শিক্ষার্থীদের ব্যতিক্রমী ঈদসামগ্রী বিতরণ স্মাইল হকার-এর ছোট উদ্যোগে বড় পরিবর্তনের আহ্বান

শিক্ষার্থীদের ব্যতিক্রমী ঈদসামগ্রী বিতরণ স্মাইল হকার-এর ছোট উদ্যোগে বড় পরিবর্তনের আহ্বান
বরিশাল নগরের বিভিন্ন কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া শিক্ষার্থীরা পড়াশুনার ফাঁকে ফাঁকে সমাজে পিছিয়ে থাকা পঙ্গু, বয়স্ক এবং দুস্থদের সন্ধানে নামে। পেয়েও যায় এরকম অবেহেলিত কিছু মানুষ। তাঁদের হাতে ঈদের পোশাক এবং খাবার সামগ্রি তুলে দিতে কাজে লেগে পড়ে তারা। এরকম ৫২ জনের হাতে তুলে দেয় ঈদের নতুন পোশাক ও খাবার সামগ্রি। গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় স্মাইল হকার গুরুপের নামে শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ কাঞ্চন উদ্যানে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানেরে মাধ্যমে এই ৫২ পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ঈদের নতুন পোশাক ও খাবার সামগ্রি। কলেজ পড়ুয়া ওই শিক্ষার্থীরা নিজেদের টিফিনের অর্থ এবং রিকসা ভাড়ার টাকা সঞ্চয় শুরু করে আরো অনেক আগ থেকে। সেই টাকা জমিয়ে এবং সমব্যাথী কিছু মানুষের সহযোগিতা নিয়ে ৩৪ হাজার ৮৮৯ টাকা জমায় তারা। সেই অর্থে ক্রয় করে দুস্থদের জন্য ঈদের পোশাক এবং খাবার। এই শিক্ষার্থীরা গত ১৫ মে থেকে নেমে পড়ে যাদের সত্যিকার সহযোগিতা দরকার সেরকম মানুষদের সন্ধানে। তাঁদের চোখে যারা অসহয় তারা ঈদের নতুন পোশাক পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছে। উদ্যোক্তাদের একজন কানিজ ফাতেমা জ্যোতি জানায়, আমরা প্রাইভেট পড়ার জন্য নগরের বিভিন্ন এলাকায় স্যারদের বাসায় যেতাম। সেখানে দেখেছি অনেক পঙ্গু এবং অসহায় মানুষ ভিক্ষা করছে। আমাদের মনে হয়েছে আমারা ভালো থাকলেও আমাদের পাশের মানুষগুলো ভালোই নেই। বিষয়টা আমাদের মনে দাগ কাটে। এরপর থেকে কিছু একটা করার চিন্তা শুরু। সেখান থেকেই কাজে নেমে পরি আামরা কয়েকজন। ওই চিন্তার ফসল আমাদের সহপাঠী বন্ধুরা মিলে একটি গ্রুপ খুলি। যার নাম দেওয়া হয় ‘স্মাইল হকার’ এই গুরুপের আহ্বায়ক করা হয় জান্নাতুল ফেরদৌস ববিকে। আমরা সবাই ওই গ্রুপের সদস্য। গুরুপের আহ্বায়ক জান্নাতুল ফেরদৌস ববি ভোরের আলোক জানায়, গত বছর আমাদের জমানো অর্থ দিয়ে শীতার্তদের মাঝে শীতের কাপড় এবং ঈদের পোশাক দিয়েছি। তবে সেটা সামান্য। তাতে আমরা তৃপ্ত হতে পারছিলাম না। এবছর আমাদের গ্রুপের প্রায় ৩৫ বন্ধু সহপাঠী মিলে ঈদে দুস্থদের ঈদের নতুন পোশাক দেওয়ার উদ্যোগ নেই। বাবা-মায়ের কাছ থেকে দেওয়া রিকশা ভাড়া ও টিফিনের অর্থ সাশ্রয় শুরু করি আমরা। এর সঙ্গে আমদের এক শিক্ষক ও বিভিন্ন স্থানে নাগরিকদের কাছ থেকে চেয়ে অর্থ সংগ্রহ করি। যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৪ হাজার ৮৮৯ টাকা। সেই অর্থ দিয়ে এই দুস্থদের মাঝে ঈদের নতুন পোশাক তুলে দেওয়া হয়েছে। সদস্য জেরিন সুলতানা বলেন, এবার আমরা নগরের বিভিন্ন এলকার পিছিয়ে থাকা ৫২জনকে সামান্য ঈদের পোশাক ও খাবার সামগ্রি দিয়েছি। আমামীতে আমরা উদ্যোগ নেবে পুনর্বাসনের। একজন একজন করে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেবো। কাউকে রিকশা কিনে দেবো, কাাউকে ভ্যান আবার কাউকে দেবো সেলাই মেশিন। অবহেলিত মানুষদের হাতে ঈদের পোশাক ও খাবার তুলে দিতে আসা স্মাইল হকার গ্রুপের উপদেষ্টা ও কলেজ শিক্ষক রাশেদুল হাসান বলেন, শিক্ষার্থীদের এই উদ্যোগ প্রমাণ করে আমদের শিক্ষার্থীরা সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কেবল শিক্ষিত হলে চলবে না। শিক্ষার সঙ্গে মানুষের মতো মানুষ হতে হবে। এই শিক্ষার্থীরা সত্যিকার মানুষের মতো মানুষ হয়ে উঠছে। ওরা অসহায় মানুষের কথা চিন্তা করছে এটা ভেবেই আনন্দ লাগছে। আমরা ওদের পেছনে থেকে পড়াশুনার পাশাপাশি বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহযোগিতা দেবো। ঈদের নতুন পোশাক ও খাবার সামগ্রি সংগ্রহে সার্বিকভাবে সহযোগী হয়ে কাজ করেছে শিক্ষার্থী ও স্মাইল হকার গুরুপের সদস্য মারিয়া ইসলাম মিতু, মুরাদ মাহমুদ, তিথি, সঞ্চি ইসলাম, তৌসি ইসলাম, পৃথা, ইতি, আকিবসহ অনেক বন্ধু। ঈদের নতুন পোশাক ও খাবার সামগ্রি পাওয়া বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা এলাকার পঙ্গু বেল্লাল সরদার বলেন, আমি চৌমাথা এলাকায় ভিক্ষা করতাম। ওই ছাত্র-ছাত্রীরা সেখানে গিয়া আমকে একটা টোকেন দিয়েছে। সেই টোকেনে আমাকে নতুন কাপড় এবং খাবার দেওয়া হয়েছে। এরকমও সহযোগিতা হয় আগে জানা ছিল না। আমি ওদের জন্য দোয়া করি। বানারীপাড়া উপজেলার বাইশারী এলাকার রাবেয়া বেগম বরিশাল নগরের ফরেষ্টার বাড়ি এলাকায় বাড়ি বাড়ি ঝিয়ে কাজ করেন। তিনি বলেন, আমি বাড়িতে ঝি এর কারজ করি। আমাকে ওনারা মান ঠিকানা লিখে এই টোকেন দিয়েেিছ। ঈদের নতুন কাপর পেয়ে আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি। রূপাতলী এলাকার চান্দু মার্কেটে ভিক্ষা করত বয়স্ক আবদুল লতিফ হাওলাদার। তিনিও পেয়েছেন শিক্ষার্থীদের দেওয়া ঈদের পোশাক। তার মতো হুইল চেয়ারে বসে ভিক্ষা করা এক নারীনহ ৫২জনকে খুঁজে বের করে তাদের হাতে দেওয়া হয় ওই সহযোগিতা।