তথ্য গোপন করোনা ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে আমাদের
করোনা সারা বিশ্বেই মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে এটা সত্য। আবার সচেতন ও সতর্ক থাকতে পারলে অনেকক্ষেত্রেই করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। সেই জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া স্বাস্থবিধি মেনে চলা দরকার। কিন্তু সাধারণ মানুষ নিজেরাই নিজেদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। কোথাও কোথাও করোনা ছড়ানো নিয়ে নানা গুজব মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। ফলে অনেক মানুষ ভয়ে তটস্থ হয়ে আছে। কেউ কেউ এমন ভীতি ছড়াচ্ছে করোনায় আক্রান্ত রোগীকে বাড়িতে আশ্রয় দেওয়া যাবে না। বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে হবে। এইসব গুজবের কারণে করোনা নয়, কেবল সর্দি-কাশি হয়েছে এমন অনেক মানুষকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া, বাড়িতে গিয়ে হামলার ঘটনাও ঘটেছে। ওইসব ঘটনার প্রেক্ষিতে মানুষ রোগ লুকানো শুরু করে দেয়। ডাক্তারের কাছে এসে তথ্য গোপন করে ডাক্তারসহ সকলকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে।
ডা. সুদীপ জানিয়েছেন একজন রোগী তথ্য গোপন করে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হন। পরে তার নমুনা পরীক্ষা করে জানা গেল সে করোনা পজেটিভ। ওই রোগীর মাধ্যমে মেডিসিন বিভাগের এক চিকিৎসক আক্রান্ত হয়। এক পর্যায় কিন্তু পুরো মেডিসিন-৩ ইউনিট লকডাউন করা হয়। ওই বিভাগের ডাক্তার, নার্সসহ সবাইকে করেন্টাইনে পাঠাতে হয়েছে। তথ্য গোপনের কারণে শিক্ষানবীশ চিকিৎসক কয়েকজন আক্রান্ত হয়েছে। এইভাবেই সোস্যাল ট্রান্সমিশন হয়ে গেছে। এখান থেকে উত্তোরণের পথ হচ্ছে কোনভাবেই রোগী যেন তথ্য গোন না করে।
তিনি বলেন, করোনা আক্রান্ত হলে তাকে তাড়িয়ে দেওয়া কিংবা বাড়িতে হামলা করার মত জঘন্য ঘটনা যাতে না ঘটে সেটা দেখতে হবে। একই সঙ্গে রোগীদের হাসপাতালে পাঠানোর উদ্যোগ নিতে হবে। করোনা আক্রান্ত হলেই রোগী মারা যাবে এমন নয়। অনেক আক্রান্ত রোগী সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। করোনা মোকাবেলায় কেবল ডাক্তার নয়, সবাই দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন ঘটাতে হবে। করোনায় ভীত হয়ে কোন মানুষ যেন চিকিৎসা বঞ্চিত না হয় সেটা দেখা দরকার। একই সঙ্গে নর্মাল, সর্দি, কাশি হলে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে।
ডা. সুদীপ বলেন, এই মুহূর্তে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অর্ধেক জনবল শূন্য রয়েছে। অর্ধেক জনবল দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিলেও হাসপাতালে এসে কেউ চিকিৎসা পায়নি এমন ঘটনা ঘটেনি। তাই সবার প্রতি আহ্বান কোনভাবেই রোগী যেন তথ্য গোপন না করে। তথ্য গোপন করলে কেবল ডাক্তার আক্রান্ত হবেন তা কিন্তু নয়, আস্তে আস্তে সবাই আক্রান্ত হয়ে পড়বে। তাই করোনা ঝুঁকি কমাতে অবশ্যই রোগীরা যেন তাদের সঠিক তথ্য ডাক্তারদের জানায়।