মাদক নির্মূল করে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে

মাদক নির্মূল করে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে

মাদক আমদের সমাজের জন্য অভিশাপ। তারপরও সমাজে বসছে মাদকের রমরমা বাজার। সেই বাজার বাড়ির বৈঠকখানা থেকে চাষের মাঠ পযন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। মাদকের ছোবলে শিশু থেকে বুড়ো পর্যন্ত সবাই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে, ব্যক্তি, পরিবার থেকে গোটা সমাজ। মাদকের প্রভাবে কমবেশি সবাই ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছি। ভয়াবহ এই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হচ্ছে সাংসদ থেকে শুরু করে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা। কিন্তু সমাজ থেকে মাদক নির্মূল করতে না পারলে আমদের সামনের যাবার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। তাই মাদক নির্মূলে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। মাদক নির্মূল করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।  

দেশের ৪০ ভাগ তরুণ এবং যুবক। যাদের বয়স ১৩ থেকে ২৫ বছর। সম্ভাবনাময় এই বিশাল জনগোষ্ঠী আমাদের আগামীর বাংলাদেশের কা-ারী। তারা যখন দেশ নিয়ে ভাববে তখন তাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে ভয়াবহ মাদক। কম বয়সী শিশু এবং নারীদের মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। নিজের অজান্তে কিশোর, তরুণরা মাদকের সঙ্গ যুক্ত হয়ে যাচ্ছে। মাদক নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা না থাকার কারণেও মাদকের বিস্তার বাড়ছে। এর সঙ্গে জনপ্রতিনিধি ও  প্রশাসনের অসাধু কিছু সদস্যর সহযোগিতার কারণে মাদক ছড়িয়ে পড়ছে শহর থেকে গ্রাম-গঞ্জে।

আশার কথা হচ্ছে, প্রশাসনের সদিচ্ছা এবং সরকারের পুনর্বাসন সহযোগিতার কারণে আকণ্ঠ মাদকে নিমজ্জিত কিছু মানুষ মাদক সেবন এবং বিক্রি ছেড়ে আলোর পথে আসছে। বরিশালে ২২৯জন মাদকসেবী এবং মাদক বিক্রেতা মাদক ছেড়ে প্রশাসনের কাছে আত্মসমর্পন করেছে। তাদের পুনর্বাসনে প্রশাসন উদ্যোগও নিয়েছে। কিন্তু গোটা দেশে যত পরিমান মাদক ঢুকছে এবং মাদক বিক্রি ও নেশার সঙ্গে যত পরিমান মানুষ যুক্ত হচ্ছে আত্মসমর্পনকারীরা তার অতি ক্ষুদ্র অংশ। মাদকের ভয়বহতা কমাতে হলে রাজনৈতিক মদদ দূর করতে হবে। একই সঙ্গে প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। এব্যাপারে সরকারের শুন্য সহনশীল (জিরো টলারেন্স) নীতি অনুসরণ করতে হবে। তা না হলে সমাজ থেকে মাদকের বীজ উপড়ে ফেলা সম্ভব হবে না।

কেবল মিয়ানমার, ভারত থেকে যে পরিমাণ নেশা জাতীয় দ্রব্য বাংলাদেশে প্রবেশ করছে তার চিত্র ভয়াবহ। এর বাইরে অনেক মাদকদ্রব্য আসছে যার খবর জানার বাইরে থেকে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে কিছু কিছু মাদক উদ্ধারের ঘটনা আমরা জানতে পারি। কিন্তু অনেক তথ্যই আমাদের জানার বাইরে থাকে। কেবল প্রশাসনের সোর্স কিংবা মাদক ব্যবসায়ীদের অর্থের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্ব হলেই সেই ঘটনা প্রশাসনের কাছে পৌঁছায়। বাকি অনেক খবর পুলিশ কিংবা গোয়ান্দা সংস্থার কাছে আসে না। অবৈধ পথে আমদানী হওয়া মাদকের ক্ষুদ্রতম অংশই উদ্ধার করা সম্ভব হয়। 

নানা কৌশলে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা বড়ি বাংলাদেশে আসছে। মিয়ানমার ও অন্যান্য দেশ এসব মরণ নেশা তৈরি করে আমাদের সন্তানদের হাতে তুলে দিচ্ছে। তারা সম্ভাবনার বাংলাদেশকে ধ্বংস করার জন্যই এমন প্রচেষ্টায় রত। আর এই কাজে আমাদের দেশের কিছু অতি লোভী রাজনীতির মানুষ সহযোগিতা দিচ্ছে। এর সঙ্গে প্রশাসনের কিছু অতিলোভী সদস্যরা আমাদের সন্তানদের হাতে তুলে দিচ্ছে ভয়াবহ এই নেশা। যারা দেশ বিনির্মাণে কাজ করবে সেই সম্ভাবনাময় তরুণদের মাদক থেকে দূরে রাখতে হলে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। কেবল অভিযান নয়, মাদক নিয়ন্ত্রণে সামগ্রিকভাবে কাজ করতে হবে। এই কাজে আগে এগিয়ে আসতে হবে রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিদের। আমরা বিশ^াস করি কেবল রাজনৈতিক সদিচ্ছাই পারে মাদকের ছোবল থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করতে।

আমরা চাই মাদক মুক্ত পরিবেশ গড়ে উঠুক। আমাদের বাতাস যেন মাদকে ভারী না হয়। আমাদের সন্তানরা যেন মাদক মুক্ত পরিবেশে বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়। মাদক মুক্ত সমাজ গড়তে ঘোষণা নয়, পদক্ষেপ নিতেই হবে। এই কাজে সরকারের সঙ্গে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য এব সমাজের প্রতিটি নাগরিককে সহযোগী হয়ে কাজ করতে হবে। 

আমাদের মাদক নির্মূল করে দেশকে এগিয়ে নিতেই হবে। আমাদের রাজনীতি যেন আমাদের সেই দিকে নিয়ে যাবার জন্য উদ্যোগ নেয়। তাহলে কোন প্রশাসনই মাদক কেনা-বেচায় সহযোগিতা করতে সাহস দেখাবে না। আমাদের তরুণ ও যুবকরা মাদক মুক্ত পরিবেশে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করতে পারবে।