মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষা

মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষা

দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাছে শুধু একটি সেতু নয়, একটি আবেগ। বঙ্গবন্ধু কন‌্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসিকতা আর হার না মানা অপ্রতিরোধ‌্য মানসিকতার মূর্ত প্রতীক স্বপ্নের পদ্মা সেতুর যানচলাচলের জন‌্য খুলে দেওয়ার দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ।

শনিবার (২৫ জুন) প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে এই স্বপ্নের সেতুর উদ্বোধন করবেন। এর পরের দিন রোববার (২৬ জুন) সকাল ৬টা থেকে থেকে জনসাধারণের জন‌্য উন্মুক্ত হবে এই সেতু। স্বপ্নের এই সেতুতে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের কষ্টের অধ‌্যায়ের সমাপ্তি ঘটবে। সেই সঙ্গে প্রাণ পাবে ওই অঞ্চলের অর্থনীতি। দেশের জিডিপিতে ইতিবাচক অবদান আসবে।


এরই মধ‌্যে সেতু উদ্বোধনের সব প্রস্তুতি নেওয়া সম্পন্ন হয়েছে। নদীর দুই পাড়ে এখন উৎসবের আমেজ, সাজসাজ রব।  শনিবার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাওয়া প্রান্তে প্রথম সুধী সমাবেশে বক্তব‌্য রাখবেন এবং পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ঘোষণা দেবেন। পরে তিনি সেতুর ফলক ও ম্যুরাল উদ্বোধন করে টোল দিয়ে সফরসঙ্গীদের নিয়ে পদ্মা সেতু পার হবেন। ওপারে গিয়েও তিনি প্রথমে সেতুর ফলক ও পরে ম্যুরাল উদ্বোধন করবেন। বিকেলে তিনি কাঁঠালবাড়িতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তব‌্য রাখবেন।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস‌্য জাহাঙ্গীর কবির নানক রাইজিংবিডিকে বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের সেই মাহেন্দ্রক্ষেণে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। যারা অসীম সাহসিকতা, বিচক্ষণ নেতৃত্ব আর দুরদর্শী চিন্তার ফসল এই সেতু তাকে দেখার জন‌্য, তার কথা শোনার জন্য বাংলার মানুষ এখন অপেক্ষা করছে। আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার এই সেতু উদ্বোধন করবেন আধুনিক বাংলাদেশের রুপকার বঙ্গবন্ধু কন‌্যা শেখ হাসিনা। জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হবে। নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে দলীয় দুই হাজার স্বেচ্ছাসেবক আগত মানুষের সব ধরনের সহযোগিতা ও সেবা দেওয়ার জন‌্য প্রস্তুত রয়েছে।


আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১০ লাখ মানুষের সমাগম ঘটবে বলে তারা আশা করছেন। এরই মধ‌্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সভাস্থলে ৫০০ অস্থায়ী শৌচাগার, ভিআইপিদের জন্য আরও ২২টি শৌচাগার, সুপেয় পানির লাইন, তিনটি ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল, নারীদের আলাদা বসার ব্যবস্থা, প্রায় ২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের সভাস্থলে দূরের দর্শনার্থীদের জন্য ২৬টি এলইডি মনিটর ও ৫০০ মাইকের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া নদীপথে আসা মানুষের জন্য ২০টি পন্টুন তৈরি করা হচ্ছে। মোবাইল অপারেটরগুলো তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভ্রাম্যমাণ মোবাইল টাওয়ার নির্মাণ করছে।

জনসভায় আসা অতিথিদের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া সভাস্থলে নারীদের বসার জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভিআইপি অতিথি, বিদেশি অতিথি ও কূটনীতিকদের জন্য আলাদা জোন করা হয়েছে।

মাদারীপুরে প্রধানমন্ত্রী যে জনসভায় বক্তব‌্য রাখবেন সেই মঞ্চ সেতুর আদলেই তৈরি করা হয়েছে। ১৫০ ফুট দৈর্ঘ‌্য ও ৪০ ফুট প্রশস্ত মঞ্চটি ১১টি পিলারের ওপর ১০টি স্প‌্যান বসানো হয়েছে। মঞ্চের সামনে বিশাল আকৃতির এক নৌখা রাখা হয়েছে এমনভাবে দেখে যেন মনে হবে পানির ওপর ভাসছে।

সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, বিচারপতি, বিশিষ্ট রাজনীতিক ছাড়াও বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।


এরই মধ‌্যে সেতু এলাকায় নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব‌্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। র‌্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্তত ৫ হাজার সদস্য ইউনিফর্মে মোতায়েন থাকবেন। এর বাইরে সাদা পোশাকে বিপুলসংখ্যক সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন ইউনিটের গোয়েন্দা সদস্যরা সেতু ঘিরে দুই পাড়েই তৎপর রয়েছেন।

সেতুর দুই প্রান্ত, সমাবেশস্থলসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে র‌্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড সুইপিং করবে। যে কোনো উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে র‌্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, স্পেশাল ফোর্সের কমান্ডো টিম।  পাশাপাশি যেকোনো পরিস্থিতিতে র‌্যাব এয়ার উইংয়ের হেলিকপ্টার সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে।

সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। থাকবে ভ্রাম‌্যমাণ চিকিৎসা কেন্দ্র, অ‌্যাম্বুলেন্স।