মুলাদীতে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সাংবাদিক পেটালো দলীয় কর্মীরা

বরিশালের মুলাদীতে একটি আঞ্চলিক দৈনিকের স্থানীয় প্রতিনিধিকে দলীয় কার্যালয়ে দরজা আটকে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে বেদম মারধর করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা চেয়ারম্যান তারিকুল হাসান খান মিঠু এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন।
সড়ক দুর্ঘটনার একটি ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে দিনে দুই দফা গালাগাল করার পর তৃতীয় দফায় দলীয় কার্যালয়ে আটকে মারধর করা হয় আঞ্চলিক দৈনিক আজকের পরিবর্তনের হিজলা উপজেলা প্রতিনিধি মো. সেলিম রাড়িকে।
গত মঙ্গলবার দুপুরে এবং সন্ধ্যায় নির্যাতনের পর এই ঘটনা প্রকাশ করলে তাকে প্রাণে মেরে ফেলাসহ বাড়ি থেকে বিতাড়িত করার হুমকী দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
সাংবাদিক নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস। বরিশালের পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, থানায় লিখিত অভিযোগ করলে সে যে-ই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক মো. সেলিম রাড়ি বলেছেন, এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ করার মতো পরিস্থিতি নেই। আতংকে নিরাপত্তাহীনতায় নিজ বাড়িতে দিন কাটছে তার।
সাংবাদিক সেলিম জানান, গত মঙ্গলবার দুপুরে তিনি এক ঘনিষ্টজনকে নিয়ে হিজলা থেকে মোটর সাইকেলে মুলাদী হয়ে বরিশাল যাচ্ছিলেন। দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে মোটর সাইকেলটি মুলাদী সিনেমা হল মোড় অতিক্রমকালে সেখানে জানজটের কবলে পড়ে। খোঁজ নিয়ে দেখেন একটি ট্রাকের সঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যানের এক ভাগ্নের মোটর সাইকেল দুর্ঘটনাকবলিত হয়েছে। তার সঙ্গে থাকা আলমগীর মুঠোফোনে দুর্ঘটনার ছবি তোলেন। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান মিঠু ছবি তোলার অপরাধে তাকে ও আলমগীরকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন এবং আচমকা আলমগীরের হাত থেকে ফোনসেটটি ছিনিয়ে নিয়ে পাশর্^বর্তী নদীতে ছুড়ে ফেলে দেন। সেলিম তাৎক্ষণিক বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিক খোকন তালুকদার এবং উপজেলা প্রেসক্লাব সভাপতি সুমন রাড়িকে জানায়। সুমন রাড়ি সন্ধ্যায় এ বিষয়ে একটি সুরহা করার আশ্বাস দেন। সহকর্মীদের জানানোয় দ্বিতীয় দফায় তাদের গালাগাল করে চেয়ারম্যান মিঠু।
সন্ধ্যায় মুলাদীর সাংবাদিক খোকন তালুকদারকে সঙ্গে নিয়ে সেলিম ভয়ে ভয়ে উপজেলা সদরের কলেজ রোডের আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ঢুকতেই উত্তেজিত হয়ে ওঠেন উেপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মিঠু। তাৎক্ষণিক তার কাছ থেকে মোটর সাইকেলের চাবি, ডিএসএলআর ক্যামেরা এবং দুটি মুঠোফোন সেট নিয়ে যায় মিঠুর কর্মীরা। খবর পেয়ে হিজলা উপজেলা প্রেসক্লাব সভাপতি দেলোয়ার হোসেনও সেখানে হাজির হন। ইতিমধ্যে মুঠোফোনের কললিস্ট দেখে বরিশালের সাংবাদিকদের ঘটনা জানানোয় সেলিম এবং বরিশালের সিনিয়র সাংবাদিকদের নাম ধরে অকথ্য ভাষায় গালাগাল দেন মিঠু। চেয়ারম্যানের উত্তেজনা দেখে তার সামনে সেলিমকে বেদম মারধর করে তার কর্মীরা।
পরে তার মোটর সাইকেলের চাবি, ডিএসএলআর ক্যামেরা এবং দুটি মুঠোফোন সেট দুটি ফেরত দেয়। তবে দুপুরে নদীতে ফেলে দেয়া ফোন সেটের বিষয়ে কোন সুরহা দেয়নি সে। যাওয়ার সময় এ ঘটনা কাউকে জানালে বা কোন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে সেলিমকে এলাকা ছাড়া করাসহ তাকে হত্যার হুমকী দেয়া হয়। এরপর থেকে হিজলার গুয়াবাড়িয়ার পূর্ব কোড়ালিয়ার নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন সেলিম। ওই ঘটনার পর থেকে চেয়ারম্যানের একাধিক কর্মী সেলিমকে মুঠোফোনে হুমকী দেয়।
এ ঘটনায় তিনি আইনগত বিচার চান। কিন্তু হিজলা থেকে মুলাদীতে গিয়ে থানায় অভিযোগ করার মতো কোন পরিস্থিতি নেই। ভয়ে-আতংকে নিজ বাড়িতে দিন কাটছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
হিজলা উপজেলা প্রেসক্লাব সভাপতি দেলোয়ার হোসেন জানান, তিনি মুলাদী উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে যাওয়ার পর তার সামনেই সেলিমকে উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার কর্মীরা অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। এক পর্যায়ে তার কর্মীরা সেলিমকে বেদম কিল-ঘুষি-লাথি দেয়। সেখানে থাকার মতো কোন পরিস্থিতি না থাকায় তিনি আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে বের হয়ে যান।
মুলাদী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সসম্পাদক তারিকুল হাসান খান মিঠু এ ধরণের কোন ঘটনা ঘনেটি বলে দাবি করেছেন।
জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, এ ধরণের কোন বিষয় তার জানা নেই। ঘটে থাকলে সেটা হবে দুঃখজনক এবং অনাকাঙ্খিত। নির্যাতনের শিকার হলে যে কেউ আইনের আশ্রয় নিতে পারে। এ ঘটনায় কোন লিখিত অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখার কথা বলেন তিনি।
বরিশালের পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, হিজলার ওই সাংবাদিক তাকে গত মঙ্গলবার দুপুরে ফোন করে চেয়ারম্যানের গালাগাল করার কথা জানিয়েছেন। তবে সন্ধ্যায় সেলিমকে মারধরের বিষয়ে তাকে কেউ অবহিত করেনি। ওই সাংবাদিক মুলাদী থানায় লিখিত অভিযোগ করলে অভিযুক্ত যে-ই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।