টিকা আবিষ্কার হলে বাংলাদেশ যেভাবে পাবে

টিকা আবিষ্কার হলে বাংলাদেশ যেভাবে পাবে


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের বিস্তৃতি বাড়ছে। একই সঙ্গে চলছে এই রোগের টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা।

বিবিসি বাংলা জানায়, জাতিসংঘের সর্বশেষ ২০ জুলাইয়ের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টিকা বানাতে ১৭৩টি উদ্যোগ চলছে।

এর মধ্যে কয়েকটি টিকার মানবদেহে পরীক্ষা চলছে। যদিও বিশেষজ্ঞদের অধিকাংশের ধারণা, মানবদেহে ব্যবহারের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হতে এই বছর পার হয়ে যাবে।

সাধারণত একটি টিকা আবিষ্কারে কয়েক বছর লেগে যায়। কিন্তু করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে কয়েক মাসের মধ্যেই সেটা আবিষ্কার করার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা।

বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ২০২১ সালের মাঝামাঝি নাগাদ করোনাভাইরাসের টিকা বাজারে আসতে পারে।

তবে সেজন্যও বিজ্ঞানীদের ভাগ্যের ওপর নির্ভর করতে হবে। তারপরেও সেই টিকাটি কতটা কার্যক্ষম হবে, কেউ তার নিশ্চয়তা দিতে পারবে না।

কার্যকর টিকা আবিষ্কারের সম্ভাবনা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আলোচনায় আসছে, কীভাবে এই টিকা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।

টিকা আবিষ্কার হলে উন্নত দেশগুলোকে সেটা আবিষ্কারকদের কাছ থেকে কিনে নিতে হবে। যেমন- অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির টিকার জন্য এর মধ্যেই এক কোটির চাহিদা দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। চাহিদা জানিয়েছে ব্রাজিলও।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক মুজাহেরুল হক বলেন, ‘যেসব দেশের নাগরিকদের মাথাপিছু আয় চার হাজার ডলারের বেশি, তাদের টিকা কিনতে হবে। কিন্তু বাংলোদেশের নাগরিকদের মাথাপিছু আয় যেহেতু তার চেয়ে কম, ফলে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো বিনামূল্যে টিকা পাবে।’

তিনি জানান, এসব সংস্থা নিজেদের অর্থে ভ্যাকসিন সংগ্রহ করে বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করে।

মুজাহেরুল হক বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফ এবং গাভি-র (টিকা বিষয়ক আন্তর্জাতিক জোট) টিকা পাওয়ার অগ্রাধিকার পাওয়া ৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্ট্রাটেজিক অ্যাডভাইজরি গ্রুপ অব এক্সপার্টের সদস্য অধ্যাপক ফেরদৌসী কাদরী এক নিবন্ধে লিখেছেন, কভিড-১৯ এর টিকার জন্য বাংলাদেশ অনেক আগ্রহ নিয়ে অনেক চেষ্টা চালাচ্ছে। এক বা একাধিক টিকা যেন আমরা পরীক্ষা করতে পারি এবং আমরা যেন টিকা পেতে পারি, সেই চেষ্টা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আমি আশাবাদী, যেসব দেশ কোভিড-১৯ এর টিকা প্রথম দিকে পাবে, তার মধ্যে বাংলাদেশ থাকবে।’

মুজাহেরুল হক বলছেন, টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের একটি কৌশল নির্ধারণ করা জরুরি।

তিনি বলেন, ‘অনেক দেশের ভ্যাকসিন ট্রায়ালে ভারত, ফিলিপিন্স, থাইল্যান্ডের মতো অনেক দেশ যুক্ত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সেখানে যুক্ত হতে পারেনি। তবে ডব্লিউএইচও সেটা আমাদের দেবে, এটা নিশ্চিত।’

মুজাহেরুল হক বলছেন, ‘টিকা পাওয়ার আগেই বাংলাদেশকে নিজস্ব একটি কৌশল নির্ধারণ করতে হবে যে, কারা আগে টিকা পাবেন। সেই জনসংখ্যা কতো, দ্বিতীয় দফায় কারা পাবেন।’

তিনি বলেন, ‘এরপরে সংগ্রহের কৌশল ঠিক করতে হবে যে, আমাদের চাহিদা কত, কীভাবে কতটুকু পেতে পারি। সেটার ভিত্তিতে বাংলাদেশের কতো টিকা দরকার, সেটা ঠিক করতে হবে। কোন সোর্স থেকে কতটা পাবো ইত্যাদি ঠিক করতে হবে।’

বাংলাদেশে দুইটি বেসরকারি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। তবে এখনো কোনো টিকা আবিষ্কৃত না হওয়ায় তারা কোনরকম উৎপাদনের জন্য প্রস্তুতি নেয়নি।

টিকা যদি আবিষ্কার হয় আর প্রথমদিকে যদি সরবরাহ কম থাকে, তখন অবশ্যই গুরুত্বের বিচারে টিকা প্রদান করতে হবে।

এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীরা, বিশেষ করে যারা কভিড-১৯ রোগীদের সংস্পর্শে আসতে হচ্ছে।

করোনাভাইরাসে বয়স্ক মানুষজন বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে টিকাটি সেই বয়সের ওপর কার্যকর হলে বয়সী ব্যক্তিরাও টিকা পাওয়ার তালিকায় এগিয়ে থাকবেন।