নদী ভাঙনে বিচ্ছিন্ন আরজ আলী মাতুব্বরের লাইব্রেরি

চারণ দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বরের বসতভিটায় নির্মিত আরজ মঞ্জিল পাবলিক লাইব্রেরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নদী ভাঙনে পাকা সড়ক, বাড়িঘরসহ অনেক এলাকা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় দর্শনার্থী এবং পাঠকরা সেখানে যেতে পারছে না। ভাঙন প্রতিরোধ এবং স্থায়ী সমাধানের দাবি করেছে আরজ আলী মাতুব্বরের উত্তরসুরী ও এলাকাবাসী।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আরজ আলী মাতুব্বরের বাড়ির উত্তর দিকে পাকা সড়কসহ প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকা নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। ভাঙন এবং পানির স্রোতে সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানের বিটুমিন উঠে গিয়ে মাটি বের হয়ে গেছে। কয়েকটি স্থানে স্থানীয় ইউপি সদস্য সংষ্কারের চেষ্টা চালাচ্ছেন। সড়ক ভাঙনের কারণে বাঁশের সাকো এবং মাটির রাস্তা দিয়ে এক কিলোমটির পায়ে হেঁটে পৌঁছাতে হয় লাইব্রেরিতে।
এলাকাবসী জানিয়েছে, গত কয়েক মাসে নদীর তীব্র স্রোতে পাকা সড়কসহ আশপাশে বসতবাড়ি নদী গর্ভে বিলিণ হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড আরজ মঞ্জিল ও পাঠাগার রক্ষায় দক্ষিণ দিকে জিও ব্যাগ ফেলছে। কিন্তু উত্তর দিকের বিশাল অংশ অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। কীতনখোলা নদীর চরবাড়িয়া অংশে তীব্র স্রোতের তোড়ে পাকা সড়কসহ অনেক এলাকা নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। এই এলাকার ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ নয়, ব্লক দিয়ে প্রতিরোধ করতে হবে। তা না হলে পুরো এলাকই নদী গ্রস করবে।
লামচরি গ্রামের বাসিন্দা মো. ইউসুফ আলী ফরাজী বলেন, লামচরি গ্রামের দক্ষিণ দিকে ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড বালুর বস্তা ফেলছে। কিন্তু উত্তর দিকে সাময়িক ব্যবস্থা নিলেও তা কোন কাজে আসেনি। এবার স্রোতে অনেকটা এলাকা ভেঙে গেছে। আরজ আলী মাতুব্বরের এই ঐতিহ্য রক্ষা করতে হলে সিমেন্টের ব্লক দিয়ে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হাসান হাওলাদার বলেন, এবারের নদীর ভাঙনে এলাকার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভাঙনে পাকা সড়কসহ অনেক এলাকা বিলিন হয়ে গেছে। এখন চলাচলের জন্য কোনমতে বালু ফেলে সংস্কার করা হচ্ছে। তবে নদী ভাঙনে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আরজ আলী মাতুব্বরের লাইব্রেরিসহ পুরো এলাকা বিলিন হয়ে যাবে।
আরজ আলী মাতুব্বরের নাতি ও আরজ মঞ্জিল লাইব্রেরির দায়িত্বে থাকা মো. শামীম মাতুব্বর বলেন, এমন একজন গুণি মানুষের জন্মস্থান লামচরি। লাইব্রেরি সংস্কার ও সংরক্ষণে তেমন একটা উদ্যোগ নেই। এখন ভাঙন তীব্র হওয়ায় নতুন শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি ভাঙন প্রতিরোধসহ লাইব্রেরি সংরক্ষণে জরুরী উদ্যোগ নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।
এব্যাপারে জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, আরজ আলী মাতুব্বরের মতো একজন গুণি মানুষের জন্ম হয়েছে লামচরিতে। আরজ মঞ্জিল লাইব্রেরি এলাক পরিদর্শন করে সেখানের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হবে। একই সঙ্গে দর্শনার্থীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা সুগম করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের লামচরি গ্রামে দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বর নিজের অর্থ দিয়ে গড়ে তোলেন আরজ মঞ্জিল লাইব্রেরি। বর্তমানে লাইব্রেরিটি ট্রাস্টি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। তবে লাইব্রেরির ছোট্ট ভবনে জরাজীর্ণ অবস্থায় পরিচালিত হচ্ছে লাইব্রেরিটি।