পাওনা টাকা ফেরৎ চাওয়ায় গৃহবধূকে মারধর, হাসপাতালে ভর্তি

বরগুনার তালতলীতে পাওনা টাকা ফেরৎ চাওয়ার অপরাধে জাহানারা (৪০) নামে এক গৃহবধূকে ঘরে আটকে গড়ম লোহার রড দিয়ে ছ্যাকা ও মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে শ্বাশুরী, জ্যা, ভাসুর ও ননদের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার রাতে উপজেলার সোনাকাটা ইউনিয়নের লালুপাড়া গ্রামে। শনিবার সকালে স্বজনরা গুরুতর অবস্থায় আহত ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে।
আহত ও স্বজন সূত্রে জানা গেছে, তালতলী উপজেলার সোনাকাটা ইউনিয়নের লালুপাড়া গ্রামের মৃত অব্দুল খালেক হাওলাদারের ৪ ছেলের মধ্যে বাবুল হাওলাদার বাদে ৩ ছেলে মালয়েশিয়া থাকে। প্রবাসী আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের স্ত্রী রাজিয়া বেগম তার জা জাহানারা বেগমের মাধ্যমে তার ভাই হাবিব চৌকিদারের ছেলে শাহিনকে বিদেশ পাঠানোর কথা বলে ২০২১ সালের ১৬ জুলাই ৩ লক্ষ টাকা ধার আনেন। টাকা নেওয়ার পর তারা শাহিনকে বিদেশে না পাঠিয়ে ঘুরাতে থাকেন। ওই বিষয় নিয়ে পারিবারিক ভাবে তাদের মধ্যে ব্যাপক দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। বাবুল হাওলাদার এবং তার স্ত্রী বাদে পরিবারের সবাই এক পক্ষ হয়ে বাবুল হাওলাদার এবং তার স্ত্রী জাহানারা বেগকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করতে থাকে। যাতে তাদের নেওয়া ৩ লক্ষ টাকা ফেরৎ দিতে না হয়। বাবুলের মা এক পর্যায়ে বাবুলের বিরুদ্ধে আদালতে ঘর চুরি মামলা করেন। মামলায় বাবুল গত বৃহস্পতিবার জেলহাজতে যায়। পরের দিন শুক্রবার রাতে জাহানারা বেগম তার জা রাজিয়া বেগমের নিকট টাকা চাইতে গেলে রাজিয়া বেগম, তার শ্বাশুরী সেতারা বেগম, ননদ জেসমিন বেগম ও ভাশুর আবুল হোসেন জাহানারা বেগমকে ঘরে আটকে গাছের লাঠি (ডাল) দিয়ে বেদম প্রহার করে। এক পর্যায়ে চুলায় রড পুড়িয়ে গড়ম করে মধ্যযুগীয় কায়দায় জাহানারা বেগমের ডান গালে, পিঠে, দুই হাতে বাম পায়ে ছ্যাকা দিয়ে গুরুতর জখম করে। রডের ছ্যাকায় জাহানারা বেগমের গাল, হাতপায়ে এবং পিঠের বিভিন্ন জায়গায় ফোসকা পরে কালো দাগ হয়ে ফুলে উঠে। গুরুতর এই নির্যাতনের সময় জাহানারা বেগম ডাক চিৎকার দিলেও ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি।
স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে রাত ১১টার সময় জাহানারা বেগমের ভাই নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের মেনিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা হাবিব চৌকিদার তার বোনকে উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। পরের দিন আজ শনিবার সকালে মুমুর্ষ অবস্থায় তাকে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেন। বর্তমানে জাহানারা বেগম ওই হাসপাতালেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।
আমতলী হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে জাহানারা বেগম বলেন, মোর ভাইর ছেলেকে বিদেশে পাঠানের লইগ্যা ৩ লক্ষ টাহা আইন্যা মোর জা রাজিয়া বেগমরে দেই। ২ বছর অইয়া গ্যাছে বিদেশে পাডায় নাই। এই টাহা চাওয়ায় মোর শ্বাশুরী সেতারা বেগম, জা রাজিয়া বেগম, ননদ জেসমিন বেগম, ভাসুর আবুল হোসেন এক অইয়া মোর ব্যামালা নির্যাতন করে। লাডি দিয়া মাইর ধইর করে। হেইয়ার পর মোরে ঘরে আটকাইয়া লোয়ার রড পুইর্যা গরম কইর্যা মোর হারা গায়ে পুইর্যা দেছে। তিনি আরো বলেন, মোর ভাইর টাহা না দেওয়ার লইগ্যা সবাই এক অইয়া মোর স্বামীরে মিথ্যা মামলা দিয়া জেলে পাডায়। মুই এইয়ার বিচার চাই।
জাহানারা বেগমের ভাই হাবিব চৌকিদার অভিযোগ করে বলেন, মালয়েশিয়া প্রবাসী আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী রাজিয়া বেগম আমার নিকট থেকে আমার ছেলেকে মালয়েশিয়া পাঠানোর জন্য আমার বোন জাহানারা বেগমের মাধ্যমে ৩ লক্ষ টাকা নিছে। ২ বছর অতিবাহিত হলেও আমার ছেলেকে বিদেশে পাঠায়নি আর টাকাও ফেরৎ দেয়নি। টাকা চাওয়ার অপরাধে আমার বোন জাহানারাকে বেদম মারধর করে শরীরে রড পুরে ছ্যাকা দিয়ে গুরুতর আহত করেছে। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।
অভিযুক্ত সেতারা বেগম, রিজিয়া বেগম এর পক্ষে ভাশুর আনোয়ার হোসেন হাওলাদার মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমাদের কাছে কোন টাকা পয়সা পাবে না। এছাড়া জাহানারা বেগমকে আমরা কোন মারধর করিনি। আমাদেরকে হয়রানি করার জন্য এসব মিথ্যা অভিযোগ করছে।
আমতলী হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ লুনা বিনতে হক বলেন, জাহানারা বেগমের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আগুনে পুড়ে ফোসকা পড়ার অনেক দাগ রয়েছে।
তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাখাওয়াত হোসেন তপু মুঠোফোনে বলেন, ওই বিষয়ে এখনো কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।#