ভুয়া ওয়েবসাইট বানিয়ে কোটি টাকা প্রতারণা : নৌপরিবহন অধিদফতর

নৌপরিবহন অধিদফতরের ভুয়া ওয়েবসাইট বানিয়ে অধিদফতরের জাল সার্টিফিকেট তৈরি ও আপলোড করে আন্তর্জাতিক জাহাজে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। এই অভিযোগে ওই চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীর উত্তরখানে ‘ওরিয়েন্টাল গ্লোবাল ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম একাডেমি’ নামক প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সিরাজুল আজাদসহ এই প্রতারণা চক্রের ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার অপর আসামিরা হলেন- কথিত এই প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর মঞ্জুরুল আজাদ (৩২), তারিকুল আজাদ (৩০), আইটি অফিসার রাশেদুল ইসলাম (৩০) ও প্রাক্তন আইটি অফিসার মোহাম্মদ সোহেল রানা (২৯)। তাদের কাছ থেকে দুটি ল্যাপটপ, দুইটি এইচডিডি হার্ডডিস্ক, ২টি এসএসডি হার্ডডিস্ক, একটি পেনড্রাইভ, ৬টি মোবাইল ফোনসহ বেশকিছু আলামত জব্দ করা হয়।
সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে প্রথমে নৌপরিবহন অধিদফতর থেকে অভিযোগ আসে যে, একটি প্রতারক চক্র সরকারি প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে যোগ্যতা সনদ যাচাই-বাছাই ও প্রদানের কথা বলে প্রতারণা করে আসছে। এসব নকল সনদের কারণে বহির্বিশ্বে মেরিটাইম ইন্ডাস্ট্রিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
তিনি বলেন, সমুদ্রগামী জাহাজের কর্মকর্তা, নাবিকদের যোগ্যতা সনদ পরীক্ষা ও বিভিন্ন সার্টিফিকেট ইস্যু করার একমাত্র প্রতিষ্ঠান নৌপরিবহন অধিদফতর। এছাড়া অধিদফতর যেসব সার্টিফিকেট দিয়ে থাকে, তা হচ্ছে সার্টিফিকেট অফ প্রফিসিয়েন্সি (সিওপি) ও সার্টিফিকেট অফ কম্পিটেন্স (সিওসি)। যোগ্যতা সনদ নামে এ প্রতিষ্ঠান অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক জাহাজে কর্মরত নাবিক ও কর্মকর্তাদের বিভিন্ন সার্টিফিকেট ইস্যু করে থাকে, যা তাদের নিজস্ব সরকারি ওয়েবসাইটতে সব সময় আপলোড থাকে।
তিনি বলেন, চক্রটি প্রথমে ডোমেইন-হোস্টিং কিনে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আদলে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে। পরে এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দেয় যে মার্চেন্ট শিপে চাকরিতে আগ্রহী নাবিকদের বিভিন্ন যোগ্যতা সনদ প্রদান করা হবে। এই বিজ্ঞপ্তি দেখে নাবিকরা তাদের কাছে সনদের জন্য যায়। পরে চক্রটি ৩-৭ লাখ টাকার বিনিময়ে নাবিকদের কাছে বিভিন্ন পেশাগত নকল সনদ বিক্রি করে। এভাবে চক্রটি নকল সনদ বিক্রি করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
তিনি বলেন, চক্রের কাছ থেকে এসব সনদ নিয়ে নাবিকরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শিপ কোম্পানি চাকরি করতে গেলে তা সনদ নকল হিসেবে ধরা পড়ে।
সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতারকৃতদের মধ্য সোহেল রানা দক্ষ ওয়েব ডেভেলপার ও ডিজাইনার। তার মাধ্যমে সরকারি সনদের হুবহু জালিয়াতি কপি তৈরি করে চক্রটি। পরে এসব নকল সনদ তারা জাহাজে চাকরিপ্রত্যাশী নাবিকদের কাছে উচ্চমূল্যে বিক্রি করতো।
তিনি বলেন, আসামিদের কাছ থেকে নকল ওয়েবসাইট তৈরির কাজে ব্যবহৃত কম্পিউটারের বিভিন্ন ডাটাবেস সার্ভারে ইন্সটল করা অবস্থায় পাওয়া যায়। যেখানে সিওপি নম্বর সম্বলিত ১২০ এর অধিক সার্টিফিকেটের তথ্য বিভিন্ন সময়ে আপলোড করা হয়েছে। এই ১২০টি সিওপি সার্টিফিকেট তারা এখন পর্যন্ত বিক্রি করেছে বলেও জানা গেছে।