বরিশালে মেয়র-ইউএনও’র ভোট কেন্দ্রের ভিডিও ভাইরাল

বরিশালে মেয়র-ইউএনও’র ভোট কেন্দ্রের ভিডিও ভাইরাল

বরিশাল জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিতে গিয়ে জিলা স্কুল কেন্দ্রের দায়িত্বরত সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েছেন সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক সাদিক আবদুল্লাহ। গতকাল সোমবার সকাল ৯টা ৫ মিনিটের দিকে জিলা স্কুল কেন্দ্রের ১ নম্বর কক্ষের সামনে এই বাদানুবাদের ঘটনা ঘটে। সিটি মেয়রের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে এই বাদানুবাদ প্রচার হয়। কয়েক ঘন্টার মধ্যে ওই ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়। দুপুর পৌঁনে ২টা নাগাদ ১ লাখ ৬১ হাজার ভিও হয় ওই লাইভে। 

লাইভ ভিডিওতে দেখা যায়, সকাল ৯টায় জিলা স্কুল কেন্দ্রে প্রবেশ করেন মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। তার সাথে ছিলেন জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু, সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র গাজী নাইমুল হোসেন লিটু ও রফিকুল ইসলাম খোকন, ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ সাইয়েদ আহম্মেদ মান্না, ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কেফায়েত হোসেন রনি এবং চরবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহাতাব হোসেন সুরুজ এবং ব্যক্তিগত ২ জন কর্মচারী। জিলা স্কুলের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশের সময় দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা মেয়রকে ভোটার ব্যতিত কাউকে ভেতরে না নিয়ে যেতে অনুরোধ করেন। এ সময় মেয়র বলেন, ভোটার ব্যতিত কাউকে ঢুকতে দিয়েন না প্লিজ। এটা আমারও কথা। 

এক নম্বর ভোট কক্ষের সামনে যাওয়া মাত্র সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. নুরুল আলম মেয়রের কানের কাছে এগিয়ে তার নিজের পরিচয় দিয়ে কিছু একটা বলার আগেই মেয়র বলেন, এখানে যা আছে সবাই ভোটার। এ পর্যায়ে নির্বাচন কর্মকর্তা মেয়রকে সিঙ্গেল সিঙ্গেল (একে একে) কক্ষের মধ্যে ঢুকে ভোট দেয়ার অনুরোধ করেন। এ সময় মেয়র বলেন, এখানে যা আছে সবাই ভোটার। 

মেয়র ভোট কক্ষে প্রবেশের আগে দরজার সামনে দাড়িয়ে থাকা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান প্লিজ বলে কিছু একটা বলার চেস্টা করেন। এ সময় মেয়র ইউএনও’কে লক্ষ্য করে বলেন, আমি তো জানি। এখানে সবাই ভোটার। কেন প্লিজ প্লিজ করতেছেন ! বিরক্ত হয়ে দরজার সামনে দাড়িয়ে থাকা মেয়র বলেন, আমি কি ঢুকছি ভিতরে, আমি কি ঢুকছি ? কেন সিনক্রিয়েট করেন আপনারা এখানে ? তখন মেয়র বলেন, আপনি কে এখানে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজের পরিচয় দেয়ার পর মেয়র বলেন, আমি কি ভিতরে ঢুকছি নাকি। আপনারা তারপরও কথা বলতেছেন। কি বলবেন আপনারা। আমি কি বাঁচ্চা শিশু নাকি। স্টুপিডের মতো কথা বলেন। এতে হতভম্ব হয়ে পড়েন ইউএনও। কিছুক্ষন চুপ থাকার পর মেয়র আবার বলেন, আমরা মনে হয় দল কইর‌্যা আসতেছি আপনারা যেমন ভাবটা করেন। এখানে ভোটার হলো ১৭৪ জন। সমস্যা কোথায় আপনাদের। এ পর্যায়ে ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইয়্যেদ আহমেদ মান্না ইউএনওকে লক্ষ্য করে বলেন, এরা সবাই ভোটার আপনি মনে হয় চেনেন না। আপনি মনে হয় বরিশালে নতুন। এ সময় মেয়র বলেন, সব কাউন্সিলর। এ পর্যায়ে মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি নিজেকে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং অন্য জনপ্রতিনিধিদের পরিচয় দেন। এ সময় ইউএনও বলেন, স্যার আমি ওসব কিছু বলিনাই। এ কথা শুনে মেয়র আবার বলেন, তাহলে কি বলতেছেন। আমি কি ভিতরে ঢুকছি ? কেন্দ্রের আসার পর থেকেই একেক জন বলতেছেন বুঝলাম না। ফাইজলামি করেন নাকি আপনারা। ইউএনও আবারও বলেন, স্যার আমি ওভাবে কিছু বলিনি। তিনি কিছু একটা বোঝানোর চেস্টা করেন মেয়রকে। মেয়র দরজার সামনে দাড়িয়ে আবারও বলেন, আমি কি ভিতরে ঢুকছি ? কানে শোনেন না কথা। কিছুক্ষন নিরব থাকার পর মেয়র ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলেন, ৯টার সময় ভোট শুরু হওয়ার কথা। এখন ৯টা ৫ বাজে। কাউন্সিলর মান্না কাউকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ভিডিও করতেছেন কেন ? মেয়র বলেন ভিডিও করুক না। পরে তিনি একা কক্ষে ঢুকে ভোট দেন। 

মেয়রের ফেসবুক আইডি’র লাইভে এই ভিডিও ক্লিপ মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। দুপুর পৌনে ২টার মধ্যে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ ওই ক্লিপ ভিউ করেন। বিষয়টি এখন বরিশালের ‘টক অব দ্যা সিটিতে’ পরিনত হয়েছে। 

এর আগে ২০২০ সালের ১৮ আগস্ট সদর উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনিবুর রহমানের সাথে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ঝামেলা হয়। ওইদিন পুলিশের গুলিতে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আওয়ামী লীগের অন্তত ৩০ জন আহত হয়। এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসন এবং সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি ৪টি মামলা হয়। পরে সরকারের উচ্চ মহলের নির্দেশে ওই ঘটনার সমঝোতা হয় উভয় পক্ষের। যা তখন দেশব্যাপী আলোচনায় ছিলো।