শেবাচিমে ডেন্টাল ইউনিটের ইন্টার্নদের কার্যক্রম বন্ধ

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (শেবাচিম)-এর ডেন্টাল বিভাগের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে ডেন্টাল বিভাগের রোগীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। বিভাগের কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছে মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল বিভাগে অধ্যয়নরত আড়াইশত শিক্ষার্থী।
দীর্ঘদিন ধরে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বিকল থাকার অজুহাতে ডেন্টাল বিভাগের শিক্ষানবীশ চিকিৎসকরা (ইন্টার্ন) কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে।
হাসপাতালের ডেন্টাল ওয়ার্ড বা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০১২ সালে স্বতন্ত্র ডেন্টাল বিভাগের কার্যক্রম ও শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু হয়। কিন্তু ওই বিভাগের চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি না দেওয়ায় আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে বিভাগটিকে স্বয়ং সম্পূর্ণ করতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়। যার মধ্যে স্ক্যালিংসহ ১২ টির মতো ডেডন্টাল চেয়ার বা ইউনিট, এক্সরে মেশিনসহ আনুসাঙ্গিক যন্ত্রপাতি ছিলো। চাহিদাপত্রে ডেন্টাল চেয়ারসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ইংল্যান্ডের চাওয়া হলেও, জাপানের নামে চীনের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করার অভিযোগ ওঠে। তবে সরবরাহকৃত সেইসব যন্ত্রাপাতি সঠিক মানের ছিল না এমনও অভিযোগ ছিল শুরু থেকেই। তারপর শিক্ষা ও রোগীদের চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার জন্য ওইসব যন্ত্র দিয়েই হাসপাতালের পঞ্চম তলায় ডেডন্টাল বিভাগের সেবা চলে। তিন বছরের মধ্যে স্ক্যালিংসহ ডেডন্টাল চেয়ারগুলো নষ্ট ও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে যায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেরামত করিয়েও বেশিদিন চালতে পারেনি।
হাসপাতালের শিক্ষানবীশ (ইন্টার্ন) চিকিৎসক রিয়াদ মাহমুদ রুবেল বলেন, প্রায় এক বছর আগে থেকে ডেন্টাল বিভাগের যন্ত্রপাতি বিকল হতে থাকে। গত ১ মাসের মধ্যে ডেন্টাল বিভাগের স্ক্যালিংসহ ডেন্টাল চেয়ারগুলো বিকল হয়ে যায়। ভালো থাকা দুটি ডেন্টাল চেয়ার গত সপ্তাহে সম্পূর্ণ বিকল হয়ে যায়। এক্সরে মেশিনটিও নষ্ট হয়ে পরে রয়েছে বহুদিন ধরে। এরপর থেকে পূরাতন ২৮ ও নতুন ১২ জনসহ মোট ৪০ জন শিক্ষানবীশ চিকিৎসকরা কোন কার্যক্রম চালাতে পারছেন না। যন্ত্রপাতি না থাকায় ডেন্টাল ইউনিটের শিক্ষর্থীরা ব্যবহারিক কিছু শিখতে পারছে না।
শিক্ষানবীশ চিকিৎসক পল্লব সরকার জানান, যন্ত্রপাতি বিকল থাকায় বর্তমানে ওয়ার্ডটিতে কোন রোগী ভর্তি করা যাচ্ছে না। ফলে বিভাগের দায়িত্বে থাকা ৫ চিকিৎসকসহ সেবিকা ও কর্মচারীরাও অলস সময় পর করছেন। যন্ত্রপাতি বিকল থাকায় বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে বিভাগের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এটাকে কর্মবিরতি বলা যাবে না। কারণ যন্ত্রপাতি সচল রেখে বিভাগ বন্ধ করা হয়নি। যন্ত্রপাতি না থাকায় বিভাগ বন্ধ করা হয়েছে।
ওয়ার্ডের দায়িত্বরতরা জানান, গত শনিবার থেকে শিক্ষানবীশ চিকিৎসকরা তাদের কাজকর্ম বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া যন্ত্রপাতি বিকল থাকায় নতুন রোগীও ভর্তি নেয়া হচ্ছে না। গত মঙ্গলবার দুপুরে ওয়ার্ডটিতে মাত্র ১ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। প্রায় ২ মাস ধরে এক্সরে মেশিন বিকল থাকায় সেই কক্ষটিই তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে ডেন্টাল বিভাগের দায়িত্বরত রেজিষ্ট্রার ডা. শাহরিয়ার বলেন, প্রতিদিন হাসপাতলের ডেন্টাল বহিঃবিভাগে ১০০ ও ইনডোরে ৫০ জন রোগীর সেবা দেয়া হতো, সেখানে এখন বেডগুলো খালি রয়েছে। ডেন্টাল বিভাগের সবগুলো চেয়ার বা ইউনিট বিকল হয়ে পড়ায় গত শনিবার শিক্ষানবীশ চিকিৎসকরা কর্মবিরতিতে যাওয়ার কথা জানায়। এরপর তারা স্বাভাবিক কাজকর্মও বন্ধ করে দেয়। তবে যন্ত্রপাতি বিকল থাকায় নতুন রোগী হাসপাতালের ওই বিভাগে ভর্তি করা হচ্ছে না। এব্যাপারে বহিঃবিভাগকে সেধরণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। আশাকরি শিক্ষার্থী ও রোগীদের কথা বিবেচনা করে দ্রুত সমাধান করা হবে।