তীব্র গরমে বাড়ছে ডায়রিয়া ও শিশু রোগ

তীব্র গরমে বাড়ছে ডায়রিয়া ও শিশু রোগ
বরিশালে তীব্র গরমে বাড়ছে ডায়রিয়া। শিশুরা ভুগছে নানা সমস্যায়। বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকায় বাড়ছে গরম। এপ্রিল মাস জুড়ে বরিশালে গড় তাপমাত্রা ৩৪ থেকে ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। প্রচন্ড গরমে শিশু এবং বয়ষ্কদের দেখা দিচ্ছে নানা উপসর্গ। শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং জেনারেল হাসপতালে রেগীর চাপ বাড়ছে। চিকিৎসকদের পরামর্শ বেশি পানি, স্যালাইন এবং রৌদ্র এড়িয়ে চলা। সরেজমিনে দেখা গেছে, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহিঃবিভাগ এবং আন্তঃবিভাগে শিশু রোগী এবং স্বজনদের ভীড়। বহিঃবিভাগে দীর্ঘ সারি। এদের বেশিরভাগ শিশুর জ্বর, চর্ম রোড, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। আন্ত বিভাগে এক সয্যার বিছানায় দুই থেকে তিনজন শিশু রয়েছে। ডায়রিয়া ছাড়াও নিউমোনিয়া, এলার্জি, এ্যাজামার রোগী ভর্তি হচ্ছে। শিশু পুত্র মাহমুদুর রশীদকে নিয়ে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছেন ঝালকাঠি জেলার আতাউর রহমান তিনি জিানান, গত ২৩ এপ্রিল জ¦র হয়। ঝালকাঠি থেকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসক। কিন্তু জ¦র কমছে না। থেকে থেকে জ¦র উঠছে। চিকিৎসকরা বলেছেন টাইফয়েড হয়েছে। কিন্তু এখানে চিকিৎসা সেরকম পাওয়া যাচ্ছে না। হাসপাতালে ভর্তি হলেও বাইরে শিশু বিশেষজ্ঞ দেখাতে হয়েছে। আতাউর রহমানের মতো অনেক মা-বাবা শিশু সন্তানকে ভর্তি করেছেন হাসপাতালের শিশু বিভাগে। বরিশাল আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক মো. শওকত জাহান বলেন, এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে তাপমাত্রা বাড়ছে। বরিশালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে ৩৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে জলীয়বাষ্প ও আদ্রতার কারণে তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। মৌসুমী বায়ু এবং বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত গরম কমবে না। এদিকে বরিশালে বয়স্কদের একমাত্র ডায়রিয়া চিকিৎসা দেওয়া জেনারেল হাসপাতালে রোগীর ভীড় ছিল উপিচেপড়া। বিছানা না পেয়ে অনেক রোগীকে মেঝেতে, বারান্দায় এমনকি গাছ তলায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গত দুই দিন ধরে হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছে ভাটিখানা এলাকার লামিয়া আক্তার। একইভাবে পলাশপুর এলাকার দুলাল খলিফাসহ অনেকে মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। দুলাল খলিফা জানান, বাসায় ১০ বারের মতো পাতলা পায়খানা হয়েছে। এরপরই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিনি। হাসপাতালের সেবিকা শবনম বলেন, এপ্রিল মাসে ডায়রিয়া রোগীর চাপ অনেক বেড়েছে। হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বেড মাত্র ১৪টি। গতকাল রোগী ভর্তি ছিল ৪৯ জন। তাই মেঝেরেত ও বারান্দায়ও রোগীদের রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। হাসাপাতালের ইন-চার্জ নাজমা পারভীন বলেন, এপ্রিল মাস শুরু হওয়ার পরই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর চাপ বেশি বেড়েছে। গত ২৪ এপ্রিল ৫২ ভর্তি ছিল এবং ৪৭জন হাসপতাল ছেড়েছে। গত ২৬ এপ্রিল ৪৯ রোগী ভর্তি ছিলা এবং ৪২জনকে ছ্ড়াপত্র দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য দিনে গড়ে প্রায় ৪০-৪৫ জন রোগী ভর্তি ছিল। প্রতিদিন চিকিৎসা শেষে গড়ে ৪২-৪৭ জন রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপতাপলের শিশু বিভাগে বাকেরগঞ্জ থেকে শিশু নিয়ে এসেছেন আমিনুল ইসলাম। তিনি জানান, জ্বরের সঙ্গে ডায়রিয়া হয়েছে। হাসপাতালে বিছানা ফাঁকা নেই। এক বিছানায় দুইজন শিশু রাখা হয়েছে। স্বরূপকাঠি থেকে শিশু নিয়ে এসেছেন মাহিনুর বেগম। তিনি জানান, গরমের কারণে না কি জ্বর হয়েছে। চার দিন আগে হাসপাতারে ভর্তি করা হয়েছে। এখন একটু সুস্থ্য। এরকম অনেক শিশুর অভিবাবকরা শিশুদের নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা: এম.আর. তালুকদার মুজিব বলেন, ‘গরমে শিশু নয়, সবারই উচিত বেশি বেশি পানি পান করা। তার সঙ্গে স্যালাইন খাওয়ানো। বাচ্চাদের রোদে বাহির হতে না দেওয়া। প্রচন্ড গরমে হাসপালে শিশু রোগির সংখ্যা বেড়েছে। এদের মধ্যে অধিকাংশই ভাইরাস আক্রান্ত। তীব্র গরম-ঠান্ডায় (হিট র‌্যাশ) লাল লাল দাগ, জ্বর, ডায়রিয় আক্রান্ত শিশুই বেশি।’ হাসপাতালের বহিঃবিভাগে চিকিৎসা দিচ্ছেন শিশু বিশেষজ্ঞ ডা: সালেহ্ আল-দ্বীন-বীন-নাসির। তিনি জানান, গরমে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০০ থেকে ৩৫০ শিশু নানা সমস্যা নিয়ে আসছে। গতকাল সাড়ে ৩০০ শিশু রোগী দেখেছি। এদের মধ্যে বেশিরভাগ জ¦র, ডায়রিয়া, মামস ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। তীব্র গরমের কারণে ঠা-া লেগে জ¦র হচ্ছে। পরে খিচুনী দেখা দেয়। এর সঙ্গে বাড়ছে ডায়রিয়া। অনেক শিশুকে পরামর্শ ও ব্যবস্থাপত্র দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকিদের আন্ত বিভাগে ভর্তির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।