে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা মন্ত্রণালয়ে প্রণোদনার জন্য আবেদন জানিয়েছি। তবে করোনা ইউনিটে যারা কাজ করেছেন, শুধুমাত্র তাদের জন্যই প্রণোদনার আবেদন করা হয়েছে।’
করোনার প্রথম টিকা গ্রহণকারী কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা বলেন, ‘করোনাকালীন সময়ে অনেক সমস্যা ও সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাজ করতে হয়েছে। এসময় অনেক সহকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, কেউ মারাও গেছেন। তবে কোভিড ওয়ার্ডে যারা কাজ করেছেন তারা সবাই প্রণোদনা পাননি।’
নাজমা আক্তার নামে অপর একজন স্টাফ নার্স বলেন, ‘করোনাকালে সবাইকে কোভিড ওয়ার্ডে ডিউটি দেওয়া হয়নি। সেক্ষেত্রে আমাদের অনেকেই অন্য রোগীদের সেবা দিয়েছি। কোভিড ওয়ার্ডে কাজ না করেও অনেক নার্সকে আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসতে হয়েছিল। কারণ, আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত এসব রোগীদের জেনারেল ওয়ার্ডে রাখা হতো। রিপোর্ট পজিটিভ হলেই আমরা তাদের করোনা ইউনিটে পাঠিয়ে দিতাম। সেক্ষেত্রে করোনার সময় হাসপাতালে ডিউটি করা সবাইকেই প্রণোদনার আওতায় আনা দরকার ছিল।’
বাংলাদেশ নার্সিং অধিদপ্তরের হিসাব মতে, দেশে রেজিস্টার্ড নার্স আছেন ৭৬ হাজার ৫১৭ জন। আর মিডওয়াইফ আছেন ৬ হাজার ২৮৫ জন। এর মধ্যে, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন ৪২ হাজারের বেশি নার্স ও মিডওয়াইফ। আর বেসরকারিভাবে কাজ করছেন প্রায় ৩০ হাজার নার্স।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে নার্সিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউট আছে ৪২৯টি। এর মধ্যে, সরকারি ডিপ্লোমা ইন্সটিটিউট ৪৪টি। বেসরকারি ডিপ্লোমা ইন্সটিটিউট ৩০০টিরও বেশি। সরকারি নার্সিং কলেজ বিএসসি ১৩টি আর বেসরকারি ১৪৫টি। এছাড়া সরকারিভাবে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ আছে মাত্র ১টি।
দেশের প্রায় সব হাসপাতালেই প্রয়োজনের তুলনায় নার্সের সংখ্যা কম। আন্তর্জাতিকভাবে একজন চিকিৎসকের সঙ্গে তিনজন নার্স থাকাই স্বীকৃত। কিন্তু সে হিসেবে বাংলাদেশে প্রত্যেক চিকিৎসকের বিপরীতে নার্স রয়েছেন ১ দশমিক ৬৬ জন।
এছাড়া প্রতিটি হাসপাতালের মোট শয্যার ১০ শতাংশ স্পেশালাইজড বেড থাকার কথা। আর সেক্ষেত্রে প্রতি চার বেড অনুপাতে একজন নার্স ও প্রতিটি স্পেশালাইজড বেডের বিপরীতে একজন করে নার্স থাকবে। সেখানে পৃথক তিন সিফটে সমপরিমাণ সেবা দেবেন নার্সরা। কিন্তু এক্ষেত্রে দেশের হাসপাতালগুলোতে নার্সের বড় ঘাটতি রয়েছে।