বরিশালে বেরসকারি ক্লিনিক ডাগায়গনস্টিকের নেই যথাযথ কাগজপত্র : তথ্য হালনাগাদে মাঠে স্বাস্থ্য বিভাগ
বরিশালে অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক ডাগায়গনস্টিকের যথাযথ কাগজপত্র নেই। বেশিরভাগ স্বাস্থ্যসেবার প্রতিষ্ঠান কেবল আবেদন জমা দিয়েই বছরের পর বছর হাসপাতাল-ক্লিনিক ডাগায়গনস্টিক পরিচালনা করছে। সারা দেশে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে তোলাড় সৃষ্টি হলে নড়েচরে বসে স্বাস্থ্য বিভাগ। এর প্রেক্ষিতে বরিরশাল স্বাস্থ্য বিভাগ হাসপাতাল-ক্লিনিক ডাগায়গনস্টিকের তথ্য হালনাগাদে মাঠে নেমেছে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, বরিশাল সিটি করপোরেশনসহ বিভাগের ৬ জেলা এবং এর অন্তর্গত বিভিন্ন উপজেলায় স্বাস্থ্য বিভাগে নিবন্ধনকৃত (আবেদনকৃত) হাসপাতাল-ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক-ল্যাব রয়েছে ৯৬১টি। এর মধ্যে ২৯৭টি হাসপাতাল-ক্লিনিক ডাগায়গনস্টিক-ল্যাবের কাগজপত্র হালনাগাদ আছে। বাকী ৬৬৪টি হাসপাতাল-ক্লিনিক ডাগায়গনস্টিক-ল্যাবের যথাযথ কাগজপত্র নেই। এদের মধ্যে অনেকেই কেবল আবেদন জমা দিয়ে বছরের পর বছর ধরে ব্যবসা করছেন। তবে স্বাস্থ্য বিভাগে আবেদন (নিবন্ধনভুক্ত নয়) জমা দেয়নি এমন হাসপাতাল-ক্লিনিক ডাগায়গনস্টিক-ল্যাবের পরিসংখ্যান নেই স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে।
অভিযোগ আছে সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজসে এসব হাসপাতাল-ক্লিনিক ডাগায়গনস্টিক-ল্যাবের মালিকরা সম্ভাব্য বিপদ থেকে বাঁচতে নামমাত্র একটি আবেদন জমা দিয়ে রাখেন। বিনিময়ে প্রতিমাসে তাদের কাছ থেকে মাসোহারা পেয়ে থাকেন সিভিল সার্জন অফিসের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বরিশাল বিভাগের বেসরকারি ক্লিনিক-হাসপাতাল ডায়াগনস্টিক-ল্যাবের তথ্য হালনাগাদ করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। আগে বরিশাল সিটি করপোরেশনসহ বিভাগের ৬ জেলা এবং ৪০ উপজেলায় ক্লিনিক-হাসপাতাল ডায়াগনস্টিক-ল্যাবের কোন তথ্য ছিলো না স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নানা কর্মকান্ডে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয়।
বরিশাল বিভাগের সকল ক্লিনিক-হাসপাতাল ডায়াগনস্টিক-ল্যাবের তথ্য হালনাগাদ করতে সিটি করপোরেশন এলাকায় সহকারী স্বাস্থ্য পরিচালককে (রোগ নিয়ন্ত্রণ) প্রধান করে এবং ৬ জেলায় সিভিল সার্জনদের প্রধান করে পৃথক ৭টি কমিটি গঠন করেন স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয়।
জানা যায়, বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় নিবন্ধনকৃত ক্লিনিক-হাসপাতাল রয়েছে ৩৯টি। এর মধ্যে মাত্র ১১টির কাগজপত্র পুরোপুরি বৈধ। একইভাবে সিটি এলাকায় নিবন্ধনকৃত ১১৬টি ডায়াগনস্টিক-ল্যাবের মধ্যে অনুমোদন রয়েছে মাত্র ২৮টির।
অন্যদিকে বরিশাল জেলায় নিবন্ধনকৃত ৫৩টি ক্লিনিক-হাসপাতালের মধ্যে ২৭টি ও ১৪৬টি ডায়াগনস্টিক-ল্যাবের মধ্যে ৬২টি, ভোলা জেলায় ৩১টি ক্লিনিক-হাসপাতালের মধ্যে ১২টি ও ৮৭টি ডায়াগনস্টিক-ল্যাবের ৪৬টি, পটুয়াখালী জেলায় ৫৩টি হাসপাতাল-ক্লিনিকের মধ্যে ১২টি ও ১৬৭টি ডায়াগনস্টিক-ল্যাবের মধ্যে ৩০টি, বরগুনায় ২৪টি হাসপাতাল-ক্লিনিকের মধ্যে ৮টি ও ৬০টি ডায়াগনস্টিক ল্যাবের মধ্যে ১৮টি, পিরোজপুরে ৪৬টি ক্লিনিক-হাসপাতালের মধে ১৫টি ও ৯৪টি ডায়াগনস্টিক-ল্যাবের মধ্যে ১৭টি এবং ঝালকাঠী জেলায় ১৪টি হাসপাতাল-ক্লিনিকের মধ্যে ৩টি ও ৩১টি ডায়াগনস্টিক-ল্যাবের মধ্যে ৮টি নিবন্ধিত।
এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেনি এমন কয়েক হাজার হাসপাতাল-ক্লিনিক ডাগায়গনস্টিক-ল্যাব রয়েছে বরিশাল বিভাগে। তবে এর কোন পরিসংখ্যান নেই স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে।
বরিশাল নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সাইফুর রহমান মিরণ বলেন, অননুমোদিত ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিকে জনগণ প্রতারিত হয়। এর বিরুদ্ধে অনেক আগেই সরকারের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিলো। অননুমোদিত হাসপাতাল-ক্লিনিক ডাগায়গনস্টিক-ল্যাবের মধ্যে যারা বৈধতা পাওয়ার যোগ্য তাদের দ্রুত বৈধতা দিয়ে অন্যগুলোকে বন্ধ করার জন্য সরকারকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিবচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস বলেন, বিভাগের সব জেলায় অননুমোদিত হাসপাতাল-ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক-ল্যাবের হালনাগাদ তালিকা করার জন্য পৃথক কমিটি করে দেয়া হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর স্থানীয় প্রশাসন এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় অবৈধ সকল হাসপাতাল-ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক-ল্যাব বন্ধ করে দেয়া হবে।