বিজয় দিবসের সন্ধ্যায় শহীদ মিনার আলোকিত করলো উদীচী ও বরিশাল নাটক
মহান বিজয় এবছর ৫০ ছুঁয়েছে। এই মাহেন্দ্রক্ষণে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী বরিশাল জেলা সংসদ ও বরিশাল নাটক বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার মোমের আলোতে আলোকিত করেছে। পরে সেখানে আলোচনা, আবৃত্তি, গানে ও নাটকে বিজয়ের ৫০ বছরকে স্বাগত জানায় তারা।
১৬ ডিসেম্বর বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে বিজয়ের ৫০ বছরের মাইলফলক ছোঁয়ার আনন্দে মোমবাতি প্রজ্জলন করে শুরু হয় বিজয়ের অনুষ্ঠান। একই সঙ্গে ১৯৭১ সালে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
আলোচনা সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তারা বলেন, যারা ভাস্কর্য নির্মাণ হলে বঙ্গপ সাগরে ফেলে দেওয়ার হুংকার দিয়েছিল, তারাই আজ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য পাহাড়া দিচ্ছে। এটা জাতির জন্য লজ্জাজনক ঘটনা। এই লোক দেখানো পাহাড়ায় ভুলে গেলে আর একাট ভুল হবে। সেই পথে না হেঁটে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে ধর্মকে যাতে রাজনীতিতে ব্যবহার করতে না পারে সেই দিকে নজর দিতে হবে।
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী বরিশাল জেলা সংসদ ও বরিশাল নাটকের আয়োজনে অনুষ্ঠিত মহান বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।
বক্তারা বলেন, ১৯৭১ সালের পরাজিত শক্তি জামায়ত ও মৌলবাদীরা নতুনভাবে সংগঠিত হচ্ছে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িকতা দিকে নিয়ে যেতে ৭১-এর দোসররা নতুন পথ খুঁজছে। তারা বিভিন্নভাবে ধর্মকে ব্যবহার করে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এদের শাস্তির কাঠগড়ায় আনতে সক্ষম না হওয়ায় সুযোগ বুঝে এরাই ৭৫ ঘটিয়েছ। আমাদের ভুলের জন্য একবার মাসুল দিতে হয়েছে হাইকোর্টের ভাস্কর্য অপসারণ করিয়ে। এই গোষ্ঠী লালনের ভাস্কর্য ভেঙেছে। এরাই দেশের বিভিন্ন স্থানে আমাদের ঐতিহ্য গুড়িয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। এরাই সরকারকে চাপে ফেলে আমাদের পাঠ্য বইয়ে পরিবর্তন এনেছে। বিজ্ঞান মনষ্ক চিন্তা থেকে এই গোষ্ঠী আমাদের পেছনের দিকে নিয়ে যেতে কাজ করছে। আবার এরাই বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার সাহস দেখাচ্ছে। এখনো সময় আছে এদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে। তা না হলে আগামীতে মুক্তিকামী বাঙালিদের দাঁড়াবার জায়গাও এরা দখল করে নেবে।
ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় তারা বেপরোয় হয়ে উঠেছে। তারা ধর্মের নামে রাজনীতি করার সুযোগ পেয়ে এরা ধর্মপ্রাণ মানুষদের বিভ্রান্ত করছে। মৌবাদী এই চক্রের প্রভাব পড়েছে দেশের আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগগুলোতেও। সেখানে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদেরও বেশিরভাগ পাকিস্তানী চিন্তার ধারক হয়ে কাজ করছেন। এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় এরা প্রগতিশীল চিন্তার সকল স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। সবশেষ তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেক মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যে আঘাত করেছে। অন্যান্য ভাস্কর্য ভেঙে এরা সাহস সঞ্চার করেছে। আগের সব ভাস্কর্য অপসারণ ও ভাঙার ঘটনায় শাস্তি দেওয়া গেলে আজ তারা এই দুঃসাহস দেখাতে পারতো না। এই সাহস দেওয়ার ক্ষেত্রে রাস্ট্রের ভূমিকা সঠিক ছিল না।
আজ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভঙার পর সচিবালয় থেকে শুরু করে তৃণমূলের সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিরা রাস্তায় প্রতিবাদে নেমেছেন। এটা যদি সবার ইচ্ছার প্রতিফলন হতো তাহলে ভালো হতো। সরকারি নির্দেশনার কারণে অনেক কর্মকর্তা ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেমেছেন। এভাবে আমাদের জাতির পিতার মর্যাদা রক্ষা করা যাবে না। এভাবে নির্দেশ দিয়ে ঐতিহ্য টেকানো যায় না। এরজন্য প্রয়োজন সতঃস্ফূর্ত উদ্যোগ। অসাম্প্রদায়িক চিন্তার লালন না হলে কোন কিছুই রক্ষা হবে না। মৌলবাদী চিন্তার প্রসার ঠেকাতে এব্যাপারে অবশ্যই রাষ্ট্রকে কঠিন হতে হবে।
আজ যখন পদ্মাসেতুর মত এক একটি স্প্যান বসে আমাদের সমৃদ্ধির সেতুবন্ধ রচনা হয়েছে, ঠিক তখনই আবার সেই মৌলবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর আষ্ফালন শুরু হয়েছে। মৌলবাদী উগ্র জঙ্গীদের নির্মুলে সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও ধর্মের নামে অন্য এক মৌলবাদী গোষ্ঠীর উত্থানে কখনো কখনো নিশ্চুপ থেকেছে। সেই সুযোগ নিয়ে কখনো হেফাজত, কখনো অন্য কোন ধর্মীয় ফতোয়া দিয়ে সরকারকে তারা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। সরকারও অনেক সময় নিশ্চুপ থেকেছে। সেদিন যদি মৌলবাদীদের ধর্মান্ধ চিন্তাকে প্রশ্রয় দেওয়া না হতো তাহলে আমাদের আজকের এই দিনটি দেখতে হতো না। আমাদের লালন, বলাকা ভাস্কর্য, হাইকোর্টের ভাস্কর্য অপসারণ করা না হতো তাহলে ওরা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার সাহস করতো না। সরকারই ওদের সাহস দিয়ে এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। এখান থেকে উত্তোরণ ঘটাতে হলে এদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে।
উদীচী সভাপতি সাইফুর রহমান মিরণের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, উদীচী বরিশাল নাটকের সংগঠক ও শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট মানবেন্দ্র বটব্যাল, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট বিশ^নাথ দাস মুনশী, বরিশাল নাটকের সভাপতি কাজল ঘোষ, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতিম-লীর সদস্য আজমল হোসেন লাবু, উদীচী সদস্য ও শহীদ আবদুর রব সেরনয়িবাত সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পাপিয়া জেসমিন, বরিশাল নাটকের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় সাহা, উদীচী বরিশালের সাধারণ সম্পাদক স্নেহাংশু বিশ্বস।