ব্র্যাকে যোগ দিলেন রায়হান

অভিবাসীদের প্রতি মালয়েশিয়ান প্রশাসনের ‘নিষ্ঠুর আচরণের’ বর্ণনা দিয়ে দেশটিতে গ্রেপ্তার হওয়া রায়হান কবিরকে চাকরি দিয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক। এই প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায়ই রায়হান গত বছর বাংলাদেশে ফিরে আসতে সক্ষম হন।
রায়হানের খবর গণমাধ্যমে আসার পর ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এক সময় সাংবাদিকতা পেশায় থাকা শরিফুল ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে রায়হান ইস্যুতে দেশের একটি ইংরেজি গণমাধ্যমে নিয়মিত প্রতিবেদনও করতে থাকেন।
শরিফুল হাসান বৃহস্পতিবার বলেন, ‘আজকের দিনটা আমাদের জন্য আনন্দের। বাংলাদেশি রায়হান কবির দেশে ফিরে প্রবাসীদের অধিকার রক্ষার জন্য কাজ করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছিলেন। অবশেষে তার সেই আশা পূরণ হতে যাচ্ছে।’
রায়হান মাইগ্রেশন প্রোগ্রামে ইনফরমেশন সার্ভিস সেন্টার অফিসার হিসেবে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কাজে যোগ দেবেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি নিয়োগপত্র হাতে পেয়েছেন।
‘আমার সব সময় ইচ্ছা ছিল প্রবাসীদের জন্য কিছু করা। সেই স্বপ্ন এখন পূরণ হতে যাচ্ছে,’ মন্তব্য করে রায়হান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সেই পলাতক জীবন থেকে শুরু করে কারাগারে যাওয়া, মুক্তি পাওয়া…পুরোটা সময় ব্র্যাক আমার পাশে ছিল। এখন তাদের মাধ্যমে আমি স্বপ্নকে সত্যি করতে যাচ্ছি।’
‘প্রবাসীদের জরুরি সেবা দেওয়ার জন্য বিমানবন্দরের উল্টো দিকে ব্র্যাকের একটি তথ্য ও সেবাকেন্দ্র রয়েছে। গত দুই বছরে আমরা সেখান থেকে ১৭ হাজার মানুষকে নানা ধরনের সেবা দিয়েছেন,’ জানিয়ে শরিফুল হাসান বলেন, ‘মালয়েশিয়া থেকে এক যুগ আগে ফেরা আমাদের নয়নভাই সেই সেন্টারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সেখানে এখন নয়নভাইয়ের সঙ্গে কাজ করবেন রায়হান।’
রায়হানের বাড়ি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে। বাবা-মা আর দুই ভাই-বোনের পরিবার।
রায়হান মালয়েশিয়ায় বিপদে পড়েন গত বছর জুলাইতে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার ‘১০১ ইস্ট ডকুমেন্টারি’র ‘‘লকড আপ ইন মালয়েশিয়া’স লকডাউন’’ শিরোনামের প্রামাণ্যচিত্রে তিনি বক্তব্য দেন। তার বিষয়ে বাংলাদেশে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করে দেশ রূপান্তর। অনলাইন সংস্করণে ৭ জুলাই দুপুরে ‘দুর্দশার বর্ণনা দিয়ে মালয়েশিয়ায় বিপাকে বাংলাদেশি’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
প্রামাণ্যচিত্রটিতে শুধু বাংলাদেশ নয়, আরো কয়েকটি দেশের অভিবাসীরা নিজেদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন। প্রায় ২৬ মিনিটের ভিডিওটিতে সাড়ে পাঁচ মিনিটের দিকে রায়হানকে দেখা যায়।
রায়হান উপস্থাপককে নিজের মোবাইলে একটি ভিডিও দেখান। সেই ভিডিওতে মালয়েশিয়ান প্রশাসনের কিছু পদক্ষেপের দৃশ্য ছিল। দেখা যায়, ৬০০ মানুষকে তারা ট্রাকে করে অন্য কোথাও নিয়ে যাচ্ছেন।
রায়হানের অভিযোগ, ‘তারা আমাদের ফাঁদে ফেলেছে। ওষুধ, খাবারসহ সবকিছু দিয়েছে। কিন্তু কেউই বুঝতে পারেনি গ্রেপ্তার করা হবে। তারা খুনি নয়, সন্ত্রাসী নয়। শুধু কাগজপত্রহীন অভিবাসী।’
রায়হানের অবশ্য কাগজপত্রের সমস্যা ছিল না। বৈধ ওয়ার্ক পারমিট নিয়েই দেশটিতে ছিলেন তিনি। তবে হৃদয় নামে তার এক বন্ধুর ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ শেষ হওয়ায় পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।
‘আমার বন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু দোষ তার নয়,’ দাবি করে রায়হান আলজাজিরাকে বলেন, ‘তার কোম্পানি ভিসা নবায়ন করেনি। আমি ইমিগ্রেশনে গিয়েছি, পুলিশের কাছে গিয়েছি। আমার বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গেটে কান্নাকাটি করেছি।’
ভিডিওতে আরেক বাংলাদেশির কথা বলা হয়, যিনি ২০ বছর ধরে দেশটিতে আছেন। উপস্থাপককে নিয়ে রায়হান তার কাছে যান। লকডাউনের সময় তার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। রায়হান ইংরেজিতে কথা বললেও ওই ব্যক্তি বাংলায় নিজের দুর্দশার বর্ণনা দেন।
পর্বটি প্রচার হওয়ার পর রায়হান মালয়েশিয়ার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল-ইস্যুতে পরিণত হন। তার ব্যাপারে তথ্য চেয়ে নোটিশ জারি করে দেশটির অভিবাসন বিভাগ। এক সময় গ্রেপ্তার করা হয়।
সংগৃহিত- দেশ রূপান্তর