ধর্মীয় ও নানা গুজবের কারণে স্থানীয় নির্বাচনে নারীর অংশগ্রহণ কম

ধর্মীয় ও নানা গুজবের কারণে স্থানীয় নির্বাচনে নারীর অংশগ্রহণ কম


আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী নারী প্রার্থীরা নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। নারীরা যাতে ক্ষমতায়নের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে না পারে সেজন্য নতুন কৌশল শুরু হয়েছে। ধর্মীয় ও নানামুখী গুজবের কারণে নারীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের হার উল্লেখযাগ্য হারে কমে যাচ্ছে। পৌরসভা এবং ইউপিতে যাতে নারীরা সাধারণ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা থেকে ছিটকে পরে সেজন্যই এমন কৌশল বলে অভিযোগ করেছেন সাধারণ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতাকরী নারী প্রার্থীরা।


মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বরিশাল নগরের রূপান্তর সভাকক্ষে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ২০২১ এবং আমরা অপরাজিতা শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন, ঝালকাঠি সদর উপজেলা নারী ভাইস চেয়ারম্যান ইসরাত জাহান সোনালী।

সংবাদ সম্মেলনে উল্লেক করা হয়েছে, গত কয়কটি উপজেলা, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে একটি নেতিবাচক প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অসহযোগিতা, পুরুষদের বিদ্বেষমূলক আচরণ, ধর্মীয় গোড়ামীর কারণে নারীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের হার উল্লেখযাগ্য হারে কমে যাচ্ছে। ২০১৬ সালে বরিশাল, ঝালকাঠি এবং পিরোজপুর জেলার ১১ উপজেলায় ১০২ ইইনয়নে সরাসরি চেয়াম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন ২জন। সাধারণ আসনে সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ১জন। পরবর্তীতে উপ নির্বাচনে আরও ২জন। এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ১০জন এবং সাধারণ আসনে ৩৭ নারী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। তবে নারী চেয়ারম্যান এবং সাধারণ আসনের নারী সদস্য প্রার্থীর নানামূখি নেতিবাচক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছেন। তারা যাতে ভোটে বিজয়ী হতে না পারে সেজন্য পুরুষ সদস্যররা একজোট হয়ে গুজব ছড়াচ্ছেন।

সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতাকারী নারী প্রার্থী লতিফা খানম অভিযোগ করেন, ‘আমরা সাধারণ আাসনে নির্বাচন করি, পুরুষ প্রার্থীরা এটা সহ্য করতে পারছে না। তারা একজোট হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছে। ধর্মীয় ও নানা গুজব ছড়াচ্ছেন। তারা আমাদের ভোট না দেওয়ার প্রচারণায় নেমেছেন। তারা ভোটারদের প্রভাবিত করার জন্য বলে বেড়াচ্ছেন, ‘নারী সদস্যরা জানাজায় অংশ নিতে পারবে না। কারো বিরুদ্ধে মামলা হলে সেব্যাপারে সহযোগিতা দিতে পারবে না। তাই নারী সদস্যদের ভোট না দিতে অনুরোধ করেন। এ ছাড়াও পুরুষ প্রার্থীরা আমাদের বলেন, ‘তোমাদের জন্য তো সংরক্ষিত নারী আসন রয়েছে, সেখানে নির্বাচন করো।’ পুরুষ প্রার্থীদের এমন নেতিবাচক প্রচারণায় নারী প্রার্থীরা কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে। যা নারীর ক্ষমতায়নে চরম হুমকী স্বরূপ।

সংবাদ সম্মেলনে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নসহ সকল ক্ষেত্রে নারীদের এগিয়ে নিয়ে যেতে কয়েকটি দাবি তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- স্থানীয় পর্যায়ে কেবল নারীর প্রতীকী অংশগ্রহণ নয়, নারীর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক দলের সকল পর্যায়ের কমিটিতে নারীদের কার্যকরী সম্পৃক্ত করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো নারী সদস্যদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগ গ্রহণ করবে। দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে নারীদের মনোনয়ন বৃদ্ধি করতে হবে। 
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সুইস এজেন্সি ফর ডেমোক্রেসি অ্যা- কোঅপারেশন (এসডিসি)র সহায়তায় এবং হেলভেটাস সুইস ইন্টারকোঅপারেশনের কারিগারি সহযোগিতায় প্রিপ ট্রাস্ট, খান ফাউ-েশন, রূপান্তর ও ডেমোক্রেসিওয়াচ বাংলাদেশের ৬টি বিভাগে ‘অপরাজিতা : নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। দেশের ১৬টি জেলার ৬২টি উপজেলার ৫৪১টি ইউনিয়নে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে চলেছে তারা। বরিশাল বিভাগের বরিশাল, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলার ১১টি উপজেলার ১০২টি ইউনিয়নে  নারীরর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে উদ্যোগ চলছে। বিশেষত স্থানীয় সরকার কাঠামোতে রাজনৈতিক দলে নারীর অংশগ্রহণের মাত্রা বিস্তৃত করতে সকল নির্বাচনের নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো।