পরানে হাওয়া লেগেছে বরিশালের অভিরুচিতে

পরানে হাওয়া লেগেছে বরিশালের অভিরুচিতে

পরানে হাওয়া লেগেছে বরিশালের অভিরুচি সিনেমা হল। একসময়ে বাবা কেন চাকর, বেদের মেয়ে জো¯œা, কমলার বনবাস এর মত হাউস ফুল হল ছিলো অভিরুচি কমপ্লেক্স। দীর্ঘ ৮ বছর পর হলটিতে কিছুটা হলেও দর্শক বেড়েছে। গত ঈদ উল আযাহায় রায়হান রাফি পরিচালিত বিদ্যা সিনহা মিম, শরিফুল রাজ ও ইয়াশ রোহান অভিনীত সিনেমাটি বরগুনার নয়ন বন্ড ও রিফাতের হত্যাকান্ড এবং মিন্নির ফাঁসি রায়ের সেই আলোচিত ঘটনা নিয়ে নির্মিত হওয়ায় দর্শক আগ্রহ বাড়ে। মানুষ তার জানা গল্পের সময়োচিত নির্মাণ পরাণ দেখতেই হলে ভির জমিয়েছে। অপর দিকে গত সপ্তাহের শুক্রবার গভীর সমুদ্রের গল্প নিয়ে নির্মিত চঞ্চল চৌধুরী, শরিফুল রাজ, নাজিফা তুষি অভিনিত হাওয়া সিনেমা দেখতে ভির পড়েছে অভিরুচিতে। 

প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত এ শহর-গ্রামে একসময় ১৮টির অধিক সিনেমা হল ছিলো। এখন তা ইতিহাস হয়েগেছে। কালের বিবর্তনে দর্শকপ্রীয় ভালো সিনেমা তৈরী না হওয়ায় দর্শকরা যেমন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে সিনেমা হল থেকে তেমনী আবার বৈশ্বিক মহামারী বাকিটুকু হতাশ করে দিয়েছে সিনেমা হল মালিকদের। যার কারনে অধিকাংশ হলই এখন বন্ধ হয়েগেছে। 

করোনা মহামারীর কারনে দীর্ঘ ৩ ছর বন্ধ থাকার পর ফের সিনেমা হলটি পরান ফিরে পেয়েছে হাওয়ার কারনে। আসলে গত ঈদে মুক্তি পাওয়া পরান ও হাওয়া সিনেরার কারনে। ফের দর্শকদের পদচারনায় মুখর নগরীর একমাত্র সিনেমা হল অভিরুচি কমপ্লেক্স। করোনা মহামারীর তিন বছর পর গত ঈদ উল আযহার দিনে সত্য ঘটনার অবলম্বনে নির্মিত পরনা সিনেমা মুক্তি পায় এ হলে সেই থেকেই হলটিতে দর্শক পূর্নতা তায় হলটি। এর পর গত সপ্তাহে শুক্রবার মুক্তি পায় হাওয়া সিনেমা। যাতে বরিশালের সিনেমা প্রিয় দর্শকতা ফিরতে শুরু করে হলে। পর পর ভালো মানের দুটি সিনেমা মুক্তি পাওয়ায় নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন হল মালিক। 

বেশ কয়েক বছর আগেও বরিশাল নগরীতে বিউটি, কাকুলি, অভিরুচি ও সোনালী নামের ৪টি সিনেমা হল থাকলেও ৩টি একে একে বন্ধ হয়ে সেখানে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এখনও দাড়িয়ে থাকা অভিরুচি কমপ্লেক্স সেটির অবস্থাও বেহাল। ১৪ শতাংশ জমির উপর নির্মিত ১০২৫ আসনের হলটিতে সমতা, সৌখিন, বিলাশ ও মহিলা চারটি ভাগে এই হলটির ভঙ্গুরদশা। বর্তমানে বিলাশের ৩২৫ টি আসনের ২০০টি চেয়ার মেরামত করে কোন ভাবে চলছে হলটি। এখন প্রতিদিন ৩টি শো চালায় হল কর্তৃপক্ষ। টিকেট মূল্য রাখা হচ্ছে ১০৭টাকা। প্রতিদিন গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ দর্শক হয় হলটিতে। এছাড়া বেশীর ভাগ সময় ভালো সিনেমা না থাকায় বন্ধ থাকে সিনেমা হল।

নগীর বাসিন্দা ব্যাংকার সঞ্জয় কর্মকার পরিবার নিয়ে হাওয়া সিনেমা দেখতে এসেছেন। এসময় এ প্রতিবেদককে বলেন, দেশে ভালো মানের সিনেমা এখন আর তৈরি হয় না। পরিবার পরিজন নিয়ে সিনেমা হলে যাওয়াটাই বন্ধ হয়েগেছে। যুগের তালে সিনেমা হলের পরিবেশ পাল্টে গেছে। ঢাকাতে অধুনিক মানের সিনেমা হল থাকলেও বরিশালে তেমনা নেই। আমাদের ঐতিয্য ধরে একে একটি সিনেমা হল আছে বেচে কোন রকম। তার বেহাল দশা। এখন মানুষন ইউটিউব, নেটফ্লিক্স, আমাজন প্রাইম, দেশি ওয়েবসহ নানা প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে। মুহূর্তেই মুঠোফোনে বা ঘরে বসেই সবকিছু দেখা যায়। তবে এ ধরনের সিনেমা তৈরি হলে আবার সিনেমা হলে মানুষ ফিরবে।

অভিরুচি কমএপ্লক্সের ম্যানেজার রেজাউল কবির জানান, ১৯৮৮ সালে চালুর পর নতুন ছবি মুক্তি পেলে অভিরুচিতে দর্শকের ঢল নামতো। ২০১০ পর্যন্ত জমজমাট ছিল অভিরুচি। ২০১৪ সালের পর টানা দর্শক খরা শুরু হয়। দর্শক না থাকার কারণে নগরীর তিনটি হল আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। টেকনিশিয়ান, অপারেটর ও টিকিট বিক্রেতা মিলিয়ে ৪০ জনের বেশি কর্মাচারী ছিল এ সিনেমা হলটিতে। বর্তমানে চারজন কর্মচারি দিয়ে কাজ চলছে। হল চালিয়ে রাখতে মাসে খরচ প্রায় এক থেকে দেড়লাখ টাকা। গত দুই-তিন বছর ধরে শুধু দুই ঈদ ছাড়া র্দর্শক হয়নি। মানুষের হলে ছবি দেখার প্রবণতা কমেছে। ভালো গল্পের ছবি নেই, ছবিতে নেই ভালো সংলাপ, নেই ভালো গান ও অভিনয় যার কারনেই কমে গেছে দর্শক। হল চালিয়ে রাখতে দায় দেনায় জরজরিত মালিক। সরকারী ভাবে কোন প্রনোদনা বা ব্যবস্থা না করায় হলটি টিকিয়ে রাখাই দায় হয়ে পড়েছে।

বরিশালের জেলা তথ্য অফিস সূত্রে জানাযায় বরিশাল জেলায় মোট হল ছিল ১৮টি। জেলার ১০ উপজেলা ও নগরী মিলে বন্ধ হওয়া হলের মধ্যে রয়েছে, নগরীতে কাকলী, বিউটি ও সোনালি। মেহেন্দিগঞ্জে আজাদ, রাজলক্ষ্মী, মেঘনা, পদ্মা, বাকেরগঞ্জে রংধনু, সঙ্গীতা, ঘোমটা, বাবুগঞ্জে আনারকলি, উজিরপুরে স্বপ্নপুরী, বানারীপাড়ায় সোহাগ, গৌরনদীতে নাহার, আগৈলঝাড়ায় তাজমহল, মুলাদীতে মামুন এবং হিজলায় রূপমহল হল।