পুলিশ সদস্যরা মাদকের সঙ্গে যুক্ত, অশনি সংকেত

করোনাকালে স্বজনরা যখন একান্ত আপনজনকে রাস্তায় ফেলে পালিয়েছে। যখন করোনা আক্রান্ত স্বজনের জানাজা ও দাফন দেননি স্বজনরা। তখন পুলিশ আত্মার আত্মীয় হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে। জানাজা, দাফন-কাফনসহ অসুস্থ্য ব্যক্তিকে হাসপাতাল ও বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন। সবাই যখন ভয়ে ভীত ছিল তখনও পুলিশ নির্ভয়ে করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করেছে। নিজেরা করোনায় আক্রান্ত হয়েও দায়িত্ব থেকে সরে আসেননি। সেই কারণে সারা দেশে পুলিশ জনবান্ধব পুলিশের উপাধি পায়। করোনকালে ভুলিশের দায়িত্বশীল ভূমিকা পুলিশের মর্যাদা এবং সম্মান অনেকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু সেই পুলিশ সদস্যদের মাদকের সঙ্গে সংযুক্তি, মাদক আসক্ত হওয়া, চাকুরি হারানোর খবর মর্যাদার গায়ের কালিমা এঁকে দিয়েছে।
আমরা সারা দেশের পুলিশ কর্মকর্তাদের মুখে শুনি মাদকের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীল নীতি অনুসরণ করতে হবে। কিছু সংখ্যক পুলিশ সদস্যদের মাদকের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় পুরো পুলিশের গায়ে কালিমা লেপন করেছে। মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। এখান থেকে বের হতে পুলিশ প্রশাসনকে আরও কঠোর ও কঠিন হতেই হবে। দেশ থেকে মাদক নির্মুল করতে মাঠ প্রশাসনের সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে পুলিশ। সেই পুলিশ সদস্যরা যদি মাদকের সঙ্গে যুক্ত হয় সেটা আমাদের জন্য অসনি সংকেত ছাড়া আর কিছু নয়। এখান থেকে অবশ্যই উত্তোরণ ঘটাতে হবে।
আমরা জানতে পেরেছি বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) সদস্যদের ডোপটেস্টে ১৭জনের রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে। সরাসরি মাদক কেনা বেচায় জড়িত ৫জনকে মাদকসহ গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এই ১৭জনের মধ্যে ৪ জনকে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। এখনো চাকুরিচ্যুতির অপেক্ষায় আছে কয়েকজন। ২০১৯ এর অক্টোবরে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের সন্দেহভাজন সদস্যদের ডোপ টেস্ট প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপর থেকে প্রতি মাসে দৈবচায়ন পদ্ধতিতে ডোপ টেস্ট করা হচ্ছে সন্দেহভাজন পুলিশ সদস্যদের। ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৫ মাসে মোট ৪৮জন পুলিশ সদস্যের ডোপ টেস্ট করা হয়। এর মধ্যে ১৭ জনের রিপোর্ট পজেটিভ হয়। অর্থাৎ তারা মাদকসেবী। এছাড়া পুলিশের অভ্যন্তরীণ নজরদারীতে ওই ১৭ জনের মধ্যে ৫ সদস্যদের বিরুদ্ধে মাদক বিক্রির সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।
একই সঙ্গে পুলিশের ভালো অর্জনগুলো ম্লান করার জন্য মাদক এবং পুলিশী হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগ নতুন করে চিন্তায় ফেলেছে সাধারণ নাগরিকদের। পুলিশী হেফাজতে থাকা অবস্থায় নির্যাতনে রেজাউল করিম (৩০) নামে এক শিক্ষানবীশ আইনজীবী হাজতীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গত ১ জানুয়ারি শনিবার দিবাগত মধ্য রাতে বরিশাল শের-ই-বংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রেজাউলের মৃত্যু হয়েছে।
গত ৩১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে বরিশাল নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের নিজ বাড়ি সংলগ্ন সাগরদী হামিদ খান সড়কের একটি চায়ের দোকানে বসা ছিলো রেজাউল করিম। সেখান থেকে নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মহিউদ্দিন রেজাউলকে মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করেন রেজাউলকে। তার কাছ থেকে ১৩৮ গ্রাম গাঁজা এবং ৪পিস নেশাজাতীয় ইনজাকশন উদ্ধারের দাবি করে রাতভর তাকে তাদের হেফাজতে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে। পরদিন অসুস্থ্য অবস্থায় রেজাউলকে প্রথমে কারা হাসপাতাল পরেন শের-ই-বাংলা মেডিকেলণ কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় রেজাউল।
পুলিশ সদস্যদের মাদকের সঙ্গে যুক্ত থাকার প্রমাণ নাগরিকদের উদ্বিগ্ন করেছে। একই সঙ্গে মাদকের সঙ্গে যুক্ত থাকার কথিত অভিযোগে যুবক ও কিশোরদের আটক করে নির্যাতনের অভিযোগও দীর্ঘদিনের। এমনও অভিযোগ আছে মাদক মামলা দেওয়ার ভয় দেখিয়ে অসাধু পুলিশ সদস্যরা আর্থিক বাণিজ্য করছেন। অনেক সময় নীরিহ যুবকররা এসবের বলি হয়। শিক্ষানবীশ আইনজীবী রেজাউলের ক্ষেত্রে এমনটি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে। এসব করতে গিয়ে অনেক সময় মূল মাদকাসক্ত এবং অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। ফলে কমছে না মাদকের বিস্তার।
আমরা চাই, যেসব পুলিশ সদস্যর বিরুদ্ধে মাদকের সঙ্গে যুক্ত থাকা এবং কেনাবেচার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কঠিন ও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। একই সঙ্গে মাদক নির্মুল করতে যেন কোন নীরিহ ব্যক্তিকে হয়রানী করা না হয় সেদিকেও সতর্ক দৃষ্টি থাকে। সাধারণ মানুষ পুলিশের ইতিবাচক সকল কাজের সঙ্গে আছে এবং থাকবে। তবে নেতিবাচক কাজ বন্ধ করতেও উধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরদারি থাকতে হবে। যাতে মাদকের ছোঁবল থেকে সমাজ ও রাষ্ট্র নিরাপদ থাকতে পারে।