জিপিএ-৫ নয়, সন্তান হোক সম্ভাবনাময়

জিপিএ-৫ নয়, সন্তান হোক সম্ভাবনাময়
উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এইসএসসি) পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। আশার কথা হচ্ছে ধারাবাহিকভাবে আমাদের মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে। পাশের হার এবং জিপিএ-৫ সব দিক থেকে মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে মেয়েদের এই এগিয়ে যাওয়া এবং ছেলেদের পিছিয়ে পড়ার গতি দেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন ‘দেশে শিক্ষাক্ষেত্রে জেন্ডার সমতা আনতে ছেলেদের আরও সচেষ্ট হতে হবে। পরীক্ষাগুলোতে তাদের বেশি অংশ নিতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রীর এই উক্তি একদিকে ইতিবাচক। অন্যদিকে নেতিবাচক। ইতিবাচক এইজন্য যে আমাদের নারীরা শিক্ষা ক্ষেত্রে এগিয়ে চলেেেছ। আর নেতিবাচক এই জন্য যে আমাদের ছেলে সন্তানরা শিক্ষা ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে। কেবল শিক্ষা ক্ষেত্রে মেয়েরা এগিয়ে গেলেও তাকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এই পর্যন্ত আসতে হয়েছে। পক্ষান্তরে ছেলেদের তেমন চ্যালেঞ্জ না থাকলেও পিছিয়ে পড়ায় সম্ভাবনার বাংলাদেশ একটি আশঙ্কার সম্মুখীন হতে যাচ্ছে।। এখান থেকে উত্তোরণ ঘটাতে সার্বিকভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। এই উদ্যোগ নেওযার জন্য কেবল জিপিএ-৫ পাওয়ার ঝোক কমাতে হবে। আমাদের সন্তানদের সম্ভাবনা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সেটা একমাত্র জিপিএ-৫ পাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। আমাদের সন্তানরা যেন সৃজনশীল হয়ে বেড়ে উঠতে পারে সেদিকে নজর দিতে হবে। মেয়েদের এগিয়ে যাওয়াকে স্বাগত জনালেও এক ধরণের নেতিবাক প্রচারণা নারী শিক্ষা এখনো স্বাভাবিকভাবে চলতে পারছে না। কওমী মাদ্রাসা প্রধান শফীবাদিরা নারী শিক্ষা গ্রহণ করুক তা চায় না। ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে তারা নারীদের পিছিয়ে রাখতে চায়। এর বাইরে কন্যা শিশুরা স্কুল-কলেজে যাওয়ার পথে উত্ত্যক্তর শিকার হচ্ছে। ফলে অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন থেমে যাচ্ছে। নারী শিক্ষার্থীদের সামাজিক নিরাপত্তা নারীবান্ধব না হওয়ায় এখনো বাল্যবিয়ের প্রবাহ কমানো যাচ্ছে না। এতো এতো বাধা, শত প্রতিকূলতা সত্বেও মেয়ে শিক্ষার্থীরা সকল পাবলিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করছে। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে সমান তালে পা ফেলার চেষ্টা করছে। নারীবান্ধব পরিবেশ, তথাকথিত আলেমদের নারী শিক্ষা বিদ্বেষী প্রচারণা এবং সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা গেলে নারীরা আরো সামনে এগিয়ে যেতে পারতো। এগিয়ে যেতে বাধ্য হতো ছেলেরাও। আরো এগিয়ে যেত বাংলাদেশ। নারী শিক্ষার্থীরা এগিয়ে যাচ্ছে এটা যেমন আশার কথা, তেমনি ছেলে শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে পড়ার গতি আমাদের শঙ্কায় ফেলে দিচ্ছে। ছেলে শিক্ষার্থী রাস্তায় নারী শিক্ষার্থীর মতো উত্ত্যক্তর শিকার হচ্ছে না। ফলে তাদের স্কুল থেকে ঝরে পড়ার ভয় নেই। সামাজিক নিরাপত্তা হুমকীও নারীর মতো ছেলেদের নেই। অন্যদিকে তথাকথিত ধর্মীয় আলেমরা ছেলেদের শিক্ষার ব্যাপারে কোন নেতিবাচক প্রচারণা চালাচ্ছেন না। তারপরও আমাদের ছেলে সন্তানরা পিছিয়ে পড়ছে কেন? সেটা ক্ষতিয়ে দেখারও সময় এসেছে। আমাদের ছেলে শিক্ষার্থীদের প্রতিও বাড়তি নজর দেওয়া দরকার। এক্ষেত্রে সবার আগে বাবা-মাকে দায়িত্ব নিতে হবে। ছেলে সন্তান ঘরের এক কক্ষে কি করে মাঝে মাঝে খোঁজ নিতে হবে। ছেলেটি কেন পড়া ছেড়ে নেতিবাচক কাজের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে সেটা দেখতে হবে। ছেলে সন্তানের সঙ্গে বাবা-মায়ের বন্ধু হয়ে সমস্যা জানতে হবে। এর বাইরে মাদক ও জঙ্গী তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে কি না সেটা দেখতে হবে। জড়িত করতে হবে সাংস্কৃতিক কর্মকা-েও। কেবল মেয়েরা এগিয়ে যাবে আর ছেলে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়বে এমন প্রতিবেদন যেন আমাদের আর করতে না হয়। মেয়েরা এগিয়ে গেলে যেমন আমাদের আশা জাগে, তেমনি ছেলেরা পিছিয়ে পড়লে আমাদের মনে হতাশার ছায়া পড়ে। আমরা চাই মেয়ে এবং ছেলে সমান তালে যেন এগিয়ে যেতে পারে। মেয়ে শিক্ষার্থীরা বখাটেদের হাত থেকে রক্ষা পাবে। তাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চত থাকবে। আবার ছেলে শিক্ষার্থীরা বখাটেপনার দিকে না যায় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। ছেলে এবং মেয়ে উভয়কে সমানভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দিতে হবে। আমাদের সেই পরিবেশ গড়ে দিতে হবে। তাহলে সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণ আরো ত্বরান্বিত হবে।