নৌপথের নিরাপত্তা দিতে হবে

নৌপথের নিরাপত্তা দিতে হবে

বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের ভরসার যানবাহন হচ্ছে লঞ্চ-স্টীমার। দুই ঈদ ছাড়াও সারা বছর দক্ষিণাঞ্চলের বেশিরভাগ যাত্রী নদীপথে আসা-যাওয়া করে। রাতে ঘুমিয়ে ঢাকা যাওয়া-আসা এবং খরচ কম হওয়ায় নদীপথের কদর বাড়ছেই। বরিশাল-ঢাকা নদীপথ তাই আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কিন্তু বরিশাল-ঢাকা নৌপথে নানামুখী সমস্যা বিরাজ করছে। একদিকে যেমন বয়া-বীকন বাতি সংকট রয়েছে, তেমনি নৌপথের নাব্যতা সংকট এবং মূল চ্যানেলে বালু ও সিমেন্টের কাচামালবাহী জাহাজ ডুবির ঘটনায় গুরুতপূর্ণ এই নৌপথ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দেশের বৃহত্তম এই নদী পথের নিরাপত্তা না থাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। বরিশাল-ঢাকা নদীপথের নিরাপত্তায় কার্যকর উদ্যোগ নিতেই হবে।

গত রোজার ঈদের আগে বরিশাল-ঢাকা নদী পথের মেহেন্দিগঞ্জের মেঘনা নদীর মিয়ারচর এলকায় মূল চ্যানেলে সিমেন্টোর কাঁচামালবাহী (ক্লিংকার) জাহাজ ডুবে নৌপথ ঝুঁকির মধ্যে ফেলে। ওই সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা লঞ্চগুলো ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করেছে। বিআইডব্লিউটিএর নৌনিরাপত্তা বিভাগ অনেক চেষ্টা করে চ্যানেলের একটি অংশ ঝুঁকিমুক্ত করতে সক্ষম হয়।

এদিকে রোজার ঈদের ঝুঁকি কাটাতে না কাটাতে গত ৬ আগস্ট আবারো মেহেন্দিগঞ্জের গজারিয়া ও মেঘনা নদীতে মালবাহী দুইটি নৌযান ডুবে গেছে। পটাশিয়াম সার বোঝাই জাহাজটি চট্টগ্রাম থেকে খুলনার যশোরে যাবার পথে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার দড়িরচর-খাজুরিয়া ইউনিয়ন সংলগ্ন গজারিয়ায় ডুবে যায়। অন্যদিকে একই দিন রাতে মেহেন্দিগঞ্জের গোবিন্দপুর ইউনিয়ন সংলগ্ন মেঘনা নদীতে ইউরিয়া সার বোঝাই কার্গো ডুবে যায়। ফলে বরিশাল-ঢাকা নৌপথের মেঘনা নদীর কালিগঞ্জ এবং গজারিয়া চ্যানেলে নৌযান চলাচলে ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। এবার কোরবানীর ঈদে ঘর ফেরা মানুষদের ঝুঁকি নিয়ই বাড়ি ফিরতে হবে। কর্মস্থলে ফিরতেও ঝুঁকি থাকার আশঙ্কা রয়েছে।

বরিশাল-ঢাকা নৌপথ কোবল কার্গো ও মাল বোঝাই জাহাজ ডুবির কারণেই ঝুঁকিতে পড়ছে তা নয়। বরিশাল-ঢাকা নদীপথ ঝুঁকির অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এর মধ্যে নদী খনন কাজ সঠিকভাবে না হওয়ায়ও গুরুত্বপূর্ণ এই পথটি ঝুঁকিপূর্ণই থেকে যাচ্ছে। নদী পথের মূল চ্যানেলগুলো ঝুঁকিমুক্ত রাখতে হলে সঠিকভাবে খনন এবং মালবাহি জাহাজ চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। একই সঙ্গে নদী পথের গুরুত্বপূর্ণ অংশে বয়া, বাতি এবং মার্কা স্থাপন করতে হবে।
এর সঙ্গে এই নৌপথে রাতে লঞ্চ চলাচলে অসম প্রতিযোগিতার কারণে একাধিকবার যাত্রীরা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। প্রাণহানীও ঘটেছে। নৌযানের ক্ষতি হয়েছে। তারপরও ওই প্রতিযোগিতা বন্ধ হয়নি। প্রতিযোগিতার কারণে সংঘর্ষ বন্ধ হয়নি। নৌনিরাপত্তায় নৌযান মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতা এবং গাফিলতির কারণেও নদীপথে নৌদুর্ঘটনা ঘটে। আমরা চাই, বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ নদীপথ যেন নিরাপদ থাকে। সেব্যাপারে সঠিক পদক্ষেপ ও উদ্যোগ নেওয়া হোক।
আর কয়েক দিন পর ঈদ। ঈদে ঢাকা থেকে গ্রামে ফেরা শুরু হয়েছে। আজ বৃহষ্পতিবার থেকে যাত্রী ভীড় বাড়বে। দ্রুত বরিশাল-ঢাকা নৌপথে ডুবে যাওয়া জাহাজ অপসারণ করে ঘরমুখো মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। এব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করুক। একই সঙ্গে অন্তত ঈদের সময় রাতে বরিশাল-ঢাকা নৌপথে সব ধরণের মালবাহী কার্গো, জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হোক। নদী পথে অহেতুক প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে নৌনিরাপত্তা বিভাগ পদক্ষেপ গ্রহণ করুক। তাহলে নৌপথের যাত্রীরা নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারবে এবং ঈদ উদযাপনের পর নিরাপদে কর্মস্থলে ফিরতে পারবে।

যাত্রীদের নির্বিঘ্ন ও যাত্রাপথ সুন্দর করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, লঞ্চ মালিক সমিতি, বিআইডব্লিউটিএসহ সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে। সুন্দর ঈদ উৎসব পালনে নৌপথের নিরাপত্তা দিতে হবে। বাড়ি ফিরতে গিয়ে কিংবা ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরতে গিয়ে যেন যাত্রীরা কোন হয়রানীর শিকার না হন। দেশের বৃহত্তম যাত্রী সেবা খাত নৌপথের নিরাপত্তা দিতেই হবে। এটাই যাত্রী এবং সবার প্রত্যাশা।
 


-সাইফুর রহমান মিরণ, সাংবাদিক, লেখক।