সরকাকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ ছাত্র সংসদের নেতৃত্বে আসতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন কতিপয় বহিরাগত অছাত্ররা। তারা ছাত্রত্বের লেবাস লাগাতে কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য নানা সুযোগ খুঁজছেন। কেউ বৈধ উপায়ে আবার কেউ ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করছেন। বিষয়টি চাউর হওয়ায় গোটা ক্যাম্পাস জুড়ে তুমুল আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রেরিত তালিকায় নাম না থাকা সত্বেও কলেজ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ইসলামী ইতিহাস বিভাগে ভর্তির চেষ্টা করেন জেলা ছাত্রলীগের পদপদবীধারী এক নেতা।
এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় থেকে প্রেরিত তালিকার বাহিরে শিক্ষার্থীদের ভর্তির কোন সুযোগ নেই। আবার অবৈধভাবে যদি কেউ ভর্তি হয়েও থাকে তবে এমনিতেই তার ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে যাবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর পরে ঐতিহ্যবাহী বরিশাল ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। তাই দীর্ঘ অপেক্ষায় থেকে ছাত্রত্ব শেষ হয়ে যাওয়া কয়েকজন ছাত্রনেতা নেতৃত্বে আসতে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানান, ক্ষমতাসিন দলের সহযোগী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের বিএম কলেজ শাখার কয়েকজন সাবেক নেতা যারা বর্তমানে জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন তারাই এই তৎপরতা চালাচ্ছেন। এরইমধ্যে কয়েকজনে মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছেন। আবার কয়েকজন অবৈধভাবে ভর্তির সুযোগ খুঁজছেন।
যারমধ্যে একজন ইসলামী ইতিহাস বিভাগে মাস্টার্সে ভর্তি হওয়া কলেজের অস্থায়ী কর্মপরিষদের সাবেক সাহিত্য সম্পাদক নুর আলম আহাদ সাঈদী। ইতিপূর্বে তার ছাত্রত্ব না থাকলে ভিপি হওয়ার আশায় পুনরায় মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছেন। তিনি বলেন, পূর্বে আমার ছাত্রত্ব ছিলো। অনার্স শেষ করে এখন মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছি। জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় ভর্তির জন্য যে তালিকা প্রেরণ করেছে তারমধ্যেও আমার নাম রয়েছে। কিন্তু জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আতিকুল্লাহ মুনিমের নাম তালিকায় না থাকা সত্বেও সে অবৈধভাবে ভর্তি হওয়ার সুযোগ খুঁজছেন।
নুর আলম আহাদ সাইদী আরও বলেন, বিএম কলেজে মাস্টার্সে ইসলামী ইতিহাস বিভাগে ভর্তির জন্য জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় থেকে প্রথম দফায় ১৮০ জনের একটি তালিকা আসে। সেখানে আমার কিংবা জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মুনিমের নাম ছিলো না। দ্বিতীয় বার নয় জনের যে তালিকা এসেছে তারমধ্যে আমার নাম থাকলেও মুনিমের নাম নেই।
সাঈদী অভিযোগ করেন, বুধবার সকাল থেকে আমি ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করলেও কলেজ অধ্যক্ষ থেকে শুরু করে ইসলামী ইতিহাস বিভাগের শিক্ষকরা আমার ভর্তি নিয়ে তালবাহানা করে। পরে শিক্ষকরা অধ্যক্ষর রুমে জরুরি সভা করে দুপুরে আমার ভর্তি নেয়। তিনি আরও অভিযোগ করেন, ভর্তির জন্য আমি ডিপার্টমেন্টের প্রধানের রুমে গেলে সেখানে দেখতে পাই নয় জনের মধ্যে সাতজন ভর্তি হয়েছে। সে হিসেবে আমার সিরিয়াল বা রোল আসার কথা ১৮৭। কিন্তু ১৮৭ নম্বর ঘরটি ফাঁকা রেখে আমাকে ১৮৮ নম্বরে রাখা হয়েছে। জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আতিকুল্লাহ মুনিমকে ভর্তির সুযোগ দিতে কয়েকজন শিক্ষক মিলে ১৮৭ নম্বর ঘরটি ফাঁকা রেখেছে। সেখানে দাঁড়িয়ে আমি এর প্রতিবাদও করেছি। তাছাড়া বিভাগীয় প্রধানের টেবিলে আতিকুল্লাহ মুনিমের ছবি এবং কাগজপত্রও দেখতে পেয়েছেন বলেও সাঈদী অভিযোগ করেন।
অভিযোগের ব্যাপারে বিএম কলেজের ইসলামী ইতিহাস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শাহ আলম বলেন, দ্বিতীয় দফায় যে তালিকা এসেছে সেটাতে নয়জন নয়, ১৩ জনের নাম এসেছে। ছাত্রলীগ নেতা মুনিমকে ভর্তির জন্য ১৮৭ নম্বর খালি রাখার যে অভিযোগ উঠেছে সেটা সঠিক নয়। কারণ ওই ঘরটি ফাঁকা রাখা হয়েছে একটি মেয়ের জন্য। কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের ওই ঘরটি ফাঁকা রাখতে বলেছেন তাই ওটা খালি রাখা হয়েছে। তবে ওই ছাত্রীর নাম পরিচয় জানাতে পারেননি অধ্যাপক শাহ আলম।
বিএম কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শফিকুর রহমান সিকদার জানান, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় থেকে যেভাবে তালিকা আসবে আমাদের সেভাবেই ভর্তি নিতে হবে। এখানে তালিকার বাইরে গিয়ে স্থানীয়ভাবে কাউকে ভর্তি করার সুযোগ নেই। কেউ অবৈধভাবে ভর্তি হলেও পরবর্তীতে তা এমনিতেই বাতিল হয়ে যাবে। কেননা ভর্তি সংক্রান্ত তালিকা জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের অনলাইনে রেকর্ড রয়েছে।
অধ্যক্ষ বলেন, বিএম কলেজে ছাত্রসংসদ নেই। ছাত্রদের মধ্যে এখন যে ঘটনা ঘটছে তা ছাত্রসংসদ না থাকার কারণেই। সংসদ নির্বাচন হলে এটা আর থাকবে না। শিক্ষার পরিবেশও ফিরে আসবে। তাই আমরা ছাত্রসংসদ নির্বাচনের জন্য সার্বিকভাবে প্রস্তুত রয়েছি। আমি জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্যকে এ বিষয়ে বলেছি কিন্তু তিনি আমাদের এখন পর্যন্ত কোন দিক নির্দেশনা দেননি।