সারা দেশে ফ্লাট বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটেই চলেছে। এই ধারা বরিশালেও ডালপালা ছড়াচ্ছে। বরিশাল নগরের বাসা-বাড়িতে মাঝে মাঝেই চুরির ঘটনা ঘটছে। এতো এতো চুরির ঘটনা ঘটলেও তার বেশিরভার ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকে। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী চেষ্টা করলে যে এই চোর চোর কিংবা চুরি চুরি খেলা বন্ধ করা সম্ভব তার প্রমাণ মিলেছে। গত কয়েকদিনে পুলিশের অভিযানে বাসা-বাড়িতে চুরির সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে চক্রের ৮ সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছে। তাদের কাছ থেকে বেশ কটি মুঠোফোন, নগদ অর্থ, ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়েছে।
এই চোর চোর খেলা দীর্ঘদিনের। এদের উৎপাতে অনেক পরিবার নিঃশ^ হয়েছে। সর্বশেষ কভার্ডভ্যান চাপায় নিহত ট্রাফিক সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়ার বাসায় চুরির পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। তারপর শুরু হয় অভিযান। অভিযানে সফলতাও আসে। গতকাল পুলিশ কমিশনার সফলতা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। কিন্তু চোর চক্রের ৮ সদস্য গ্রেপ্তার হলেই এই সমস্যার সমাধান হবে না। এই চোর চক্রর তৎপরতা থামাতে কার্যক্রর উদ্যোগ নিলেই আগামীতে ফ্লাট বাড়িতে চুরি বন্ধ হতে পারে।
আমরা বলতে চাই, পুলিশ সদস্য নয়, নগরের যে প্রান্তেই চুরির ঘটনা ঘটকু তা যেন সমান গুরুত্ব পায়। অপরাধ দমনে যেন কারো প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া না হয়। বিশষ গুরুত্বপূর্ণ কারো বাড়িতে চুরির ঘটনা হয়তো প্রচার বেশি পায়। কম গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকদের বাড়িতে চুরির ঘটনা তেমন প্রচার পায় না। কিন্তু বাস্তবে বিশেষ গুরুত্ব এবং কম গুরুত্ব দুটিই চুরি। রুরি বন্ধ করতে হলে দুটোকেই সমান গুরুত্ব দিতে হবে।
সামনে ঈদুল আজহা। এই সময় নগরের বাসা-বাড়ির অনেক বাসিন্দা গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাবে। এই সময় চোরচক্র আরো সক্রিয় হয়ে ওঠবে। তাদের ঠেকাতে এবং নাগরিকেদের নিরাপত্তা দিতে উদ্যোগ নিতে হবে। যদিও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী এই সময় বাড়তি সতার্কতা জারি করে। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশও দেওয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ, চুরি কিংবা দুবৃত্তদের ব্যপারে তথ্য দিলেও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বহিনীর বিরুেেদ্ধ আমরা এমন অভিযোগ শুনতে চাই না। অনেক সময় পুলিশের সোর্স পরিচয় দিয়েও বাসা-বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। প্রশাসনের নাম ব্যবহার করে একদল দুষ্টচক্র এইসব অপকর্ম করে বেড়ায়। তাদের বিরুদ্ধেও সতর্ক থাকতে হবে।
অন্যদিকে ফ্লাট বাড়ির মালিক এবং বাসিন্দারেও দায় এড়িয়ে চললে হবে না। যারা বাসা-বাড়ির বাসিন্দা তাদেরও সতর্ক থাকা দরকার। বাড়িতে বিদ্যুৎ, পানি, টেলিভিশন ও অন্যান্য ইলেট্রনিক যন্ত্র মেরামতের জন্য যাদের ডাকা হয় তাদের সম্পর্কে সঠিক তথ্য জেনে নিতে হবে। অনেক সময় বাসা-বাড়ির কাজের সঙ্গে যুক্ত এইসব কর্মীরা চোর চক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকে। তারাই সুযোগ বুঝে চুরি এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ডাকাতি করে থাকে।
আসন্ন ঈদের নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। চোর চক্রের সঙ্গে চোর চোর খেলা না চলে সেটা দেখতে হবে। চুরির সঙ্গে যে বা যারাই জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কার বাড়ি চুরি হয়েছে সেটা যেন গুরুত্ব না পায়। গুরুত্ব দিতে হবে চুরির ঘটনাকে। তাহলে চোর চক্রের চুরি চুরি খেলা বন্ধ হবেই।