বরিশালে ২৪ হাজার রিক্সা ও অটোরিক্সা, দিনে চার্জ ৯৬ হাজার কিলোওয়াট বিদ্যুৎ

ব্যাটারী চালিত ২৪ হাজার রিক্সা ও অটোরিক্সা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বরিশাল মহানগরীতে। এসব রিক্সার ব্যাটারী চার্জ দিতে প্রতিদিন ৯৬ হাজার কিলোওয়াট (ইউনিট) বিদ্যুত খরচ হয়। ব্যাটারী চার্জিংয়ের অনুমোদিত পয়েন্ট না থাকলেও ব্যক্তি মালিকরা এসব রিক্সার ব্যাটারী চার্জ দিয়ে থাকেন তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়। ট্রাফিক বিভাগ বলছে, আগে এগুলো অবৈধ থাকলেও হাইকোর্টের সাম্প্রতিক এক আদেশে মহাসড়ক ব্যতিত সব সড়কে চলতে পারবে ব্যাটারী চালিত রিক্সা-অটোরিক্সা। এ কারনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না ট্রাফিক বিভাগ।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সূত্র জানায়, নগরীতে ব্যাটারী চালিত হলুদ অটোরিক্সা চলছে ১২ হাজার এবং রিক্সায় ব্যাটারী ইঞ্জিন লাগিয়ে চলছে আরও ১২ হাজারের বেশী।
অটোরিক্সা চালক মো. নজরুল ইসলাম জানান, একটি হলুদ অটোরিক্সায় ১২ ভোল্টের ৫টি ব্যাটারী থাকে। ব্যাটারীগুলো ১শ’ ২০ থেকে দেড়শ’ এমপিআর ক্ষমতা সম্পন্ন। অপরদিকে ব্যাটারী চালিত রিক্সায় ব্যাটারী থাকে ৪টি।
অটোরিক্সা মালিক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, একটি হলুদ অটোরিক্সা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চার্জ দিলে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ টাকার বিদ্যুত খরচ হয়। গ্যারেজে ব্যাটারী চার্জ দিলে খরচ হয় দেড়শ’ টাকা। নতুন ব্যাটারী চার্জে বিদ্যুত খরচ কম হলেও পুরাতন ব্যাটারী চার্জ দিতে অনেক বিদ্যুত খরচ হয় বলে তিনি জানান। বরিশাল নগরীতে চলাচলকারী বেশীরভাগ হলুদ রিক্সা অটোরিক্সা এবং ব্যাটারী চালিত রিক্সা অনেক পুরনো বলে তারা জানান।
বরিশাল নগরী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারী চালিত ২৪ হাজার রিক্সা ও অটোরিক্সা
বরিশাল ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) বিক্রয় ও বিতরন বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আমজাদ হোসেন জানান, একটি ব্যাটারী চালিত হলুদ অটোরিক্সার (৫টি) ব্যাটারী চার্জ দিতে প্রতিদিন অন্তত ৫ কিলোওয়াট (ইউনিট) বিদ্যুত খরচ হয়। অপরদিকে ব্যাটারী চালিত রিক্সার ব্যাটারী (৪টি) চার্জ দিতে প্রায় ৩ কিলোওয়াট (ইউনিট) বিদ্যুত খরচ হয়। সে হিসেবে ১২ হাজার হলুদ অটোরিক্সা চার্জ দিতে ৬০ হাজার কিলোওয়াট এবং ১২ হাজার ব্যাটারী চালিত রিক্সার ব্যাটারী চার্জ দিতে ৩৬ হাজার কিলোওয়াট বিদ্যুত খরচ হয়। অর্থাৎ বরিশাল নগরীতে প্রতিদিন হলুদ অটোরিক্সা এবং ব্যাটারী চালিত রিক্সার ব্যাটারী চার্জ দিতে মোট ৯৬ হাজার কিলোওয়াট বিদ্যুত খরচ হয়। যা দিয়ে একটি ছোটখাটো শিল্প চলতে পারে। এসব যানের ব্যাটারী চার্জ বন্ধ করা গেলে বিদ্যুত সাশ্রয় হবে বলে স্বীকার করেন তিনি।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক (প্রশাসন) আব্দুর রহিম বলেন, সম্প্রতি ট্রাফিক বিভাগের সাথে এক সভায় সিটি মেয়র জানিয়েছেন নগরীতে ১২ হাজার হলুদ অটোরিক্সা চলছে। আরও ১২ হাজার রিক্সায় ইঞ্জিন আর ব্যাটারী লাগিয়ে চালানো হচ্ছে। আগে ব্যাটারী চালিত এসব যান অবৈধ ছিলো। ট্রাফিক বিভাগ তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারতো। সম্প্রতি হাইকোর্ট মহাসড়ক ব্যতিত সর্বত্র ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা ও রিক্সা চলাচলের বৈধতা দিয়েছে। তার মানে এখন আর ব্যাটারী চালিত রিক্সা ও অটোরিক্সা অবৈধ নেই।
প্রতিদিন ব্যাটারী চার্জে খরচ হচ্ছে ৯৬ হাজার কিলোওয়াট বিদ্যুত
এ অবস্থায় এসব যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ট্রাফিক বিভাগ কোন ব্যবস্থা নিতে পারছে কিনা জানতে চাইলে ট্রাফিক পরিদর্শক আব্দুর রহিম বলেন, কোন যানবাহন ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করলে তার কাগজ জব্দ করে মামলা দেয় ট্রাফিক বিভাগ। কিন্তু ব্যাটারী চালিত রিক্সা ও অটোরিক্সার বৈধ কাগজ না থাকায় ট্রাফিক আইন লংঘন করলে সেগুলো আটক করা হয়। পরে আবার নির্ধারিত জরিমানা দিয়ে সেগুলো ছাড়িয়ে নেন মালিকরা।
সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক আহমেদ বলেন, ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সায় শৃঙ্খলা ফেরাতে সম্প্রতি সিটি মেয়র নগরীতে ৫ হাজার টোকেন দিয়েছেন। এসব যানের ব্যাটারী চার্জ দিতে প্রতি ওয়ার্ডে একটি করে চার্জিং পয়েন্ট করে দেবেন মেয়র। ব্যাটারী চার্জে বিদ্যুত অপচয়ের বিষয়ে সিটি মেয়রের সাথে আলোচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে সিটি করপোরেশন।