বরিশালে রেল আসছে, থাকবে ১২টি স্টেশন

বরিশালে রেল আসছে, থাকবে ১২টি স্টেশন


দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে যাচ্ছে বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চল। সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তে এরইমধ্যে ভাঙ্গা থেকে পায়রা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় বরিশাল হয়ে ভাঙ্গা থেকে পায়রা পর্যন্ত রেল লাইনের জন্য বিশদ নকশা এবং টেন্ডার ডকুমেন্ট প্রস্তুতির পাশাপাশি সম্ভাব্যতা অধ্যয়নের কাজ শুরু করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
যার অংশ হিসেবে বিষয়টি নিয়ে বুধবার (২৮ আগস্ট) সকালে ভূমি অধিগ্রহণে সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে মতবিনিময় করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সহযোগী পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড ডিজাইন কনসালটেন্ট এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। যেখানে উপস্থিত ছিলেন- পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক (সিনিয়র কনসালটেন্ট) আখতারুল ইসলাম খান ও জুনিয়র কনসালটেন্ট আহসান আলী জহিরসহ রেলপথ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ।
ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড ডিজাইন কনসালটেন্ট জুনিয়র কনসালটেন্ট আহসান আলী জহির জানান, ভাঙ্গা থেকে পায়রা পর্যন্ত ২১২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হবে। যে রেলপথ ৩২৮ ফটু প্রশস্থ জায়গার মাঝখান দিয়ে নির্মিত হবে। প্রথম পর্যায়ে রেলপথটি হবে সিঙ্গেল লেনের। তবে ৩২৮ ফুট বা ১শ মিটার প্রশস্থ জায়গা থাকায় পরবর্তীতে এখানে ডাবল লেনেরও রেলপথ তৈরি করা যাবে। সে ক্ষেত্রে নতুন করে ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে না।
তিনি আরো জানান, ভাঙ্গা থেকে পায়রা পর্যন্ত রেলপথটি বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী ও বরগুনাসহ ৭টি জেলার মধ্য দিয়ে যাবে। এখানে থাকবে ১২টি প্রধান রেল স্টেশন। এর মধ্যে শুধু বরিশাল নগরীসহ জেলায় থাকবে তিনটি। এরমধ্যে একটি বরিশাল এয়ারপোর্ট এলাকায়, একটি বরিশাল নগরীর ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাশিপুর এলাকায় এবং অপরটি বাকেরগঞ্জ উপজেলায়।
এছাড়া বরিশাল জেলার মধ্যবর্তী স্থান ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া এলাকায় আরো একটি স্টেশন থাকবে। যদিও ১২টি প্রধান স্টেশনের বাহিরে আরো কিছু সাব স্টেশনও থাকবে। তবে সাব স্টেশনের সংখ্যা এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। তাছাড়া পরবর্তীতে প্রধান স্টেশনের সংখ্যা আরো সংযোজন-বিয়োজন হতে পারে বলে জানিয়েছেন আহসান আলী জহির।
তিনি বলেন, ২১২ কিলোমিটারের রেলপথের মধ্যে থাকবে আড়াইশটি নতুন ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। যেগুলো সবই হবে সিঙ্গেল লেন এর। এর মধ্যে বড় অর্থাৎ ১শ মিটার করে ৮টি ব্রিজ থাকবে। বাকিগুলো এর থেকে ছোট আকারের হবে।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র কনসালটেন্ট আখতারুল ইসলাম খান বলেন, রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে ৯ মাস পূর্বে। এরমধ্যেই রেলপথ নির্মাণের সম্ভাব্য ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। ম্যাপ নিয়ে বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে কাজ চলছে। রেলপথ নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণে সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে মতবিনিময় করা হচ্ছে।
এর অংশ হিসেবে বুধবারে বরিশাল নগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের মালেক মাঝির বাড়ির উঠানে মতবিনিময় সভা হয়। সেখানে সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্তদের ভূমি অধিগ্রহণ সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত এবং সমাধানের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়। এসময় স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরও উপস্থিত ছিলেন। ভূমি অধিগ্রহণ, মাঠপর্যায়ে জরিপ ও সকল আনুষাঙ্গিক কার্যক্রম শেষে দরপত্র আহবান করা হবে।
তিনি বলেন, এ প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। তবে রেলপথ নির্মাণের জন্য এখনো দুটি স্ট্যাডি বাকি আছে, যা রেলপথ মন্ত্রণালয়সহ তিনটি দেশি ও বিদেমি সহযোগী পরামর্শক প্রতিষ্ঠান একসাথে কাজ করছে। সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করে প্রকল্প বাস্তবায়নে ৫ বছর সময় লাগতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।
তিনি আরো বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে অনেকেরই ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। যার মধ্যে কবরস্থান, মসজিদসহ ধর্মীয় উপাসনালয় ভেঙে ফেলা, জমির সঠিক মূল্য না পাওয়াসহ নানান বিষয় রয়েছে। এ নিয়ে চিন্তিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে আখতারুল ইসলাম খান বলেন, যে জমিতে কবরস্থান রয়েছে সেটা স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা হবে। আর বিকল্প মসজিদ নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত পুরাতন মসজিদ বা উপাসানালয় ভাঙা হবে না। এক্ষেত্রে জমির মূল্য পরিশোধ ব্যতীত আনুষাঙ্গিক খরচ প্রকল্প থেকেই ব্যয় করা হবে। পাশাপাশি যারা বাণিজ্যিকভাবে বাসা ভাড়া দিয়ে আয় করছেন, তাদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টিও সেভাবেই নির্ধারণ করা হবে।