বরিশালে আশানুরূপ ইলিশে সরবরাহ নেই ভরা মৌসুমে

বরিশালে আশানুরূপ ইলিশে সরবরাহ নেই ভরা মৌসুমে

শুরুটা ভালোভাবে শুরু হলেও ভরা মৌসুমে বরিশালে আশানুরূপ ইলিশের সরবরাহ নেই পাইকারি বাজারে। আর পাইকারি বাজারে সরবরাহ কম থাকায় আগের থেকে কিছুটা বেড়েছে ইলিশের দামও।

বিক্রেতাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী গত সপ্তাহর চেয়ে চলতি সপ্তাহে বরিশালের পাইকারি বাজারে মণপ্রতি ইলিশের দাম বেড়েছে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা। আর এর প্রভাব খুচরো বাজারে পড়ায় সমস্যায় পড়েছেন ক্রেতারা। যদিও মৎস্য বিভাগ বলছে, অল্প কিছুদিনের মধ্যে মাছের সরবরাহ বাড়বে, আর তাতেই কমে আসবে মাছের দরও।

শুক্রবার (১০ জুলাই) সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বরিশাল নগরের পোর্টরোডের বেসরকারি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পাইকারি বাজারে ইলিশের আমদানি হয়েছে প্রায় ২০০ মণের মতো। কিন্তু গত সপ্তাহেও হাজার মণের মতো ইলিশ এ বাজারে এসেছে বলে জানিয়েছেন পাইকাররা। হঠাৎ ইলিশের সরবরাহ কমার কারণ জানা নেই ব্যবসায়ীদের।

ইলিশের পাইকারি বিক্রেতা মো. জহির সিকদার বলেন, আষাঢ়-শ্রাবণ, ভাদ্র-আশ্বিন এ চার মাস ইলিশের ভরা মৌসুম। কিন্তু আষাঢ়ের শেষ মুহূর্তে এসে আশানুরূপ ইলিশ সরবরাহ নেই বরিশালে। সপ্তাহখানেক আগে যে পরিমাণ ইলিশ ছিল, এখন তাও নেই। আর সে কারণে ইলিশের দামও কিছুটা বেড়েছে।

এদিকে মৎস্যজীবীরা বলছেন, মৌসুমের শুরুতে মধ্যম সাইজের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে বেশি, সঙ্গে বড় ইলিশেরও দেখা মিলছে। যদিও বর্তমানে নদীতে ইলিশ ধরা পড়ার পরিমাণ শুরুর থেকে কিছুটা কম। আর চলতি ভরা মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় নদী ও সাগর মোহনায় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করায় বেশ উৎফুল¬ ছিলো জেলে ও মৎস্যজীবীরা।

নজরআলী নামে এক জেলে জানান, শুরুতে মেঘনা, কালাবদর, বিষখালী ও সুগন্ধাসহ দক্ষিণাঞ্চলের নদীগুলোতে মৌসুমের শুরু থেকেই ইলিশ ধরা পড়ছে। আকারও বেশ ভালো। তবে আবহাওয়ার কারণে কখনো কম, কখনো বেশি মাছ ধরা পড়ছে।

মৎস্য বিভাগের তথ্যানুযায়ী এ মুহূর্তে কোনো জো (জোয়ার) না থাকায় ইলিশের সরবরাহ কিছুটা কমেছে। আগামী অমবস্যার জোতে সরবরাহ আবার বাড়বে বলে মনে করেন তারা।

বরিশাল জেলা মৎস্য অফিসের কর্মকর্তা (হিলসা) বিমল চন্দ্র দাস জানান, আগামী ২৩ জুলাই সাগরে মাছ ধরার ৬৫ দিনের মেয়াদ শেষ হলে জেলেদের জালে আরো বেশি ইলিশ ধরা পড়বে এবং তখন সরবরাহও বাড়বে। আর সরবরাহ বাড়লে বাজারে মাছের দরও কমতে শুরু করবে। নিষিদ্ধ সময়ে মাছ শিকার না হওয়ায় এখন যা ধরা পড়ছে তার আকার বড় বলে জানিয়েছেন ঝালকাঠি জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বাবুল কৃষ্ণ ওঝা।

শুক্রবার বাজার ঘুরে দেখা গেছে গেছে, চার থেকে ছয় শত গ্রামের ইলিশ প্রতিমণ ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা একসপ্তাহ আগে ছিলো ২০ হাজার টাকা। ৬০০ থেকে ৯০০ গ্রামের ইলিশ ৩১ হাজার টাকায় প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিলো ২৮ হাজার টাকা। এক কেজি ওজনের ইলিশ প্রতিমণ ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও আগে দর ছিলো ৩২ হাজার। এছাড়া এক কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতিমণ শুক্রবার ৩৬ থেকে ৩৮ হাজার টাকা দরে বিক্রি হলেও একসপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৩৪ হাজার টাকা।

উল্লেখ্য, গত ৩০ জুন জাটকা শিকারে আট মাসের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হওয়ায় শুরু হয় ইলিশ মৌসুম। এখন নদ-নদীতে ইলিশ শিকারে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। পাশাপাশি আগামী ২৩ জুলাই সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞাও শেষ হবে। আশা করা হচ্ছে আর কয়েকদিন পরে দক্ষিণাঞ্চলগুলোর মোকামগুলো ইলিশে সয়লাব হয়ে যাবে।