মেঘনায় যাত্রীবাহি লঞ্চ ও বাল্কহেডের সঙ্গে সংঘর্ষ , ঝুঁকিতে ঢাকা-বরিশাল নৌরুট

মেঘনায় যাত্রীবাহি লঞ্চ ও বাল্কহেডের সঙ্গে সংঘর্ষ , ঝুঁকিতে ঢাকা-বরিশাল নৌরুট
বরিশালের হিজলা উপজেলার মঘনা নদীতে যাত্রীবাহি লঞ্চ এমভি যুবরাজ-৭ ও সিমেন্টের কাচামাল ফ্লাইঅ্যাশবাহী বাল্কহেড এমভি সিয়ামের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় বালবাহী বাল্কহেড ডুবে যায়। ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের গুরুতবপূর্ণ এই চ্যানেলে বাল্কহেড ডুবে যাওয়ায় ঝুঁকির মেধ্যে পরেছে নৌরুট। সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত এমভি যুবরাজ-৭ এর যাত্রীদের এমভি আওলাদ-৪ নামক লঞ্চে তুলে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় কোন হতাহত হয়নি। শনিবার ২৫ মে সকাল ১০ টার দিকে বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলার মিয়ারচর সংলগ্ন মৌলুভীরহাট নামক স্থানে মেঘনা নদীতে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে সাড়ে ৭০০ টন ফ্লইঅ্যাশসহ বাল্কহেড ডুবে যায়। এমভি যুবরাজ-৭ লঞ্চের মাষ্টার সিরাজ জানান, গত শুক্রবার বিকেলে এমভি যুবরাজ-৭ পটুয়াখালী থেকে ৩০০ যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। রাতে বরিশালের হিজলা সংলগ্ন মেঘনা নদীতে এসে ঝড়ের কবলে পরে। এসময় অন্য একটি লঞ্চের সঙ্গে এমভি যুবরাজ-৭ নামক লঞ্চটিকেও নদী তীরে বেধে রাখা হয়। ঝড় শেষ হলেও ভাটার কারণে লঞ্চটি চরে আটকে যায়। গতকাল শনিবার সকালে লঞ্চটি অন্য লঞ্চের সহায়তায় চর থেকে নামিয়ে ঢাকায় গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। যাত্রার কিছুক্ষণ পরে হিজলা উপজেলার মিয়ারচর সংলগ্ন মৌলুভীরহাট নামক এলাকায় পৌঁছালে এমভি সিয়াম নামে ফ্লাইঅ্যাশবাহী একটি বাল্কহেডের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে সাড়ে ৭০০ টন ফ্লাইঅ্যাশসহ বাল্কহেডটি পানিতে ডুবে যায়। অন্যদিকে বাল্কহেডের ধাক্কায় লঞ্চের তলা ফেটে যায়। সঙ্গে সেঙ্গ যুবরাজ লঞ্চটি নদী তীরে নোঙর করে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হয়। এমভি যুবরাজ-৭ এর মাষ্টার সিরাজ বলেন, উল্টোপাশ থেকে বাল্কহেডটি এসে লঞ্চের তলায় সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে যাত্রীরা কেউ হতাহত না হলেও লঞ্চটির তলা ফেটে পানি উঠতে শুরু করে। পরে লঞ্চটিকে নদী তীরে নোঙর করে যাত্রীদের এমভি আওলাদ-৪ নামক অপর লঞ্চে তুলে দেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লঞ্চটিকে কোনভাবে মেরামত করা হচ্ছে, যাতে ঢাকায় নিয়ে পুরোপুরি মেরামত করা সম্ভব হয়। বরিশাল নৌ-পুলিশের হিজলা ফাঁড়ির পরিদর্শক শেখ মো. বেল্লাল হোসেন জানান, বাল্কহেডের ৮ জন লোক ছিলো, বাল্কহেডটি ডুবে গেলেও তাদের জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। বরিশাল বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরিচালক ও বরিশাল বন্দর কর্মকর্তা আজমল হুদা সরকার মিঠু বলেন, দুর্ঘটনায় কোন হতাহতেদর ঘটনা ঘটেনি। লঞ্চের যাত্রীরাও নিরাপদে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গেছে। কিন্তু বাল্কহেড ডুবে যাওয়ায় ওই চ্যানেলে নৌযান চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে। বাংলাদেশ লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবুল হাসেম জানান, ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের গরুত্বপূর্ণ চ্যানেল হচ্ছে হিজলা উপজেলার মেঘনা নদীর মিয়ারচর সংলগ্ন মৌলুভীরহাট। এই চ্যানেলে বালুভর্তি বাল্কহেড থাকলে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলে সমস্যার সৃষ্টি হবে। দ্রুত ওই চ্যানেল থেকে বাল্কহেড অপসারণ করা দরকার। বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সিমিতি কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও সুন্দরবন লঞ্চের মালিক সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ঢাকা-বরিশাল নৌ পথের গুরুত্বপূর্ণ চ্যানেলে কার্গো ডুবে যাওয়ায় লঞ্চ লচালচল ঝুঁকিপূণর্ণ হয়ে পড়েছে। দ্রুত ওই কার্গো অপসারণ করতে না পারলে ঈদে বড় ধরণের সমস্যা হতে পারে। রাত সাড়ে ১১টায় গঠনাস্থল থেকে ফিরে বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরিচালক ও বরিশাল বন্দর কর্মকর্তা আজমল হুদা সরকার মিঠু বলেন, যে বাল্কহেডটি ডুবেছে তাতে ৭৭০ মেট্রিক টন সিমেন্টোর কাচামাল ফ্লাইআশ ছিল। এর সঙ্গে ওই বাল্কহেডের ওজন যোগ হয়েছে সব মিলে প্রায় ১২০০ মেট্রিকটন ওজন হবে। ওই বাল্কহেড উদ্ধারের মতো উদ্ধারকারী জাহাজ আমাদের নেই। আমাদের উদ্ধারকারী জাহাজ আড়াইশো মেট্রিক টন তুলতে পারে। তাই মেনুয়ালী ওই বাল্কহেড তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগে ভেতরের ফ্লাইঅ্যাশ বের করতে হবে। তারপর দুই দিক থেকে এটিকে টেনে তুলতে হবে। ঈদের যাত্রায় সমস্যা না হয় সেজন্য দ্রুত কাজ করা হচ্ছে।