মেয়রের বাসভবন সম্মুখে ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও ইজিবাইক চালকদের প্রতিবাদ

পহেলা অক্টোবর থেকে বরিশাল নগরের নির্ধারিত সড়কে ব্যাটারি চালিত রিক্সা ও হলুদ ইজিবাইক চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে মেট্রোপলিটন ট্রাফিক বিভাগ।
বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১ টার দিকে মালিক ও শ্রমিকরা সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর বাড়ির সামনে এর প্রতিবাদে অবস্থান করেন। যদিও পরবর্তীতে বৈঠক ডেকে সমাধানের আশ্বাসে তারা স্থান ত্যাগ করে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নূরুল ইসলাম।
এসময় অটোরিক্সা মালিক ও শ্রমিকরা জানান, তারা কেউ ঋণ করে গাড়ি কিনেছেন, এই দিয়ে সংসার চলে, চলে বৃদ্ধ মা বাবার ভরনপোষণ। এই সময়ে অটোরিক্সা চলাচল বন্ধ করে দিলে তাদের না খেয়ে থাকতে হবে। নগরে অপরাধ প্রবণতা বাড়বে।
উল্লেখ্য বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকার সকল সড়কে ব্যাটারি চালিত রিক্সা ও হলুদ ইজিবাইক চলাচল নিষিদ্ধ করে বুধবার থেকে নগরে মাইকিং ও প্রচার-প্রচারনা চালাচ্ছে ট্রাফিক বিভাগ।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ সূত্রে জানাগেছে, বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সমূহের যানজট নিরসন এবং সর্বসাধারনের চলাচল নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ সড়ক গঠনের লক্ষে উচ্চ আদালত কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও হলুদ ইজিবাইক চলাচল আগামী ১ অক্টোবর থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
তবে নিষেধাজ্ঞার আওতায় প্রথম ধাপে আগামী ১ অক্টোবর থেকে জিলা স্কুল মোড় থেকে জেলখানা মোড় পর্যন্ত, কাকলীর মোড় থেকে সিটি করপোরেশনের মোড় হয়ে সেটেলমেন্ট অফিস মোড় পর্যন্ত, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোড় থেকে গির্জামহল্লা হয়ে ফলপট্টির মোড়, ভাটারখাল ক্রসিং থেকে ডিসি অফিস গেট, সিটি করপোরেশনের মোড় ও ফলপট্টির মোড় হয়ে চকের পুল পর্যন্ত উচ্চ আদালত কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত হলুদ ইজিবাইক চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।
আর সময়ের সাথে সাথে বেশ কয়েকটি ধাপে বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকার সকল সড়কে ব্যাটারি চালিত রিক্সা ও হলুদ ইজিবাইক চলাচল নিষিদ্ধ করা হবে বলে জানিয়েছেন ট্রাফিক বিভাগ। কারন হিসেবে তারা বলছেন, জনগনের ভোগান্তি লাঘবে অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধের পাশাপাশি নাগরিক চাহিদা অনুযায়ী বৈধ যানবাহনের সংখ্যা স্বাভাবিক হতে হবে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বরিশাল সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স নিয়ে নগরে ২ হাজার ৬১০ টি ব্যাটারি চালিত হলুদ ইজিবাইক চলাচল করে। তবে বাস্তবে নগরে চলাচলরত অটোরিক্সার সংখ্যা দ্বিগুনেরও বেশি। এছাড়া প্যাডেল চালিত রিক্সার চলাচলের অনুমতি থাকলেও, সেই রিক্সার লাইসেন্স লাগিয়ে নগরে চলাচল করছে হাজারের মতো ব্যাটারি চালিত রিক্সা। এরবাহিরে নগরে থ্রি-হুইলার ক্ষ্যাত প্যাডেল রিক্সা, মাহিন্দ্রা ও সিএনজি চলাচল করে।
এদিকে অবৈধ এসব যানবাহন যে পরিমানে চলছে, তাতে নগরের প্রধান বানিজ্যিক এলাকায় যানজট নিরসন করতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হচ্ছে ট্রাফিক বিভাগকে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিসংখ্যান বলছে, অবৈধ এ যানবাহন প্রতিনিয়ত নতুন তৈরি হয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে মূল শহরে প্রবেশ করছে। আবার এসব যানবাহন চালনায় যারা নিয়োজিত তারা যেমন দক্ষ নয়। পাশাপাশি ট্রাফিক আইনও যথাযথভাবে মানছেন না তারা।
আবার বিদ্যুৎ বিভাগের সূত্রে জানাগেছে, এসব যানবাহনে থাকা ব্যাটারিগুলো বৈদ্যুতের সাহায্যে চার্জ দেয়া হয়। বানিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত যানবাহনগুলো বানিজ্যিক মিটারের আওতায় চার্জ দেয়ার কথা থাকলেও তাও মানা হচ্ছে না। নগরের বিভিন্ন এলাকায় ছোট-বড় গ্যারেজ একের পর এক তৈরি হচ্ছে, যেখানে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার অভিযোগও রয়েছে। বিগত সময়ে অভিযান চালিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ এধরনের প্রমান পেয়েছে এবং চার্জিং মেশিনসহ নানান সরঞ্জাম জব্দ করে আসছে। যদিও সবকিছুকে ছাপিয়ে রুট অনুযায়ী বিটমানির প্রচলন থাকায় অনেক সময় অনেক কিছুই ম্যানেজ করে নিচ্ছিলেন যানবাহন সংশ্লিষ্টরা।
সার্বিক বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) মোঃ খায়রুল আলম বলেন, প্রথম ধাপে নগরের প্রাণকেন্দ্র ঘিরে বেশ কয়েকটি সড়কে আগামী ১ অক্টোবর থেকে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে মেট্রোপলিটন এলাকার সড়কে এ যানবাহনগুলো চলাচল নিষিদ্ধ করা হবে। আর জনগনের ভোগান্তি লাঘবে পর্যায়ক্রমে বন্ধের এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।