লকডাউন ভাঙার প্রতিযোগিতায় রাজধানীবাসী

টানা ১১ দিন বন্ধ থাকার পর আজ রোববার সারাদেশে খুলেছে দোকান ও শপিংমল। মার্কেট খুলে দেয়ার প্রথম দিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সড়কে সড়কে যেন আনঅফিসিয়ালি লকডাউন শেষ হয়েছে। শুরু হয়েছে পূর্বের চিরচেনা সেই যানজট। এ যেন লকডাউন ভাঙার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন রাজধানীবাসী।
সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর মিরপুর, আগারগাঁও, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, পান্থপথ, নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল ও রিকশায় পূর্ণ রাস্তা।
আগারগাঁও থেকে বিজয়স্মরণী পর্যন্ত এসব যানবাহনের দীর্ঘ সারি। একদিকে ফার্মগেট থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পর্যন্ত যানজট দেখা গেছে। অন্যদিকে এই যানজট ফার্মগেট থেকে কারওয়ান বাজার হয়ে পান্থপথ এলাকা পর্যন্ত ছুঁয়েছে।
গণপরিবহন না থাকায় একদিকে যেমন পরিবহন সংকটে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের, অন্যদিকে গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়াও।
ফার্মগেটে জাহাঙ্গীর নামে এক সিএনজিচালক বলেন, লকডাউনের মধ্যে এত যানজট ছিল না। আজকে মার্কেট খোলা তো, তাই যানজট বেশি। তিনি আরো বলেন, আগারগাঁও থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী অফিস, ফার্মেগেট, কাওরান বাজার -এই পুরোটাই জ্যাম।
এদিকে ঈদকে সামনে রেখে সরকার আজ থেকে মার্কেট খুলে দিয়েছে। নিউমার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, দোকানগুলো খোলা শুরু হয়েছে। যারা খুলেছেন, তারা ঝাড়ামোছার কাজ করছেন। এরই মধ্যে কোনো ক্রেতা এলে সেটাও সামলাচ্ছেন কেউ কেউ।
গুলিস্তান এলাকা ফিরে গেছে তার পুরোনো রূপে। ফুটপাতে পসরা সাজিয়ে বসেছেন হকাররা। গুলিস্তান মোড়ে যান চলাচল বেড়েছে। পুরান ঢাকার নবাবপুর রোডে মানুষের ভিড় বেড়েছে অনেক। দোকানপাটও খোলা রয়েছে।
নিউমার্কেটে আকরাম হোসেন নামে দোকানের এক মালিক বলেন, রোজার মধ্যে এসে দোকান খুলেছি। কতটা ব্যবসা করতে পারব জানি না। কারণ, এখন অনেক গরম। বিকেল পাঁচটায় বন্ধ করতে হবে। ইফতারের পরেই আসলে মানুষ বেশি আসে। তারপরও কিছু বেচাবিক্রি হয়তো হবে।
তিনি আরো বলেন, গণপরিবহন বন্ধ। কাছের মানুষ যারা, তারাই আসবে। দূরের ক্রেতারা আসতে পারবে না। বাস চলাচল শুরু হলে হয়তো বেচাবিক্রি বাড়বে।
গাউছিয়া মার্কেটে একটি বড় ব্যাগ নিয়ে ঘুরছিলেন আমিনা আহমেদ নামে একজন। তিনি বলেন, বেশি কাপড় কিনে এবার তিনি কিছু পোশাক বানাবেন। তাই সকাল সকাল চলে এসেছেন ভিড় এড়াতে।
এদিকে রাজধানীর কিছু চেকপোস্টগুলোয় ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও তল্লাশি করা হচ্ছে না মুভমেন্ট পাস। কে জরুরি কাজে আর কে অপ্রয়োজনে রাস্তায় বের হয়েছে, তা দেখা হচ্ছে না। তবে কিছু জায়গায় রিকশাওয়ালাদের হয়রানি করতে দেখা গেছে সড়কে দায়িত্বরতদের।
পুলিশ সদস্যরা বলছেন, আজ থেকে সব দোকানপাট, শপিংমল এবং মার্কেট খোলার কারণে রাজধানীর সব সড়কে যানবাহন ও মানুষের চাপ বেড়েছে। গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি না দেয়ায় সিএনজি, মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকারে মার্কেট, কর্মস্থল ও প্রয়োজনীয় কাজে যাচ্ছেন মানুষ। এ কারণে একসঙ্গে সবাইকে মুভমেন্ট পাস আছে কি না কিংবা জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে সড়কে বেশিরভাগ মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে লক্ষ করা গেছে।
শাহবাগ মোড় থেকে কোনো পরিবহন না পেয়ে একটি ভ্যানে উঠেছেন সুজন নামে একজন। ওই একই ভ্যানে আরো কয়েকজন উঠে পড়েন। সুজন বলেন, টানা ১১ দিন বন্ধ থাকার পর দোকান খুলেছে। মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু রাস্তায় বাসসহ যানবাহনের সংখ্যা কম। বাধ্য হয়েই তিনি স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে ভ্যানে করে গন্তব্যে যাচ্ছেন। এতে তিনি নিজেও করোনায় সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা তিনি দেখছেন না।