ববি শিক্ষার্থীদের অবরোধ ৮ঘন্টা পর প্রত্যাহার,আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হঁশিয়ারী

ববি শিক্ষার্থীদের অবরোধ ৮ঘন্টা পর প্রত্যাহার,আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হঁশিয়ারী


বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মেসে হামলা ও মারধরের ঘটনায় দোষীদের গ্রেপ্তার ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দাবিতে ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়েছে। একটানা ৮ ঘন্টার অবরোধ তুলে নিলেও দাবি আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। অবরোধ তুলে নেওয়ার পর মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

বিকেল সাড়ে ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। 
গভীর রাতে মেসে ঢুকে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনকারীদের গ্রেপ্তারসহ ৩ দফা দাবি বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে আদায় না হওয়ায় ফের বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় মহাসড়কের কর্ণকাঠী এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গাছের গুড়ি ফেলে এবং আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে তারা।

৩ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন তারা। তবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশ^বিদ্যালয কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে অবরোধ প্রত্যাহরে সম্মত হন শিক্ষার্থীরা। তবে দাবি আদায়ে তারা আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থী অমিত হাসান রক্তিম জানান, প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে আমার আমাদের তিন দফা দাবি পুনরায় তুলে ধরেছি। সেখানে দুটি বিষয়ে আশ্বস্ত হলেও একটি বিষয়ে কোন সুরাহা হয়নি।

গত মঙ্গলবার রাতের হামলার ঘটনায় আমার রূপাতলী মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওসার হোসেন শিপনসহ কয়েকজনের নাম বলেছি। যাদের নাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসেনর দায়ের করা মামলায় এখনো অন্তর্ভুক্ত হয়নি। কিন্তু তাদের নাম অন্তরভুক্ত ও গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি মামলায় হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা ও শিক্ষার্থীদের মালামাল ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো আনতে হবে। শিক্ষার্থীদের এ দাবির কথা বৈঠকে তুলে ধরা হলেও সে বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট সুরাহা দেয়নি কেউ। আমরা আশ্বাস নয়, চাই মুল হামলাকারীদের গ্রেপ্তার।
হামলায় আহত শিক্ষার্থী আলিম সালেহী বলেন, আমরা আজ সড়ক অবরোধ তুলে (স্থগিত) নিলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি চলবে। এছাড়া ২১শে ফেব্রুয়ারি হওয়ায় সড়ক অবরোধ কর্মসুচি থাকছে না। তবে ২১ শে ফেব্রুয়ারির পরে সড়ক অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি থাকবে কি না তা পরবর্তীতে জানানো হবে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের অন্যতম নেতা মাহামুদুল হাসান তমাল জানান, প্রশাসন অনেকটাই গাছাড়া ভাব দেখিয়েছে। সেজন্য আমাদের মৌলিক অধিকারের জায়গা থেকে আন্দোলন করতে হচ্ছে। আর সড়ক অবরোধের কারণে জনগণের যে ভোগান্তি হচ্ছে তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি, তবে এ ছাড়া আমাদের আর কিছু করার নেই।

বৈঠকে উপস্থিত থাকা বরিশাল মেট্রোপলিটনের উপ পুলিশ কমিশনার মোকতার হোসেন জানান, ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অজ্ঞাতদের আসামী করে যে মামলা করেছে তা তদন্ত করে  দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্তে হামলার সঙ্গে জড়িত যাদের নামই আসবে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।

এ বিষয়ে উপাচার্য ড. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, শিক্ষার্থীরা তিন দফা যে দাবিগুলো করেছে তা মানা হয়েছে এবং হচ্ছে। আমি শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ তুলে নেয়ার জন্য আহবান জানিয়েছি। তারা বিষয়গুলো বুঝতে পেরেছে বলে মনে করছি। আশাকরি তারা ধৈর্য্য ধারণ করবে এবং প্রশাসনকে সহযোগিতা করবে।

গত মঙ্গলবার গভীর রাতে নগরীর রূপাতলী হাউজিংয়ের মেসে ঢুকে বিশ্ববিদ্যায়ের অন্তত ২০জন শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করে দুর্বৃত্তরা। শিক্ষার্থীদের দাবি ওই রাতে পুলিশ প্রশাসনের উপস্থিতিতে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন তাদের নির্যাতন করেছে। এ ঘটনায় ওই রাত দেড়টা থেকে পরদিন বুধবার বিকেল ৫টা ১০ মিনিট পর্যন্ত বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থী নির্যাতনকারীদের গ্রেপ্তার ও হামলকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং তাদের নিরাপত্তা প্রদানের শর্তে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে বুধবার বিকেলে অবরোধ সাময়িক স্থগিত করে। হামলার ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার বিকেলে শতাধিক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার একটি মামলা দায়ের করেন। তবে ওই হামলায় চিহ্নিতদের আসামী না করা এবং প্রকৃত হামলকারীরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় ফের মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। ২ ঘন্টা পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে অবরোধ স্থগিত করেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মামলায় শুক্রকার রাতে সন্দেহভাজন ২জন শ্রমিককে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও তারা ওই হামলায় জড়িত নয় বলে দাবি শিক্ষার্থীদের। প্রকৃত হামলাকারীদের গ্রেপ্তার এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরসহ ৩ দফা দাবিতে গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় ফের মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় মহাসড়কে গাছের গুড়ি ফেলে এবং আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা।