সচেতন ঈদ শুভেচ্ছা

সচেতন ঈদ শুভেচ্ছা

গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে করোনা দুর্যোগে গোটা বিশ^ বিপর্যস্ত। মৃত্যুর মিছিলের মধ্য দিয়ে হাঁটছি আমরা। স্বজন হারানো ব্যাথায় কাতরাচ্ছে দুনিয়া। তারপরও অবিরাম চলেছি এই দুর্যোগ মোকাবেলায়। করোনা মহামারী হয়তো একদিন এই মানুষের কাছেই নতি স্বীকার করবে। ততোদিনে আমাদের অনেক কিছু হারাতে হবে। করোনার সঙ্গে সঙ্গী হয়েই আগামী দুঃসময় পাড় করবো আমরা। ওই যে রবীন্দ্রনাথ বলে গেছেন, ‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে...’। তাতে কি আসে যায়। তারপর পৃথিবী থাকবে। থাকবে মানুষের ভালোবাসা। করোনায় আমদের সতর্কতা ছাড়া অন্য কোন বিকল্প নেই। তাই এবারে আমরা বলেত চাই ‘সচেতন ঈদ শুভেচ্ছা।

একদিকে করোনা অন্যদিকে কর্মহীন হয়ে দুর্বিসহ জীবন অতিবাহিত করছে। সারা দুনিয়ায় লাখ লাখ মানুষ কর্মহীহন। বেঁচে থেকেও অনেকে মৃতের অবস্থা। অনেকেই কায়মনবাক্যে বলছেন এর চেয়ে করোনা প্রাণ কেড়ে নিলেও বেঁচে যেতাম। সুকান্তের সেই কবিতার লাইনের মতো- ‘ঘরেতে অভবা পৃথিবীটাকে তাই মনে হয় কালো ধোঁয়া’। সবাই চোখে কেবল ধোয়াই দেখছেন। এত মৃত্যু, এত দুঃখ-কষ্ট তারপরও এসেছে ঈদুল ফিতর। আনন্দের ঈদ নিরানন্দে ভরা। তার মধ্যেই আছি আমরা। তবুও ঈদের শুভেচ্ছা সবাইকে। ভোরের আলোর পাঠক, অনলাইনের সকল দর্শক, পত্রিকার বিক্রয়কর্মী এবং সকল শুভান্যুায়ীদের ঈদ মোবারক।

করোনায় কেড়ে নেওয়া প্রাণগুলো জানুক, আমরা কেবল ঈদের দিনটি অতিবাহিত করে চলেছি। আনন্দেও আমরা আজ অশ্রু ঝরাচ্ছি সারা পৃথিবীর স্বজন হারানোদের জন্য। তোমরা যারা করোনার গহ্বরে হারিয়ে গেছো, তোমাদের প্রতি আগামী সুন্দর পৃথিবীর ভালোবাসা। আর যারা সম্মুখ সারিতে থেকে করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করে করে প্রাণ দিয়েছো, তোমাদের প্রতি আমাদের বিন¤্র শ্রদ্ধা। তোমরা হচ্ছো গোটা দুনিয়ার বীর করোনা যোদ্ধা। এবারের নিরানন্দেভরা ঈদে আমরা তোমাদের স্মরি।

ঈদের দিন প্রাণখুলে আমাদের ঈদের জামাতে সামিল হবার কথা। কাতারবন্দি হয়ে নামাজ আদায় করার কথা। কিন্তু করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় কেবল শারীরিক দূরত্বে থেকে নিয়ম পালনের নামাজ পড়ার চেষ্টা করছি। প্রিয়জনকে কোনভাবেই কাছাকাছি থেকে জড়িয়ে ধরা যাচ্ছে না। করোনা আমাদের এতটাই বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। প্রিয় স্বজনের নিঃশ্বাসকেও আমরা আজ বিশ্বাস করতে পারছি না। তারপরও আমরা শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখেই সবার মঙ্গল কামনা করবো। বিশ্বের সব মানুষের মুক্তির কথা বলবো। বলবো, পৃথিবী থেকে যেন দ্রুত করোনা নামের হন্তারকের বিদায় হয়। আমরা যেন সামাজিকভাবে মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধ রচনা করতে পারি।

ঈদের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের সেই অমর গানটি কণ্ঠে তুলে ফিরে যাবার চেষ্টা করবো ময়দান, মসজিদ থেকে স্বজনদের কাছে। শরীরি উপস্থিতি না হলেও অন্তর দিয়েই সেই যাওয়া সার্থক করে থুলতে হবে। আমাদের ঈদ শুরু হবে ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে, এলো খুশির ঈদ’ কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই গান দিয়ে। এই গান ধ্বণি প্রতিধ্বনি তুলবে গোটা বিশে^। ওই গান গেয়ে গেয়ে আমরা ঈদের দিনটি অতিবাহিত করতে চাই। একই সঙ্গে চাই, আগামী পৃথিবী যেন করোনা নামের সকল অশুভ ছায়াকে ম্লান করে দিয়ে নির্মল আনন্দে ভরিয়ে দেয় আমাদের। সেই প্রত্যাশা রেখে আবারো সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। ঈদ মোবারক।