আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা খাতে ২৯ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যা গত বছরের থেকে ৩ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা বেশি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ২৫ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০১৯-২০১২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন।
প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়, মানসম্মত মাধ্যমিক শিক্ষার সম্প্রসারণেও সরকার নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান, অনগ্রসর এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ, দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপবৃত্তি প্রদান ইত্যাদি অন্যতম। মাধ্যমিক শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে ৫ বছর মেয়াদে মাধ্যমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। এর আওতায় ছাত্রছাত্রীদের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত শিক্ষায় অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
প্রস্তাবিত বাজেটে আরো বলা হয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২ লাখ ৬৭ হাজার শিক্ষককে গত দুই অর্থবছরে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১ লাখ ৩ হাজার শিক্ষক এবং আইসিটি বিষয়ে ৩ লাখ ১৩ হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষণ প্রদানের কার্যক্রম চলছে। অনগ্রসর এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫৮০টি শেণিকক্ষে নির্মাণ করা হয়েছে এবং চলতি বছরে ৩৫০ টি শেণিকক্ষ নির্মাণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ই-বুকের প্রচলন, উপজেলা আইসিটি ট্রেনিং ও রিসোর্স সেন্টার স্থাপন, ৩১৫ টি উপজেলায় ১টি করে বেসরকারি বিদ্যালয়কে মডেল বিদ্যালয়ে রূপান্তর এবং ৩২ হাজার ৬৬৭ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণ ও গুণগত উৎকর্ষ সাধনে এই বাজেট সক্রিয় বলে জানানো হয় বাজেট প্রস্তাবে। প্রস্তাবে বলা হয়, সুযোগ বঞ্চিত দরিদ্র মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে স্নাতক (পাস) ও সমমান পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপবৃত্তি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে টিউশন ফির অর্থ প্রদান করা হচ্ছে। এখাতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২ লক্ষ ২১ হাজার শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও মাধ্যমিক পর্যায়ের ১৮ কোটি ১৩ লক্ষের বেশি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে ১ কোটি ২৫ লাখ ছাত্রছাত্রীর মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।
এছাড়াও শিক্ষকদের আর্থিক সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অধীনে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া ১৮-১৯ অর্থবছর থেকে মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বৈশাখী ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। শিক্ষা ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষা কার্যক্রমে ইনোভেশন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম, নিবন্ধন, প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন, পরীক্ষার ফল প্রকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করায় সংশ্লিষ্টদের হয়রানি লাঘব হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশেষ অনুদান প্রদানের আবেদন অনলাইনের মাধ্যমে গ্রহণ এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ বিতরণ করা হচ্ছে।
প্রস্তাবে মাধ্যমিক শিক্ষা অবকাঠামো নির্মাণ ও শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ নিয়ে বলা হয়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে শুধুমাত্র মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা খাতে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা বর্তমান ২০১৮-১৯ অর্থবছরে উন্নয়ন বরাদ্দের তুলনায় ৫৪ শতাংশ বেশি। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের আওতায় ১ হাজার ৫০০টি বেসরকারি কলেজ ও ৩ হাজার বেসরকারি স্কুলের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের জুনের মধ্যেই সমাপ্ত হবে। সারাদেশে ২৬ হাজার ২০০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৪৮ হাজার ৯৪৭টি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, ২০০টি ল্যাংগুয়েজ কাম আইসিটি ল্যাব, ১ হাজারটি সায়েন্স ল্যাব, ২১২০টি স্মার্ট ক্লাসরুম, ৪৬ টি হোস্টেল নির্মাণ করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দেশে ১২৫টি উপজেলায় আইসিটি ট্রেনিং এন্ড রিসোর্স সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে আরও ১৬০টি উপজেলায় তা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ চলছে।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভৌত অবকাঠামো ও অন্যান্য সুবিধা সৃষ্টির জন্য ৪২টি প্রকল্পে, ১৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ হবে। এছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসাবে পাঁচটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এটি দেশের ৪৮তম, আওয়ামী লীগ সরকারের ১৯তম এবং বর্তমান অর্থমন্ত্রীর প্রথম বাজেট প্রস্তাব। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট এটি।