পঞ্চসিঁড়িকে উচ্ছেদ করার জন্য কোন নির্দেশনা দেয়নি গণপূর্ত

পঞ্চসিঁড়িকে উচ্ছেদ করার জন্য কোন নির্দেশনা দেয়নি গণপূর্ত

 

পঞ্চসিঁড়ি গ্রুপ থিয়েটার দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে বিউটি রোডের গণপূর্ত বিভাগের পুরানো একতলা ভবনের একটি কক্ষে কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। অভিযোগ উঠেছে গত ডিসেম্বরে জেলা পুলিশ ওই ভবন সংস্কারের নামে পঞ্চসিঁড়ি গ্রুপ থিয়েটারের কক্ষটি ভেঙে ফেলে। আকস্মিক কক্ষ ভেঙে ফেলায় তাদের নাটকের ষড়ঞ্জামসহ অন্যান্য আসবাব ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গণপূর্ত বিভাগের জায়গায় কিভাবে জেলা পুলিশ কাজ করে জানতে চাইলে গণপূর্ত বিভাগের তত্তাবধায়ক প্রকৌশলী বলেন, গণপূর্ত বিভাগ পঞ্চসিঁড়ি গ্রুপ থিয়েটারকে উচ্ছেদের কোন নির্দেশনা দেয়নি। জেলা পুলিশকে ওই ভবন সংস্কারের জন্য লিখিত কিংবা মৌখিক কোন অনুমতিও দেয়া হয়নি। তারা কিভাবে কাজ করছে সেটা খতিয়ে দেখবে তারা।

এদিকে গতকাল বরিশালের ৩৭টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের জোট বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের একটি প্রতিনিধি দল গণপূর্ত বিভাগের তত্তাবধায়ক প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলীসহ অন্যান্যদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেছেন এবং বিষয়টি তাদের অবহিত করেছেন। এসময় প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছে, তাদের কোন সম্পত্তি কোন দপ্তর কিংবা ব্যক্তির কাছে হস্তান্তরের সুযোগ নেই। সরকারি সম্পত্তি হিসেবে তারা এটা কেবল রক্ষা

করতে পারেন, কারো নামে বরাদ্দ দিতে পারেন না এবং দেনওনি।জানা যায়, ১৯৮৩ সালে তখনকার জেলা প্রশাসক এম আজিজ আহম্মেদ পঞ্চসিঁড়ি গ্রুপ থিয়েটারের জন্য গণপূর্ত বিভাগের পুরানো ভবনের একটি কক্ষ বরাদ্দ দেন। সেই থেকে পঞ্চসিঁড়ি গ্রুপ থিয়েটার তাদের সাংস্কৃতিক কর্মকা- এখানে পরিচালনা করে আসছে। ভবনের অন্য অংশে পুলিশ সদস্যরা থাকতো। তবে ভবনের ছাদ দিয়ে পানি পরলে পুলিশ সদস্যরা এখান থেকে চলে যান। এরপরই কিছুদিন আগে ভবনের ছাদ ভাঙার কাজ শুরু করে পুলিশ বিভাগ।

 

সরেজমিন দেখা গেছে, বরিশাল নগরের বিউটি রোডে গণপূর্ত বিভাগের পুরানো ভবনের ছাদ ভেঙে ফেলা হয়েছে। পাশে নিবেসক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে একটি প্রচীর তুলে দেওয়া হয়েছে। এই প্রাচীরের পাশে পঞ্চসিঁড়ি গ্রুপ থিয়েটারের চেয়ার-টেবিলসহ কিছু আসবাব পড়ে আছে। আর ভাঙা ভবনের একাংশে পঞ্চসিঁড়ির স্টীল আলমারী ও অন্যান্য মালামাল ভেঙে ফেলা ছাদের পলেস্তারায় নষ্ট হয়ে গেছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছে, ভবনের ছাদ ভেঙে ফেলার পর রড, লোহার এঙ্গেলসহ সামনের পরিত্যক্ত ভবনের ইট পুলিশ বিক্রি করে দিয়েছে। গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, পুলিশ বিভাগ কোন অনুমতি ছাড়াই ওই কাজ করেছে। তারা মালামাল বিক্রি করলেও তার অর্থ গণপূর্তর কাছে হস্তান্তর করেনি।

পঞ্চসিঁড়ি গ্রুপ থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, ‘গত ৬ মাস আগে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভবনের ছাদ ভেঙে তারা সংষ্কার করবে। গত নভেম্বর মাসের ২৮ তারিখ তারা তাদের অংশের ছাদ ভাঙা শুরু করেন। এসময় পুলিশের পক্ষ থেকে পঞ্চসিঁড়ির কক্ষের ছাদও করে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে ভবনের ছাদ ভাঙতে গিয়ে পঞ্চসিঁড়ি গ্রুপ থিয়েটারের কক্ষের ছাদও ভেঙে যায়। ফলে থিয়েটারের মালামালসহ অন্যান্য আসবাবের বেশিরভাগ নষ্ট হয়ে যায়। তখন পুলিশের পক্ষ থেকে কার্যালয়ের তালা খুলে দিতে বলা হয়। তালা খুলে দেওয়ার পর তারা ভেতরের দেয়ালটিও ভেঙে ফেলে। বর্তমানে পঞ্চসিঁড়ি গ্রুপ থিয়েটারের মালামাল খোলা আকাশের নীচে আছে।’

এব্যাপারে বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি নজমুল হোসেন আকাশ বলেন, পঞ্চসিঁড়ি গ্রুপ থিয়েটার বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সদস্য সংগঠন। তারা দীর্ঘদিন ধরে বিউটি রোডে গণপূর্ত বিভাগের এই ভবনে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। জেলা পুলিশ ভবনটি সংস্কারের নামে তাদের কার্যলয়টি ভেঙে ফেলেছে। আমাদের ধারণা হয়েছিল গণপূর্ত বিভাগ হয়তো জেলা পুলিশকে ওই স্থাপনা বরাদ্দ দিয়েছে। সেই কারণে আমরা গণপূর্ত বিভাগের তত্তাবধায়ক প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে দেখা করেছি। তারা আমাদের জানিয়েছেন গণপূর্ত বিভাগের পক্ষ থেকে জেলা পুলিশকে ওই স্থাপনা দেওয়া হয়নি। তারা যে কাজ করেছে সেটা গণপূর্তকে লিখিত কিংবা মৌখিকভাবেও জানায়নি। আমাদের প্রশ্ন জেলা পুলিশ জোর করে কোন কাজ কি করতে পারে? এতে কি পুলিশের ভাবমূর্তি ও সুনাম অক্ষুন্ন থাকবে?

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কাজল ঘোষ বলেন, প্রায় ৪০ বছর ধরে পঞ্চসিঁড়ি ওখানে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতার খুব অভাব চলছে। আমরা জানতে পেরেছি জেলা পুলিশ ওই ভবন সংস্কারের নামে তাদের কক্ষটিও ভেঙে ফেলেছে। কোন রকম নোটিশ ছাড়া এবং গণপূর্ত বিভাগের অনুমোতি ছাড়া পুলিশ কিভাবে এই কাজ করেছে সেটা আমরা জানতে গণপূর্ত বিভাগে গিয়েছিলাম। তারা জানিয়েছে এব্যাপারে তারা কিছুই জানে না। জেলা পুলিশ কিসের ভিত্তিতে পঞ্চসিঁড়ির কক্ষ ও আসবাবপত্র ধ্বংস করেছে সেটা আমরা জানতে চাই।

জানতে চাইলে গণপূর্ত বিভাগ বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল হাছান বলেন, গণপূর্ত বিভাগের পক্ষ থেকে ওখানের কোন সম্পত্তি কারো কাছে হস্তান্তর কিংবা বরাদ্দ দেয়া হয়নি। ওই সম্পত্তি নিয়ে মামলা ছিল, সেই মামলায়ও সম্পত্তি গণপূর্তর নামেই আছে। ওখানে অন্য কারো সাইনবোর্ড থাকার কথা নয়।

 

বরিশাল গণপূর্ত সার্কেল বরিশালের তত্তাবধায়ক প্রকৌশলী মানিক লাল দাস বলেন, ‘আমাদের কোন সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদ করতে হলে জেলা প্রশাসনের অনুমতি প্রয়োজন। তার আগে নোটিশ দিতে হবে। আমরা এরকম কোন নোটিশ কিংবা উচ্ছেদ করিনি। জেলা পুলিশ কিভাবে কাজ করছে আমরা জানি না। পুলিশের পক্ষ থেকে লিখিত কিংবা মৌখিকভাবে কাজ করার অনুমতিও চাওয়া হয়নি। আমাদের সম্পত্তিতে একটি স্কুল আছে। এর বাইরে অন্য কারো নামে এই সম্পত্তির কোন অংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।

এব্যাপারে কথা বলার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান এর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি ফোন ধরেননি। পুলিশের পক্ষ থেকে কাজের তদারকীকারক জেলা পুলিশের ট্রাফিক ইনসপেক্টর মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘গণপূর্ত যদি বরাদ্দ না নিয়ে থাকে তাহলে বলেন, তারা কাজ বন্ধ করে দিক’।