বরিশাল নগরীতে শতবর্ষী পুকুর ভরাটে প্রতিবাদ এলাকাবাসীর

বরিশালে শতবর্ষের পুরানো একটি পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। সারা দেশে পুকুর ও জলাশয় ভরাটে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও রাতে আঁধারে বালু ফেলে পুকুরটি ভরাট কাজ শুরু করা হয়।
বরিশাল নগরীর ভাটিখানা এলাকায় প্রায় ১০০ বছরের পুরনো একটি পুকুর ভরাটের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
গত বৃহস্পতিবার রাতে শতাধিক ট্রাক বালু ফেলে পুকুরটি ভরাট শুরু হয়। পুকুরটি রক্ষায় গতকাল শুক্রবার বিকেলে ওই এলাকায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন কয়েকশ নারী-পুরুষ। তারা পুকুর ভরাট প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছেন।
পুকুরটি ব্যক্তি মালিকানাধীন হলেও স্থানীয় হাজারো পরিবারের ব্যবহারযোগ্য পানির উম্মুক্ত উৎস্য।
স্থানীয়রা জানান, নগরীর ভাটিখানা-আমানতগঞ্জ সংযোগ সড়কের পাশে বিশাল আয়তনের পুকুরটি ওই এলাকার ঐতিহ্য। পুকুরে পূর্ব পাড়ে শের-ই-বাংলার ফুফুর নামে প্রতিষ্ঠিত ‘আখতারুন্নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’।
স্থানীয় কাজীবাড়ি জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারী সেলিম মৃধা জানান, ১৯২৫ সালে বিদালয়টি প্রতিষ্ঠার সময় ওই পুকুর খনন করা মাটি দিয়ে বিদ্যালয়ের ভিটি উচু করা হয়। শের-ই-বাংলার ফুফু ‘আখতারুন্নেছার বিশাল ভূসম্পত্তি ছিল ওই এলাকায়। তারাই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। কালক্রমে ক্রয় সূত্রে পুকুরটির মালিক হন নগরীর আলেকান্দা নিবাসী ফয়েজ আহমেদ। তার উত্তরাধিকাররা এখন পুকুরটির মালিক। গত ১০ বছর আগে পুকুরটি ক্রয়ের জন্য মসজিদ কমিটির সঙ্গে ফয়েজ আহমেদের চুক্তি হয়েছিল। তিনি আকস্মিক মৃত্যুবরণ করায় পুকুর ক্রয় করা হয়নি। তার পক্ষে আজহার মুন্সী (কয়েক মাস আগে মৃত্যুবরণ করেন) নামে এক ব্যক্তি কয়েক যুগ ধরে মরহুম ফয়েজ আহম্মেদের সম্পত্তি দেখাশোনা করছিলো। পুকুরটির লিজ নিয়ে মাছ চাষ করছেন আজাহার মুন্সির স্ত্রী বিলকিস বেগম।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত বুধবার পুকুর সেচ করেন। গত বৃহস্পতিবার দিনে মাছ ধরে নেয় বিলকিস বেগমের ছেলে মিন্টু মুন্সি। এলাকাবসী ধারণা করেছিল মাছ ধরার জন্য পুকুর সেচ করা হয়েছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাত অনুমানিক দেড়টার দিকে একের পর ট্রাক এসে পুকুরে বালু ফেলতে শুরু করলে তাদের ধারণা পাল্টায়। বহিরাগত তরুন-যুবকরা সেখানে অবস্থান নিয়ে বালু ফেলার কাজ তদারক করেন। শুক্রবার সকালে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা গতকাল বিকেলে মানববন্ধন এবং বিক্ষোভ করেন।
৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলাম বাদশা এলাকাবাসীর আন্দোলনে অংশ নিয়ে বলেন, সিটি করপোরেশ নগরীর দেড়শ পুকুর সংরক্ষণের জন্য তালিকাভুক্ত করেছে। এর মধ্যে কাজীবাড়ি মসজিদ সংলগ্ন পুকুরটিও রয়েছে। রাতের আঁধারে অসৎ উদ্দেশ্যে বালু ফেলে পুকুরটি ভরাটের চেষ্টা করা হচ্ছে।
ওই জমির বর্তমান কেয়ারটেকার মিন্টু মুন্সি বলেন, মৃত ফয়েজ আহমেদের উত্তারাধীকাররা (মেয়ে এবং ছেলে মৃত তারেক আহমেদের স্ত্রী) রাতে উপস্থিত থেকে পুকুর ভরাট শুরু করেন। সেখানে বহুতল ভবন করবেন তারা।
বরিশাল নদী-খাল-জলাশায় রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, নগরীর মধ্যে কোন ধরণের জলাশয় ভরাট করা যাবে না। সেটা ব্যক্তি মালিকানা হলেও পুকুর ভরাট করা যাবে না। ওই এলাকায় অগ্নিদুর্ঘটনা হলে নিবর্পানে পানি সরবরাহের একমাত্র উৎস্য এই পুকুরটি। পুকুর রক্ষায় আইনী লড়াই কররার কথা বলেন তিনি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক মো. আব্দুল হালিম বলেন, ভাটিখানা এলাকায় পুকুর ভরাটের খবর তিনি শুনেছেন। কাউকে পুকুর ভরাটের অনুমতি দেওয়া হয়নি। এ ঘটনায় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন তিনি।
জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, সরকারি বেসরকারী কিংবা ব্যক্তি মালিকানাধীন পুকুর ভরাটের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন আছে। তারা পুকুর ভরাটের অনুমতি নেয়নি। পুকুর ভরাট বন্ধে সিটি করপোরেশনের সহায়তায় কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেন জেলা প্রশাসক।