পাপিয়াদের নিয়ন্ত্রণ করুন

গত কয়েকদিন ধরে একটি খবর নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় চলছে। নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক পাপিয়া। জেলা ছাত্রলীগের হাত ধরে রাজনীতিতে আসা তার। রাজনীতি বলবো না কি না জানি না, তবে নীল নীতিতে প্রবেশ তার ওই সময় থেকেই। সবাই যখন দিনের আলোতে হাঁটা শুরু করেন পাপিয়া তখন নীল পথ ধরে অনেক দূর এগিয়ে। যে পথ তাকে আভিজাত্য ফিরিয়ে দিয়েছে। দিয়েছে অর্থ-বৈভব। যার সঙ্গে জড়িয়ে আছেন ওপরতলার অনেক নামি-দামি ব্যক্তিরা। দল থেকে বহিষ্কার করলেই এই পাপিয়াদের প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব হবে না। পাপিয়াদের বহিষ্কারের আগে যারা পাপিয়াদের সৃষ্টি করে তাঁদের লৌল জিহ্বা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যে যাই বলি না কেন নীল পথের পাপিয়াদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে রাজনীতি কলুশিত হবে।
আমরা হয়তো এক পাপিয়ার নীল পথে হাঁটার সংবাদ জানি। কিন্তু এরকম রাজনীতির আড়ালে সারা দেশে অনেক পাপিয়া আছেন, যারা অনেক সময় রাজনীকেও নিয়ন্ত্রণ করেন। নিয়ন্ত্রণ করেন প্রশাসন থেকে শুরু করে আমলা-মন্ত্রীদেরও। এমনসব পাপিয়াদের চিহ্নিত করে এদে বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। তা না হলে এই পাপিয়ারা গোটা সমাজকে এবং রাজনীতিকে নোংড়া পথে নিয়ে যাবে।
এক পাপিয়া গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। আজ আমরা তাকে ধিক্কার জানাচ্ছি। আমরা জানি, এই পাপিয়া একদিনে স¤্রাজ্ঞী হননি। এই পাপিয়ারা আগেও ছিলেন, এখনো আছেন, পরেও থাকবেন। যাঁদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে পাপিয়ারা কুঁড়ি থেকে ফুল হয়ে ফোটেন, কর্মী থেকে বড় নেত্রী বনে যান, তারা এর দায় এড়াতে পারেন না। ওপরে ওঠার এই সিঁড়িতে পাপিয়ার সঙ্গে ওপর মহলের অনেকেরই দেখা হয়েছে। একান্তে কথা হয়েছে। হয়েছে আরও...। অনেকের সঙ্গেই পাপিয়ার ঝলমলে ছবি আছে। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকের হিংসা জন্ম দিয়েছে। বড় বড় মানুষের আশপাশে-কাছে-নিবিড়ে যাঁর এমন ছবি থাকে, তাঁর হাত কতটা লম্বা ছিল, তা অনুমান করা যায়।
এটা তো কেবল একজন পাপিয়ার গল্প আমাদের সামনে এসেছে। সারা দেশে এরকম অনেক পাপিয়া আছে, যাঁদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন অনেক রাজনীতিক ও মন্ত্রী-সাংসদরা। বরিশালে এমন কয়েক পপিয়া আছেন, যিনি বিভিন্ন সময় মন্ত্রী-সাংসদদের ভয় দেখিয়ে বদলী বাণিজ্য করে বেড়ান। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক পাপিয়া শিক্ষক থেকে কর্মকর্তাদের দাবড়িয়ে বেড়ান। তাঁর সঙ্গে না কি ওপর মহলের সখ্যতা আছে। এই পাপিয়ার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস করে না। এমন পাপিয়ারা আছেন ঝালকাঠি, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালিসহ ৬৪ জেলা এবং সাড়ে ৪০০ উপজেলায়। এরা যেমন নীল পথে চলেন, তেমনি ভয়-ভীতি দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে পিষে মারেন। এদের থেকে পরিত্রাণ দেবে কে?
এখান থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে পাপিয়াদের সত্যি রাজনীতির পথে রাখতে হবে। আমরা এটাও জানি, নোংড়া পথে যেমন পাপিয়ারা যাচ্ছেন, তেমনি নোংড়া পাথে পাপিয়াদের যেতে বাধ্যও করা হচ্ছে। যে পাপিয়া অনেক নেতার সঙ্গে সাফল্য ভরা আনেন্দের ছবি হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাসতো। সেই পাপিয়া আজ অন্যরকম খবর হয়ে ভাসছে। যারা পাপিয়ার সঙ্গ পেতে মরিয়া ছিল এখন তারা কেউ পাপিয়া নামে কাউকে চিনবেন না এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং পাপিয়াদের উত্থানের পেছনের পাপিয়াদের চিহ্ণিত করুন।
রাজনীতির মাঠে যাতে আর কোন পাপিয়াদের জন্ম না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। একই সঙ্গে কোন রাজনীতি যেন পাপিয়াদের নান্দনিকতাকে নেতিবাচক দিকে নিয়ে যেতে না পারে সেদিকেও নজর দিতে হবে। আমরা চাই, আমাদের রাজনীতিতে আরো বেশি সংখ্যক নারীর অংশগ্রহণ বাড়ুক। কিন্তু রাজনীতির মাঠে এইরকম পাপিয়ার জন্ম হলে নারীরা রাজনীতি বিমুখ হয়ে পড়বে। যার প্রভাব পড়বে গোটা জাতির ওপর। তাই পাপিয়াদেন নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে।