বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় রাতে হলে ঢুকে সাঈদ গ্রুপের ত্রাস, তদন্ত কমিটি গঠন
ছাত্রলীগ নেতা সাঈদ গ্রুপের বিরুদ্ধে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ৫ ছাত্রকে কুপিয়ে জখমের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই শাহ জালাল নামে অপর এক শিক্ষার্থীকে রাতভর মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতনের শিকার শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ছেড়ে প্রাণের ভয়ে আত্মগোপনে গেছে।
গত মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে শের-ই-বাংলা হলে এ ঘটনা ঘটে। বুধবার দুপুরে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটিকে ৫ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। নির্জাতনের শিকার শাহজালাল ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলের প্রভোস্ট মু. ইব্রাহিম মোল্লা জানান, শের-ই-বাংলা হলে মঙ্গলবার রাতে নির্যাতনের ঘটনায় জরুরী সভা আহবান করা হয়। দুপুর আড়াইটায় এই সভা শুরু হয় চলে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। সভায় উপস্থিত সকল আবাসিক শিক্ষকদের ঘটনার বিষয়ে অবহিত করা হয়। এরপর আবাসিক শিক্ষক ইয়াসিফ আহমদ ফয়সলকে আহবায়ক করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর সদস্যরা হচ্ছেন; আবাসিক শিক্ষক সোহেল রানা ও আবাসিক শিক্ষক মো. সাইফুল।
একাধিক শিক্ষার্থী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্যাতনের শিকার শাহজালাল ছাত্রলীগ নেতা সপ্তম ব্যাচের ছাত্র নাভিদ গ্রুপের লোক হিসেবে পরিচিত। গত বুধবার রাতে সপ্তম ব্যাচের ছাত্র সাঈদের নেতৃত্বে শান্ত (১), নাওয়াজ, রাহাত, আরাবি, হাবিব, পঞ্চম ব্যাচের সাইমুন, চতুর্থ ব্যাচের শান্ত (২), সোহেল এবং রিফাত মিলে প্রথমে শাহজালালের কক্ষে প্রবেশ করে ত্রাশ সৃষ্টি করে। এ সময় জিওলজি অ্যান্ড মাইনিং বিভাগের শিক্ষার্থী শান্ত তার রুমে গিয়ে জরুরী কথা আছে বলে ১০০১ নম্বর রুমে নিয়ে যায়। রুমের মধ্যে ঢোকার পর দরজা বন্ধ করে তার মুখ বেঁধে মারধর শুরু করে। ওই রুমে সাইদসহ কমপক্ষে ৮জন লোক ছিলো। এদের হাতে ছিলো রড ও দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র। শাহজালালের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে। ভয়ে রাতেই হল ছেড়ে যায় শিক্ষার্থী শাহজালাল।
নির্যাতনের শিকার শাহজালাল জানায়, বিকেলে বঙ্গবন্ধু হলের বাংলা বিভাগের নাভিদ ও অর্থনীতি বিভাগের সাইদের মধ্যে কক্ষ পরিবর্তন করা নিয়ে হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে প্রতিপক্ষের হামলায় সাইদ গ্রুপের চারজন আহত হয়ে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়। এরই জের ধরে সাইদের পক্ষের লোকজন আমার ওপর নির্যাতন চালায়।
এ ব্যাপারে শের-ই-বাংলা হলের প্রভোস্ট ইব্রাহিম মোল্লা বলেন, বিষয়টি উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে আলোচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাঈদ গ্রুপ দীর্ঘ দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা ধরণের অপরাধমূলক কর্মকান্ড করছে। একাধিক শিক্ষার্থীকে মারধর, চাঁদাবাজিসহ অরো অনেক অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। সাঈদ তার বাহিনী দিয়ে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে অনেক সময় মোটা অংকের টাকা আদায় করতো। এছাড়া সিট পাইয়ে দিতেও অনেকের কাছ থেকে টাকা নেয়ার অভিযোগ আছে সাঈদের বিরুদ্ধে। এতে করে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ নাভিদ গ্রুপের পক্ষ নেয়।
গত মঙ্গলবার যে কক্ষ দুটি নিয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে ওই কক্ষ দুটি শিক্ষার্থীদের পাইয়ে দিয়েছে নাভিদ। এর ফলে সব শিক্ষার্থীরা নাভিদের পক্ষ নেয়। কারণে গত মঙ্গলবার রাতে নাভিদ গ্রুপের লোকজনকে শায়েস্তা করতে শেরেবাংলা হলে প্রবেশ করে সাঈদ গ্রুপের লোকজন। তারা হলে গিয়ে নাভিদ গ্রুপের শাহজালালের উপর নির্মম নির্যাতন চালায়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে বিশ^বিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু ছাত্রাবাসের কক্ষ পরিবর্তনকে কেন্দ্র কক্ষে যে ৫ ছাত্রকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে সেখানে উভয় গ্রুপই ছাত্রলীগের সমর্থনকারী। যারা আহত হয়েছে মূলত তাদের দিয়ে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত।
বঙ্গবন্ধু ছাত্রাবাসের প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ছাত্র জানান, মঙ্গলবার সকালে হোস্টেলে ৫০১৪ ও ৫০১৬ নম্বর কক্ষ পরিবর্তন নিয়ে নাভিদ ও সাইদ গ্রুপের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। এর জের ধরে নাভিদ ও সাইদের অনুসারীরা দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়। এক পর্যায় ক্যাম্পাসের মধ্যে বসেই নাভিদ ও তার গ্রুপের লোকজনদের মারধর করে সাঈদ গ্রুপ। সাঈদের পক্ষ নেয়া ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বের হলে নাভিদ গ্রুপের লোকজন মিলে তাদের ধাওয়া করে। এ সময় সাঈদ গ্রুপের লোকজন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। নাভিদ গ্রুপও তাদের পিছু নেয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেক দূরে গিয়ে ৫ ছাত্রকে কুপিয়ে জখম করে নাভিদ গ্রুপের লোকজন।
এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু হলের প্রক্টর ড. সুব্রত কুমার দাস বলেন, মঙ্গলবারের ঘটনায় কোন গ্রুপই দায় এড়াতে পারে না। সবারই কমবেশি দোষ আছে। উপাচার্য বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তিনি বরিশালে এসে সার্বিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
বন্দর থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস শান্ত রয়েছে। হামলার ঘটনায় মামলা দায়ের হলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।