বরিশালে আড়াই কোটি টাকার সিসি ক্যামেরা অকেজো

বরিশালে আড়াই কোটি টাকার সিসি ক্যামেরা অকেজো

বরিশাল মহানগরে স্থাপন করা আড়াই কোটি টাকার ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। ক্যামেরাগুলো স্থাপনের পর একদিনও ব্যবহার হয়নি। মরিচা পড়ে অনেকটা ব্যবহার অনুপযোগী অবস্থায় সেগুলে ঝুলছে সড়ক থামের সঙ্গে। ২০১৬ সালে মহানগরের নিরাপত্তায় স্থাপন করা ক্যামেরাগুলো কোন কাজেই আসছে না।

২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যায়ে ওই সিসি ক্যামারেগুলো স্থাপন করেছে বরিশাল সিটি করপোরেশন। ক্যামেরাগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য মহানগেরর বিভিন্ন স্থানে আটটি বুথ নির্মাণ করা হয়েছে। ক্যামেরা এবং বুথগুলো অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের রাজাবাহাদুর সড়ক, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বান্দ রোড, বঙ্গবন্ধু উদ্যান, আমতলা মোড়সহ বিভিন্ন সড়কে স্থাপন করা সিসি ক্যামেরা বন্ধ অবস্থায়ই রয়েছে। ক্যামেরাগুলোতে ধূলা পড়ে আছে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষসহ ক্যামেরাগুলো অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে।

বরিশাল সিটি করপোরেশন জানায়, ২০১৫ সালে স্বরস্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণায় মহানগরের নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও স্থাপনায় ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। ওই নিদের্শনার পর বশিাল মহানগরের নিরাত্তা নিশ্চিত করতে বরিশাল সিটি করপোরেশন একটি প্রকল্প তৈরি করে। ২০১৫ সালের শেষের দিকে ২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই প্রকল্পের আওতায় মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থানে ২৬১টি সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ শুরু হয়। ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময় ক্যামেরা স্থাপন কাজ শেষ হয়। ক্যামেরাগুলো পরিচালনা এবং রক্ষাণাবেক্ষণের জন্য ৮টি বুথ নির্মাণ করে সিটি করপোরেশন। তখন বরিশাল সিটি করপোরেশন এবং মেট্রোপলিটন পুলিশ কমশিনার কার্যালয়ে দুটি মনিটর স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় ক্যামেরাগুলো তখন চালু করা সম্ভব হয়নি।

অভিযোগ উঠেছে, তখনকার সিটি মেয়র আহসান হাবিব কামালের সময় বরিশাল মহানগরের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। প্রথমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। ২০১৭ সালে বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে সংযোগ দেওয়া হলেও করপোরেশন সিসি ক্যামেরা পরিচালনায় কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। তখনকার বরিশাল মেটোপলিটন পুলিশ কমিশনার এসএম রুহুল আমিন একাধিকবার অনুরোধ করেও ব্যর্থ হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত ২৬১ ক্যামেরা অকেজো অবস্থায়ই পড়ে থাকে।

এব্যাপারে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান ভোরের আলোকে বলেন, বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় ২৬১টি ক্যামেরা স্থাপন করেছিল সিটি করপোরেন। ক্যামেরাগুলো নিয়ন্ত্রণে আমদের কার্যালয়ে একটি মনিটর স্থাপনের কথা ছিল কি না আমার জানা নেই। তবে আমরা ক্যামেরাগুলো নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব চেয়েছিলাম। তারা রাজিও হয়েছিল। কিন্তু কাজ করতে গিয়ে দেখো গেছে ওই ক্যামেরাগুলোর বেশিরভাগ সচল নেই। করপোরেশনের আইটি বিভাগ সেগুলো সচল করে দেওয়ার কথা বলেছে। তবে এখনো সেগুলো আমরা পাইনি। আমরা নিজস্ব উদ্যোগে ৩০-৪০টি ক্যামেরা স্থাপন করেছি। বর্তমানে মহাসড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আরো কিছু ক্যামেরা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে করপোরেশনের বিশালসংখ্যক ক্যামেরা সচল থাকলে নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারতো।

মহানগরের সিসি ক্যামেরার দায়িত্বে থাকা বরিশাল সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী ওমর ফারুক বলেন, ২০১৬ সালে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ শেষ হয়। ক্যামেরাগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য নগরের সরকারি বালিকা বিদ্যালয় সম্মুখে, নাজিরের পুল, চৌমাথা, আমতলার মোড়, জেলা ও দায়রা জজ বসাভবনের সম্মুখ, মুক্তিযোদ্ধা পার্ক, নগর ভবন, এনেক্স ভবনের সামনে আটটি বুথ নির্মাণ করা হয়। তখন বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে জটিলতার কারণে ক্যামেরাগুলো চালু করা সম্ভব হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে চালু না হওয়ায় সেগুলোতে ধূলাবালি পড়ে আছে। বর্তমান মেয়র সিসি ক্যামেরা চালুর জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। বিষয়টি আইটি বিভাগকে বলা হয়েছে। ক্যামেরাগুলোতে যে সমস্যা আছে সেগুলো সমাধান করে চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।