মুঠোফোনে সম্পর্ক সতর্ক থাকতে হবে

মুঠোফোনে সম্পর্ক সতর্ক থাকতে হবে

‘কাছে থেকে দূর রচিলে, কেন গো আঁধারে...’। রবীন্দ্রনাথের গানের লাইনটি একবিংশ শতাব্দিতে কঠিন বাস্তব হয়ে দেখা দিয়েছে। রবীন্দ্রনাথ হয়তো এমন বাস্তবতার জন্য গানটি রচনা করেননি। কিন্তু আজকের ভার্চুয়াল জগতের কারণে আমরা একান্ত কাছে থেকেও অনেক দূরে সরে যাচ্ছি। ভার্চুয়াল জগতের সবচেয়ে বড় মাধ্যম মুঠোফোন। এক নিমিষে এই যন্ত্র দুনিয়া মুঠোর মধ্যে এনে দিচ্ছে। গ্রহ, নক্ষত্রসহ বিশ^পরিম-ল সবকিছুই মিলছে এক ক্লিকে। বিজ্ঞানের এই অগ্রযাত্রা বিশ^কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

সামজিক যোগাযোগ দূরকে অতি নিকটে এনে দিয়েছে। হাজার হাজার মাইল দূরের স্বজনদের রাখছে কাছে। জ্ঞানের পরিধি বাড়াচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। এখন সুখ, দুঃখ, আনন্দ বেদনা কোন কিছুই আর কারো একার নয়। সবকিছুই সবার জন্য উন্মুক্ত হয়ে গেছে। এই জয়যাত্রার সুফল যেমন আমাদের আন্দোলিত করেছে, তেমনি এর অতিমাত্রায় ব্যবহার আমাদের ধ্বংসের দিকেও ঠেলে দিচ্ছে। শিশু থেকে বুড়ো সবাই এখন মুঠোফোনে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। ফলে একান্ত কাছাকাছি থেকেও সন্তান, পরিবার ও স্বজনরা দূর থেকে আরও দূরেই চলে যাচ্ছে।

আমরা লক্ষ্য করছি, এক ছাদের নিচে বাবা, মা, স্ত্রী, সন্তান থাকলেও কারো সঙ্গে কারো কথা হচ্ছে না। সবাই মুঠোফোনে ডুবে থাকছে। এক সঙ্গে টেবিলে বসে গল্প, আড্ডা এমনকি কুশল বিনিময়ও বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে প্রিয় সন্তান কাছে থেকেও দূরে চলে যাচ্ছে। ভার্চুয়ালি এমন কোথাও যুক্ত হচ্ছে, যা বাবা-মা ধারণাও করতে পারছেন না। এর ফসল হচ্ছে একান্ন পরিবার প্রথা ভেঙে যাচ্ছে। বাড়ছে অনৈতিক সম্পর্কের পরিধি। সেই সম্পর্কই জীবন ধ্বংসের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। সেখান থেকে আর ফেরানো যাচ্ছে না। সম্ভাবনাময় আগামী মুখ থুবড়ে পড়ছে। বাড়ছে পারিবারিক অবিশ^াস। আর সেখান থেকেই আত্মহননের দিকে ঠেলে দিচ্ছে তাদের। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় মুঠোফোনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগী হতে হবে।

পৃথিবীর অন্য দেশের অবস্থা কেমন জানি না। কিন্তু বাংলাদেশে মুঠোফোনে পরিচয়, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পরিচয় একটি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। প্রলোভন, প্রতারণা সহ নানামূখি ঘটনার জন্ম দিচ্ছে ফেসবুক নামক যোগাযোগ মাধ্যম। উন্মুক্ত পৃথিবীর লালশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে যুবসমাজ এমনকি প্রবীণরাও। যার খেসারত দিতে হচ্ছে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে। সম্প্রতিক সময়ে ফেসবুকের সম্পর্কের বলি হতে দেখা যাচ্ছে সম্ভাবনাময় তরুণ-তরুনীদের। ধ্বংস হচ্ছে সামাজিক, সাংস্কৃতিক পরিম-ল। উন্মুক্ত দুনিয়ার রঙিন পথ বন্ধ করা হয়তো সম্ভব নয়, কিন্তু এটির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা অতি জরুরী। সেব্যাপারে প্রথম দায়িত্ব নিতে হবে পরিবারকে। মুঠোফোন ব্যবহারে শিশু থেকে সবাইকে সতর্ক হতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও একটি দিকনির্দেশনা থাকতে হবে।