মৎস্য সম্পদের বৃদ্ধিতে আশা জাগে ,মৎস্য খাদ্যে ক্ষতিকারক রাসায়নিক মিশ্রণ বন্ধ করতে হবে

মৎস্য সম্পদের বৃদ্ধিতে আশা জাগে ,মৎস্য খাদ্যে ক্ষতিকারক রাসায়নিক মিশ্রণ বন্ধ করতে হবে
মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধি এবং আমিষের চাহিদা পুরণ হওয়া নিঃসন্দেহে আশার খবর। বাংলাদেশ যে কোন সময়ের তুলনায় মৎস্য সম্পদে সমৃদ্ধ হয়েছে। মৎস্য সম্পদের উন্নয়নে নতুন নতুন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। মৎস্য সম্পদ নিয়ে গবেষণা করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধনমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মৎস্য সম্পদ রক্ষা এবং মাছ চাষে উদাহরণ সৃষ্টি করায় পুরষ্কৃতি হচ্ছেন উদ্যোক্তারা। আমাদের আমিষের চাহিদা যারা পুরণ করছেন তাদের পুরস্কৃত করাই উচিত। কিন্তু মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধি করতে গিয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা মৎস্য খাবারে ক্ষতিকারক রাসায়নিক মিশ্রণ করছেন। দ্রুত মাছের বৃদ্ধির জন্য মৎস্য খাবারে ওই রাসায়নিক মিশ্রণ করা হচ্ছে। তাই কেবল মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধি নয়, এর সঙ্গে সঙ্গে মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির নামে যারা মৎস্য খাবারে বিষ মিশাচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এক সময় পুকুর, ডোবা, নালা, খাল, বিল এবং নদীতে প্রকৃতিক খাবার খেয়ে মাছের বৃদ্ধি ঘটত। ওই মাছ খেলে আমিষের চাহিদা পুরণ হলেও শরীরে কোন উপসর্গ দেখা দিত না। বর্তমানে চাষের মাছ আমাদের আমিষের চাহিদা পূরণ করলেও মাছের অধিক বৃদ্ধি ঘটাতে প্লাঙ্কটন বাড়াতে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে মানব দেহে। আমরা আমদের মৎস্য সম্পদের বৃদ্ধি ঘটাতে গিয়ে যেন নতুন কোন উপসর্গকে ডেকে না আনি। সেদিকে লক্ষ রাখা অত্যন্ত জরুরী। মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ময়মনসিংহ কর্তৃক রুইজাতীয় মাছের পুষ্টি চাহিদার ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, সর্বোচ্চ মাত্রায় উৎপাদনের জন্য এজাতীয় মাছের সম্পূরক খাদ্যে কমপক্ষে ৩৫ ভাগ আমিষ থাকা বাঞ্ছনীয়। ওই গবেষণা অনুযায়ী রুই জাতীয় মাছের মিশ্র চাষের সম্পূরক খাদ্য তৈরির জন্য চালের কুঁড়া ৫৩ ভাগ, সরিষার খৈল ৩০ দশমিক ৫০ ভাগ, ভিটামিন ও খনিজ মিশ্রণ শূন্য দশমিক ৫০ ভাগ, চিটাগুড় ৬ ভাগ থাকতে হবে। কিন্তু বাস্তবে এই নিয়ম মানছেন না অনেক মৎস্য খাবার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। তারা গরু মোটাতাজাকরণের মতো মৎস্য খাদ্য তৈরিতে ক্ষতিকারক রাসায়নিক মিশ্রণ করছেন। যা আমাদের শরীরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তাই মৎস্য সম্পদের বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মাছের খাবারে যাতে ক্ষতিকারক কোন রাসায়নিক মিশ্রণ না করতে পারে সে ব্যাপারে নজরদারী বাড়াতে হবে। সুষম পুষ্টিকর মৎস্য খাদ্য নামে বাজারে নিম্ন মানের খাবার বিক্রি হচ্ছে। সুষম খাদ্যের উপাদানগুলো হচ্ছে আমিষ, শ্বেতসার, ভিটামিন, তৈল, খনিজ লবণ ও পানি। কিন্তু মাছের খাবার তৈরি করা অনেক প্রতিষ্ঠান এই নিয়ম মানছেন না। তারা সস্তা দরে বিভিন্ন রাসায়নিক মিশ্রণ ব্যবহার করে মাছের খাবার তৈরি করছেন। ওই খাবার খেয়ে মাছ দ্রুত বাড়লেও মানব দেহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এখনই এইসব খাবার বাজার থেকে তুলে নিতে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলে আমরা যেমন মৎস্য সম্পদে সমৃদ্ধ হচ্ছে, তেমনি স্থায়ীভাবে আমিষের চাহিদা পূরণ করে বিশ্ব সভায় অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হবো। তাই মৎস্য সম্পদের বৃদ্ধিতে আশা জাগিয়েছে বাংলাদেশ, সেটা যেন অশুভ চিন্তা ম্লান করে না দেয়। মৎস্য খাদ্যে ক্ষতিকারক রাসায়নিক মিশ্রণ ঘটিয়ে আমাদের জীবনকে যেন হুমকীর মুখে ঠেলে না দেয়।