বরিশাল সিটি করপোরেশনে কোন উন্নয়ন বরাদ্দ নেই, বাড়ছে জনদুর্ভোগ

প্রদীপের নীচে না কি অন্ধকার থাকে। প্রদীপের কাজ তো আলো ছড়ানো। কেন মানুষ এমন কথা বলে? আলোর নীচে আবার কোন অন্ধকারে ঢেকে দিচ্ছে। নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে। কি কারণ থাকতে পারে? বরিশালসহ দক্ষিণে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। পদ্মা সেতু, পায়রা সেতুর কাজ শেষ হলে দক্ষিণাঞ্চলে নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে এমন প্রত্যাশা সরকারের পদস্থ মন্ত্রী-আমলাদের। এমন আশার কথা যখন বরিশালে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলছিলেন, তখন উন্নয়ন বঞ্চিত বরিশাল সিটির বাসিন্দারা ব্যাঙ্গ করছে। কারণ এত এত উন্নয়ন যে বরিশালকে ঘিরে, সেই বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকা থেকে যাচ্ছে উন্নয়নের বাইরে। বরিশাল আলোকিত হচ্ছে বলা হলেও সেই মূল বরিশালে আলোর রোশনাই নেই। দিন দিন বরিশাল মহনগরের বাসিন্দাদের জনদুর্ভোগ বাড়ছে। তাই মনে হচ্ছে প্রদীপের নীচে অন্ধকার। এই অন্ধকার দূর করবে কে? এই অন্ধকার দূর করতে সরকারকেই উদ্যোগী হতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বারিশালবাসীর নিবেদন দ্রুত বরিশাল মহানগর উন্নয়ন প্রকল্প ছাড় করা হোক।
অভিযোগ রয়েছে, গত আড়াই বছরেরও বেশি সময় ধরে বরিশাল সিটি করপোরেশন উন্নয়ন প্রকল্প আটকে আছে। বরিশাল সিটি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না। সারা দেশ যখন উন্নয়নের পথে হাঁটছে, তখন বরিশাল কেন থমকে দাঁড়াবে? কেন এই বিমাতাসূলভ আচরণ করা হচ্ছে? কি কারণে বরিশাল সিটি উন্নয়ন প্রকল্প ছাড় পাচ্ছে না সেটা জানতে চায় বরিশালের সাধারণ মানুষ। পদ্মা-পায়রা বন্দরসহ দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের সঙ্গে বরিশাল সিটির উন্নয়ন না হলে সেটা হবে এক চোখ কানা উন্নয়ন। দ্রুত মন্ত্রণালয়ে থাকা বরিশাল সিটি করপোরেশনের সকল প্রকল্প অনুমোদন দিয়ে বরিশালের জনদুর্ভোগ কমাতে উদ্যোগ নেওয়া হোক।
গত ২১ জানুয়ারি বরিশলে এসেছিলেন মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান। বরিশাল সার্কিট হাউস সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জনশুমারি ও গৃহগণনা উপলক্ষ্যে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, ‘দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার জন্য সুদিন আসছে। এক বছরের মধ্যে পদ্মা ও পায়রা সেতুর কাজ শেষ হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে। উন্নয়নে পাল্টে যাবে এই এলাকার চিত্র। দ্রুত উন্নয়ন হবে এই অঞ্চল। ৩০ বছরের মধ্যে গত ১২ বছরে দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। দেশের সার্বিক প্রবৃদ্ধি ১ থেকে ২ ভাগ বেড়ে যাবে। দিন দিন দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ভাঙ্গা থেকে পায়রা সমুদ্র বন্দর পর্যন্ত রেল প্রকল্প অনুমোদন হয়ে আছে। পায়রা বন্দরের প্রয়োজনেই রেল লাইন হতে হবে। মহাসড়কগুলো ফোরলেনে উন্নীত করার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।’ বরিশাল তথা দক্ষিণ জনপদের মানুষ মন্ত্রীর এমন সম্ভাবনার কথায় উদ্বেলিত হয়েছে। হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু ওই সভায় বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়রের আর্তনাদ আমাদের চরম হতাশার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আড়াই বছরে বরিশাল সিটির কোন একটা প্রকল্প অনুমোদন দেয়নি। এটা সেই প্রদীপের নীচে অন্ধকারের কথাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।
মতবিনিময় সভায় বশিাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, ‘বরিশাল সিটি করপোরেশনের বর্তমান পরিষদের আড়াই বছর হতে চলছে। অথচ এখনও পর্যন্ত মন্ত্রণালয় থেকে কোন একটি প্রকল্প ছাড় করা হয়নি। কোন উন্নয়ন বরাদ্দও নেই।’ এটাকে তিনি ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘সারা দেশে উন্নয়ন হচ্ছে। অথচ বরিশাল বিভাগীয় সদরে তেমন উন্নয়ন নেই। উন্নয়নে বরিশালের মেয়র ব্যর্থ হলে শেখ হাসিনা ব্যর্থ হবেন। এর দায়ভার সরকারের।’ তাই বরিশালের মানুষের আশা আকাঙ্খা পূরণে মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া প্রকল্প পাশ করার পাশাপাশি বেশি বেশি করে উন্নয়ন বরাদ্দ দাবি করেন মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ।
গত ১২ বছরে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অবকাঠামোসহ উন্নয়ন নেই এমন এলাকা খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। সেই উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। টেকসই উন্নয়ন হচ্ছে না এমন অভিযোগও হয়তো আছে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে উন্নয়ন কাজ চলামান আছে। মোটাদাগে চারিদিকে তাকালেই চোখে পড়বে উন্নয়ন কাজ। পদ্মা সেতু, পায়রা সেুত, পায়রা বন্দর, সেনানীবাস, কোস্টগার্ড, পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে ভাঙা-বরিশাল-কুয়াকাটা চারলেন সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু হবে। শুরু হবে বহুল প্রত্যাশিত রেল লাইনের কাজও। এত সম্ভাবনা যখন হাতছানি দিচ্ছে বরিশালকে, তখন সেই বরিশালই আবার উন্নয়নের জন্য বিলাপ করে মরছে। এমনটা কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। বরিশাল মহানগরের সাধারণ মানুষের দাবি, সুন্দর নগর বরিশাল দুর্ভোগের নগরীতে রূপ নিতে যাচ্ছে। এই শহর যেন অসুন্দর নগরীতে রূপ না নেয়, সেদিকে দৃষ্টি দিন।
পদ্মা সেতুর সম্ভাবনা, পায়রা বন্দর, ফোরলেন, পর্যটন, রেললাইন যার বুকের ওপর দিয়ে পরশ দিয়ে যাবে সেই বরিশাল মহানগরের দুরাবস্থা চোখে না দেখলে বিশ^াস করা কঠিন হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীসহ সরকারের কাছে কাছে আহ্বান জানাতে চাই, আপনারা বরিশাল মহানগরটা একটু দেখে যান। এটা কি কোন মহানগর না কি কোন প্রত্যন্ত পাড়াগাঁ? সারা দেশে যখন উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে, সেখানে বরিশাল মহানগর কেন বঞ্চিত হবে? এই বৈষম্য দূর করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন বরিশাল মাহনগরবাসীকে হতাশায় ডুবিয়ে দেবে।
কেবল উন্নয়ন প্রকল্প না থাকায় বরিশাল মহানগরের ৯০ ভাগ রাস্তা চলাচলের অনুযোগী হয়ে পড়েছে। কোন কোন সড়কে বিটুমিন উঠে গিয়ে ভেতরের মাটি বের হয়ে এসেছে। এমনও সড়ক আছে যেগুলো দেখলে দূর থেকে ডোবার মত মনে হবে। ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নেও কোন প্রকল্প নেই। নেই পানি শোধণাগার চালুর উদ্যোগ। খাল সংরক্ষণ সংস্কার প্রকল্প ফাইলবন্দী থাকায় একটি ভাগারের নগরীতে রূপ নিচ্ছে এক সময়ের ভেনিস শহর বরিশাল।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দক্ষিণ জনপদে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। উন্নয়ন সম্ভাবনা সভায় আমরা বিলাপ শুনতে চাই না। বাংলা ভেনিস বরিশাল।, ধান, নদী খালের দেশ বরিশাল। অভিবক্ত বাংলার মূখ্যমন্ত্রী শের-ই-বাংলা একে ফজলুল হকের বরিশাল। রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের নগর বরিশাল। মাতৃরূপী কবি সুফিয়া কামালের বরিশাল। মহাত্মা অশি^নী কুমার দত্তসহ অসংখ্য মণিষীর তীর্থভূমি বরিশাল মহানগরের দুরাবস্থা দূর করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিন।