বরিশালে দুই শিক্ষকের ফাঁদে সহকর্মী, লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

বরিশালে দুই শিক্ষকের ফাঁদে সহকর্মী, লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

বরিশালে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক খুরশিদা আক্তার হ্যাপি এবং প্রধান শিক্ষক মো. সিদ্দিকুর রহমানের প্রতারণার ফাঁদে পরে নিঃস্ব হচ্ছেন সহকর্মী এবং স্থানীয় বাসিন্দারা। চাকুরী দেওয়া, জমি বিক্রি, ধারসহ নানা অজুহাতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তারা। সবশেষ একটি চেক জালিয়াতি মামলায় খুরশিদা আক্তার হ্যাপিকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। প্রভাবশালী হওয়ায় ধরাছোঁয়ার বাইরে আছেন প্রধান শিক্ষক।

বরিশালের মুলাদী উপজেলার ৯৩ নম্বর পশ্চিম কমিশনার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মিনারা আক্তার লিপির দায়ের করা চেক প্রতারণা মামলায় খুরশিদা আক্তার হ্যাপিকে কারাগারে পাঠায় আদালত। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ওই মামলায় আদালতে হাজির হলে আদালতের বিচারক পলি আফরোজ তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

ভুক্তোভগীদের অভিযোগ, মুলাদী উপজেলায় কান পাতলেই ৯৩ নম্বর পশ্চিম কমিশনার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খুরশিদা জাহান হ্যাপির প্রতারণার কাহিনী শোনা যাবে। কখনো ধার, কখনো জমি বিক্রি আবার কখনো বা সন্তানদের চাকুরী দেওয়ার নাম করে লাখ লাখ টাকা হাতেয়ে নিয়েছেন হ্যাপী। কখনো সহকর্মীর কাছ থেকে আবার কখনো শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের কাছ থেকে তিনি টাকা নিয়েছেন। বিভিন্ন সময় ১ লাখ, দুই লাখ, ৩ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন তিনি। টাকা নেওয়ার পর অনেক পাওনাদার বিদ্যালয়ে এসে তাগাদা দিতেন। সেই কারণে তিনি বিদ্যালয়ে এসে স্বাক্ষর দিয়েই সটকে পরতেন। এই কাজে তাকে সহযোগিতা দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক মো. সিদ্দিকুর রহমান। খুরশিদা জাহান হ্যাপি কেবল নারী শিক্ষক হওয়ার সুযোগ নিয়েছেন বারবার। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং সহকারি শিক্ষক হ্যাপি স্থানীয় ও প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। উল্টো তারাই সবাইকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে চলছে। সবশেষে সহকর্মীর দায়ের করা মামলায় তাকে কারাগারে যেতে হয়েছে।

গতকাল বৃহষ্পতিবার চেক প্রতারণা মামলার বাদি এবং ৯৩ নম্বর পশ্চিম কমিশনার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মিনারা আক্তার লিপি ভোরের আলোকে জানান, প্রায়দিনই দেখতাম স্কুলে কোন না কোন পাওনাদার এসে খুরশিদা জাহান হ্যাপির কাছে পাওনা টাকা চাইতো। ২০১৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর খুরশিদা জাহান হ্যাপি মিনারা আক্তারের গ্রামের বাড়ি এসে কয়েক দিনে জন্য তাকে টাকা ধার দিতে অনুরোধ করেন। বিশেষ অনুরোধ করায় এবং সহকর্মী হওয়ায় হ্যাপিকে তিনি ৩ লাখ টাকা দেন। অনেকদিন ধারের টাকা চাইলেও তিনি তা পরিশোধ করেননি। পরে একই বছর  ৫ ডিসেম্বর খুরশিদা জাহান হ্যাপি মিনারাকে ৩ লাখ টাকার একটি চেক দেন। কিন্তু ব্যাংক চেকটি ডিজঅনার করে। পরে চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি একটি চেক প্রতারণ মামলা দায়ের করেন তিনি। এ মোমলায় ওয়ারেন্ট জারি হলে আসামী পালাতক থাকেন। গত মঙ্গলবার ১৫ সেপ্টেম্বর বরিশাল আদালতে হাজির হয়ে আত্মসমাপর্ণ করে জামিন আবেদন করলে আদালত জামিন না মঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করার নির্দেশ দেন।

মুলাদী উপজেলার কাজিরচর ইউনিয়নের মুকুল বেগম অভিযোগ করেন, শিক্ষক খুরশিদা আক্তার হ্যাপি ৩ বছর আগে তার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়েছেন। জমি বিক্রি করার কথা বলে ওই টাকা তিনি নিয়েছেন। পরে জমিও দেননি টাকাও দেননি। প্রধান শিক্ষক তার সঙ্গে থাকায় এবং স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় উল্টো হুমকী-ধামকী দিয়ে বেড়ায়।

বাবুগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা বকুল বেগম বলেন, ২০১৭ সালে শিক্ষক খুরশিদা আক্তার হ্যাপি ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা ধার নিয়েছেন। তারপর থেকে টাকা দেই দিচ্ছি বলে ঘোরাচ্ছে। তার সঙ্গে স্কুলের প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকও জড়িত। পরে আবার আমার ছেলে-মেয়েদের চাকুরী দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়েছে। টাকা না দেওয়া ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে ৫টা নোটিশ দিয়েছে চেয়ারম্যান। একবারও হাজির হননি। আমি ছাড়াও তার কাছে অনেকে টাকা পাবে। আমরা স্কুলে গিয়ে টাকা চাইলে হ্যাপি এবং প্রধান শিক্ষক সিদ্দিক মাস্টার আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতো।

ইউনিয়নের প্যাদারহাট গ্রামের বাসিন্দা সালমা বেগম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২০১৮ সালে শিক্ষক হ্যাপি এবং প্রধান শিক্ষক সিদ্দিক সরকারি চাকুরী দেবে বলে আমার কাছ থেকে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা নিয়েছেন। চাকুরীও হয়নি আর টাকাও ফেরত পাইনি। স্কুলে গিয়ে টাকা চাইলে উল্টো হুমকী দিতো।

তার বিরুদ্ধে আরও একাধিক মামলা বরিশাল আদালতে চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতারণার শিকার একাধিক ব্যক্তি। বরিশাল আদালতে প্রতারণার মামলা নম্বর সিআর ৫৬/২০. চেক প্রতারণা (এনআই অ্যাক্ট) ৭৫/২০, সরকারি প্রতিষ্ঠান পল্লী দারিদ্র বিমোচন সংস্থা মুলাদী কর্তৃক এনআই অ্যাক্ট ১০৯। এ ছাড়ার স্থানীয় অনেক পাওনাদার রয়েছে।