জোয়ারের পানিতে ছয়লাব বরিশাল জেলা ও মহানগর

বরিশালে কীর্তনখোলার জোয়ারের পনিতে ছয়লাব হয়ে গেছে বরিশাল জেলা এবং মহানগেরর অধিকাংশ এলাকা। অনেক এলাকায় সড়কের ওপর হাঁটু পানি জমে গেছে। মূল শহরের নীচু এলাকায় দুই থেকে তিন ফুট পানির নীচে ডুবে আছে। অনেকের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। বরিশাল মহানগরের বড় বড় খাল ভরাট করে সরু ড্রেন নির্মাণ করায় একটু বৃষ্টি কিংবা জোয়ারের পানিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।
জেলার বিভিন্ন স্থানে বাধ ও রাস্তাঘাট ভেঙে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে পূর্ণিমা ও অমাবস্যার জোয়ারে উজান থেকে নেমে আসা পানি নদীবেষ্টিত হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার মেঘনা, তেতুলিয়া, কালাবদর, মাসকাটাসহ বিভিন্ন নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে নিচু এলাকার হাট-বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তা-ঘাট, বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধির ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশংকা করছে এলাকাবাসী।
নগরবাসীর অভিযোগ, একটু বৃষ্টি হলেই নগরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বড় বড় খালগুলো ভরাট করে ড্রেন নির্মাণ করায় নগরের পানি অপসারণে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। সরু নালা দিয়ে যতক্ষণে পানি অপসারণ হবে তার মধ্যেই আবার জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় জলাবদ্ধতা তীব্র হচ্ছে।
বরিশাল নগর সৌন্দর্য রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিনেও বরিশাল সিটি করপোরেশন খাল সংরক্ষণ কিংবা সংস্কারে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। উল্টো বিভিন্ন সময় খাল ভরাট করে ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে অমাবশ্যার কারণে এবং বৃষ্টিতে পুরো নগরে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
বৃহষ্পতিবার তীব্র জোয়ার এবং বৃষ্টিতে নগরের সদর রোড, ফজলুল হক অ্যাভিনিউ, মল্লিক রোড, বিএম স্কুল, বগুড়া রোড, শ্রীনাথ চ্যাটার্জী লেন, মুন্সি গ্যারেজ এলাকা, বাংলাদেশ ব্যাংক মোড়,আমানতগন্জ, পলাশপুর, কাউনিয়া, বিসিক এলাকা, জানকিসিংহ সড়ক, সাবান ফ্যাক্টরী, ভাটিখানাসহ অনেক এলাকয় পানি জমে আছে। অনেক বাড়ির নীচতলা ডুবে আছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের বাংলাদেশ বেতার ভবনের চারদিকে পানিতে ডুবে গেছে। নগরের বটতলা-নবগ্রাম রোডে অনেক বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। বগুড়া রোড, শ্রীনাথ চ্যাটার্জী লেন, বিএম স্কুল রোড, কাউনিয়া মনষাবাড়িগলিতে হাঁটু সমান পানি জমে গেছে। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভাটিখানা এলাকার একাংশ, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চন্দ্রপাড়া, কাউনিয় প্রধান সড়ক, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের গগণগলি, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাজার রোড, হাটখোলা এলাকার বিভিন্ন স্থানে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে। নগরের পলাশপুর এলাকার বেশিরভাগ বাড়ি ও দাকানপাটের মধ্যে হাটুসমান পানি জমে গেছে।
নগরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. মনিরুজ্জামান অভিযোগ করে বলেন, এক নি¤œচাপের নগরে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। পানি অপসারণের পথ বন্ধ হওয়ায় দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।
এদিকে বরিশালে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় বরিশাল নগরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পরেছেন ওইসব এলাকার মানুষ ও গবাদি পশু। ফসলি জমি, পুকুর তলিয়ে গিয়ে লাখ লাখ টাকার মাছ ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
মেঘনার তীরবর্তী উলানিয়া ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান লিটন জানান, পানিবন্ধী মানুষদের বিভিন্ন নিরাপদ স্থানে সড়িয়ে নেওয়া হয়েছে। সংসদ সদস্য পংকজ নাথ এর পক্ষ থেকে তাদের জন্য বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অন্যদিকে নদী তীরবর্তী বরিশাল নগরের কলোনী ও সড়কগুলো জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জনজীবনে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। সেই সঙ্গে পানির স্রোতের গতিবেগ প্রবল থাকায় বরিশালন সদর উপজেলার লামচরি, বাবুগঞ্জ উপজেলার আগরপুর, রহমতপুর, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা সদর, শ্রীপুর, চরগোপালপুর, উলানিয়াসহ বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নদী তীরবর্তী মানুষের মাঝে ভাঙন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বরিশাল কার্যালয় জানিয়েছে, ২০ আগস্ট দুপুর ১২ টা পর্যন্ত সর্বোশেষ হিসেব বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর পানি ডেঞ্জার লেভেলের ৩০ সেন্টিমিটার, হিজলার ধর্মগঞ্জ নদীর পানি ডেঞ্জার লেভেলের ১৮ সেন্টিমিটার, মির্জাগঞ্জের বুড়িশ্বর বা পায়রা নদীর পানি ডেঞ্জার লেভেলের ৬৪ সেন্টিমিটার, আমতলীর বুড়িশ্বর বা পায়রা নদীর পানি ডেঞ্জার লেভেলের ৩৭ সেন্টিমিটার, পাথরঘাটার বিষখালী নদীর পানি ডেঞ্জার লেভেলের ৫০ সেন্টিমিটার, বরগুনার বিষখালী নদীর পানি ডেঞ্জার লেভেলের ৫৭ সেন্টিমিটার ও ভোলা খেয়াঘাট সংলগ্ন তেতুলিয়া নদীর পানি ডেঞ্জার লেভেলের ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আনিচুজ্জামান বলেন, তীব্র জোয়ারের পানির সেঙ্গ বৃষ্টিতে নগরীর বেশ কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। মূলত নগরীর খালগুলোর গভীরতা কমে যাওয়া পানি ধারণ করতে পারছে না। এ ছাড়া নগরীর পুকুরগুলোও ভরাট হয়ে যাওয়ার ফলে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। নগরের খালগুলো সংস্কার ও খনন করার জন্য একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বরিশালে জলাবদ্ধতা থাকবে না।
বৃহষ্পতিবারও বরিশালসহ দক্ষিণের জেলাগুলোর বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট অনেকটাই কর্দমাক্ত হয়ে গেছে। বিশেষ করে নগরের ভাঙা রাস্তার খানা-খন্দগুলো পানি জমে যানবাহন ও মানুষের স্বাভাবিক চলাচল ব্যহত হচ্ছে।