ডোমিঙ্গোই টাইগারদের হেড কোচ

যত সময় গড়িয়েছে, শর্টলিস্ট ততই ‘শর্ট’ হয়েছে। শেষ পর্যন্ত প্রার্থী ছিলেন আসলে দুজন-নিউজিল্যান্ডের মাইক হেসন আর দক্ষিণ আফ্রিকার রাসেল ডোমিঙ্গো। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে রাসেল ডোমিঙ্গোকেই হেড কোচ হিসেবে বেছে নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
গতকাল (শনিবার) দুপুরে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন সেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণাই দিলেন। প্রাথমিকভাবে তার সঙ্গে দুই বছরের চুক্তি হয়েছে। কোচের শর্টলিস্টে থাকাদের মধ্যে কেবল ডোমিঙ্গোই সশরীরে ঢাকায় এসে ইন্টারভিউ দিয়েছেন।
বাকিদের মধ্যে মাইক হেসন, মিকি আর্থার, গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার, মাহেলা জয়াবর্ধনের সঙ্গে টেলি কনফারেন্সে কথা হয়েছে। কেউই ঢাকায় আসেননি। শেষ পর্যন্ত সামনে থেকে ইন্টারভিউ দেয়া ডোমিঙ্গোকেই পছন্দ করলো বিসিবি।
গত দশ বছরে বাংলাদেশ দলের হেড কোচদের গড়পড়তা বেতন ছিল ১৭-১৮ থেকে ২৮-৩০ হাজার ডলার। চন্ডিকা হাথুরুসিংহে থেকে সর্বশেষ স্টিভ রোডস ২৫-২৮ হাজার ডলারের মধ্যে বেতন পেতেন।
তবে ভারতের কোচ হতে ইন্টারভিউ দিয়ে আসা মাইক হেসনের চাহিদা ৫০ হাজার ডলারের উপর। যেটা বহন করা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) জন্য বলতে গেলে অসম্ভব। অপরদিকে রাসেল ডোমিঙ্গোকে ২৫ হাজার ডলারের আশপাশে বেতনে চুক্তিবদ্ধ করতে পেরেছে বিসিবি।
২০১১ সালের জুনে দক্ষিণ আফ্রিকার হেড কোচ হিসেবে নিয়োগ পান গ্যারি কারস্টেন। সে সময় সহকারী কোচ হন ডোমিঙ্গো। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে কারস্টেনের কাছ থেকে কেবল টি-টোয়েন্টি কোচের দায়িত্ব বুঝে নেন তিনি।
২০১৩ সালের মে মাসে কারস্টেন ঘোষণা দেন জুলাইয়ের শেষের দিকে প্রোটিয়া হেড কোচের দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন। তারপরই কারস্টেনের স্থলাভিষিক্ত হন ডোমিঙ্গো।
হেড কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে তুলেন ডোমিঙ্গো। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে তার সঙ্গে চুক্তি আরও দুই বছর বাড়ায় প্রোটিয়ারা। ডোমিঙ্গোর কোচিংয়েই ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠে দক্ষিণ আফ্রিকা।
প্রায় চার বছর দায়িত্ব পালনের পর ২০১৭ সালের আগস্টে এসে ডোমিঙ্গোকে সরিয়ে নতুন হেড কোচ হিসেবে ওটিস গিবসনকে নিয়োগ দেয় প্রোটিয়ারা। তবে ডোমিঙ্গোকে ঠিকই নিজেদের কাছে রেখে দেয় তারা, দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা 'এ' দলের দায়িত্ব। সেখান থেকেই এবার বাংলাদেশ শিবিরে যোগ দিলেন অভিজ্ঞ এই কোচ।
যে কারণে হেড কোচ ডোমিঙ্গো
বিসিবি মুখপাত্র জালাল ইউনুস বলে , তারা মানে বোর্ড যে তিজনের শর্ট লিস্ট করেছে, তার বাইরে কারো কোচ হয়ে আসার সম্ভাবনা শূন্যের কোঠায়। কাজেই ধরেই নেয়া যায় ঐ সংক্ষিপ্ত তালিকার তিনজনের যেকোনো একজন আগামী দিনে টাইগারদের হেড কোচের দায়িত্ব পালন করবেন।
বোর্ড কর্তাদের সবাই অতি সতর্ক। কেউ মুখ ফসকে একটি নামও বলছেন না। তবে একটু বেশি রাতে একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, এ মুহুর্তে কোচের দৌড়ে এগিয়ে বুধবার ইন্টারভিউ দেয়া ডোমিঙ্গোই। সূত্র জানিয়েছে, বাকি দুজনার কারো লক্ষ্য-পরিকল্পনা আর উপস্থাপনা খুব বেশি সাজানো গোছানো, দুরদর্শী এবং আধুনিক হলে ভিন্ন কথা। তা না হলে বিসিবি হয়ত ডোমিঙ্গোকেই বেছে নিবে।
বুধবার ইন্টারভিউতে এ দক্ষিণ আফ্রিকানের কথাবার্তা, লক্ষ্য-পরিকল্পনা, ট্রেনিং প্রোগাম ও সার্বিক কার্যক্রমের উপস্থাপনায় বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান পাপনসহ প্রায় সব পরিচালকই সন্তুষ্ট।
ডোমিঙ্গো ইন্টারভিউ দিয়ে বেড়িয়ে যাওয়ার পর পরিচালক, মিডিয়া কমিটি প্রধান এবং কোচ নিয়োগ প্রক্রিয়ার অন্যতম হর্তাকর্তা জালাল ইউনুস অনেক সতর্ক-সাবধানে কথা বলার পরও এক পর্যায়ে কথা প্রসঙ্গে বলে ফেলছেন, ডোমিঙ্গোর ইন্টারভিউ সন্তোষজনক। তাই মুখে এমন কথা, ডোমিঙ্গো সন্তোষজনক একটা প্রেজেন্টেশন দিয়েছেন। উনি ভাল ইন্টারভিউ দিয়েছেন, খুবই পেশাদার কোচ। প্রায় ৫ বছর দক্ষিণ আফ্রিকার ছেলে দলের কোচ ছিলেন। এখন ‘এ’ দলে আছেন। সব দিক দিয়ে অবশ্যই উনি যোগ্য।
প্রসঙ্গত, হাথুরুসিংহেসহ অনেক কোচই জাতীয় দলের আন্তর্জাতিক সফর সূচি দেখে তার আগে প্রস্ততির সময় শুধু কাজ করার কথা বলেই চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন এবং সেই মত জাতীয় দলের হোম ও বিদেশে সিরিজ, টুর্নামেন্ট তথা আন্তর্জাতিক সফরসূচির আগের সময়টায় শুধু বাংলাদেশে এসে কোচিং করাতেন।
কিন্তু ডোমিঙ্গো তাদের চেয়ে অনেক বেশি সময় কাজ করতে এবং বাংলাদেশে থাকতে চেয়েছেন। তার কোচিং প্রোগ্রামে বছরের একটা বড় সময় কাজ করার প্রস্তাব আছে। তিনি জানিয়েছেন, জাতীয় দলের কোন আন্তর্জাতিক ব্যস্ততা না থাকলেও আমি বাংলাদেশে থাকবো বড় সময়।
এটাই বিসিবি কর্তাদের ভাল লেগেছে। তারাও আসলে এমন একজনকে খুঁজছিলেন। যিনি মেধাবী, দক্ষ, অভিজ্ঞ আর সর্বোপরি সময় বেশি দিতে পারবেন। জাতীয় দলের খেলা তথা কার্যক্রম থাকুক আর নাই থাকুক, বছরের বেশিরভাগ সময় তাকে পাওয়া যাবে। যিনি খেলোয়াড়দের ভুল ত্রুটি নিয়ে অন্যসময় কাজ করবেন।
আর তাই ডোমিঙ্গোর প্রতি আগ্রহটা প্রবল হয়েছে বোর্ড কর্তাদের।