বরিশালে ছেলে হত্যা মামলায় ৩ জনের যাবজ্জীবন

বরিশালে ছেলে হত্যা মামলায় ৩ জনের যাবজ্জীবন


বরিশালে মায়ের অবৈধ সম্পর্ক দেখে ফেলায় ৫ম শ্রেণিতে পড়–য়া ছেলেকে হত্যা করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ৩ জনের জাবজ্জীন কারাদ- দিয়েছে আদালত। বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার কাজীরচর থানার পশ্চিম রতনপুর গ্রামে রনি দুয়ারী নামে এক শিশুকে হত্যার দায়ে মা ও তার দুই পরকীয়া প্রেমিককে যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেক আসামিকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

সোমবার দুপুর ১২টার দিকে বরিশালের জননিরাপত্তা বিঘœকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক কে এম শহীদ হোসেন এই রায় ঘোষণা করেন। 
দ-প্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন-নিহত শিশু রনির মা কনা বেগম এবং তার দুই পরকীয়া প্রেমিক রুহুল আমিন নলি ও শাহীন নলি। শাহীন কনা বেগমের আপন চাচাতো ভাই এবং রুহুল আমিন দ-প্রাপ্ত শাহীন নলির বন্ধু।
তারা সকলে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার কাজীরহাট থানাধীন পশ্চিম রতনপুর এলাকার বাসিন্দা। রায় ঘোষণার সময় কনা বেগম ও রুহুল আমিন নলি ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। তবে শাহীন নলি পলাতক ছিলেন।

২০১৩ সালে ওই হত্যাকা-ের সময় নিহত রনি দুয়ারী স্থানীয় কাজীরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ছিল।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, কনা বেগমের স্বামী লকিতুল্লাহ দুয়ারী চট্টগ্রামের চাকতাই এলাকায় দিন মজুরের কাজ করতেন। তার অবর্তমানে কনা বেগমের সঙ্গে চাচাতো ভাই শাহীন নলির পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বাসায় যাতায়াতের সুবাদে এক পর্যায়ে শাহিনের বন্ধু রুহুল আমিনের সঙ্গেও কনা বেগমের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি লকিতুল্লাহসহ তাদের আত্মীয়-স্বজনদের জানায় শিশু রনি। এতে তার উপর কনা ও তার দুই পরকীয়া প্রেমিক শাহীন ও রুহুল আমীন ক্ষিপ্ত হন। 

২০১৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টার দিকে কনার বাসায় প্রথমে শাহীন নলি ও পরে রুহুল আমীন নলি পর্যায়ক্রমে কনার সঙ্গে দৈহিক সম্পর্কে মিলিত হয়। রনি দুয়ারী ঘরে ঢুকে তার মাকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে চিৎকার করে এবং পুরো ঘটনা তার বাবার কাছে বলে দেওয়ার হুমকি দেয়।
এ সময় কনা এবং তার দুই পরকীয়া প্রেমিক শাহীন ও রুহুল আমীন রনির হাত-পা চেপে ধরে গলায় রশি পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে রনিকে সাপে কেটেছে অপপ্রচার চালিয়ে দ্রুত তার লাশ দাফনের প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু রনির গলায় বৃত্তাকার দাগ দেখে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ রনির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে।

এ ঘটনায় পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি রনির বাবা লতিকুল্লাহ দুয়ারী বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে মেহেন্দিগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ রুহুল আমীনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দী দেন। 
মামলা তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক ২০১৪ সালের ১৯ জুন কনা, শাহীন ও রুহুল আমীনকে অভিযুক্ত করে আদালত এই মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন। গতকাল সোমবার দুপুরে আদালতের বিচারক রায় ঘোষণা করেন।