সম্ভাবনাকে বাঁচিয়ে রাখতে করোনায় সতর্ক থাকতেই হবে

বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে সতর্কতার কোন বিকল্প নেই। আমাদের অবশ্য অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সবাইকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পড়তে হবে। করোনার টিকা নেওয়াসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা এখনো আমাদের চাহিদা অনুযায়ী দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোও সচেতন ও সতর্কতাকে উপজীব্য করে চলেছে। সেখানে আমাদের মত দেশে বিষয়টিকে অনেকটা গুরুত্বহীনভাবে দেখা হচ্ছে। কেবল প্রশাসন, মোবাইল কোর্ট, পুলিশ দিয়ে এই ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব হবে না। এর সঙ্গে অবশ্যই সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ করতে হবে। কারণ আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মর নিশ্চয়তা জড়িয়ে আছে করোনার ভয়াবহতার সঙ্গে। স্কুল কলেজ বিশ^বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় আগামীর সম্ভাবনা কিন্তু স্থির হয়ে আছে। তাদের জন্য হলেও আমাদের স্বাস্থ্যবিধি এবং করোনা মোকাবেলার জন্য একযোগে কাজ করা উচিত।
করোনার কারণে পিছিয়ে যাচ্ছে অর্থনীতি। শিক্ষা-সংস্কৃতিসহ সর্বস্তরে চরম অনিশ্চয়তা নেমে এসেছে। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত শিক্ষা বিশেষ করে মেডিকেল, নার্সিং, মিডওয়াইফ, প্যাথলজিসহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রায় দেড় বছর শেষ হতে চলেছে। কিন্তু তাদের শিক্ষার কিছুই শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না। স্কুল কলেজ, বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চরম হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। ওদের মুক্তি দিতে হলেও সবার করোনা নির্দেশনা মেনে চলা প্রয়োজন।
বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিকল্প পন্থায় শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার দাবি করেছে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে জরিপ করে দেখিয়ে দিয়েছে ৮৭ ভাগের বেশি শিক্ষার্থী অনিশ্চয়তা কাটিয়ে শিক্ষা জীবন চালু রাখার দাবি করেছে। মেডিকেল, বুয়েটসহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও তাদের শিক্ষা জীবনের নিশ্চয়তা চাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় তারা আরও শঙ্কার মধ্যে পড়েছে। আমাদের দেশে ইচ্ছে থাকলেও ১৬ থেকে ১৮ কোটি মানুষকে করোনার টিকা দেওয়া সম্ভব হবে না। এখান থেকে মুক্তি পেতে হলে অবশ্যই সতর্ক ও সচেতন হতে হবে।
গত মে মাসের তথ্য অনুযায়ী প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছেন ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৮৫৪ জন, আর দ্বিতীয় ডোজ টিকা পেয়েছেন ৩৩ লাখ ১৩ হাজার ৮২৪ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলিয়ে এখন পর্যন্ত টিকা দেয়া হয়েছে ৯১ লাখ ৩৩ হাজার ২৭৮ ডোজ। ভারত থেকে কেনা এবং উপহার হিসাবে পাওয়া মিলিয়ে দেশে টিকা এক কোটি ২ লাখ ডোজ পেয়েছে। অনেক নাগকির প্রথম ডোজ টিকা নেওয়ার পর টিকা সংকটের কারণে দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারছেন না। যদিও চীন থেকে একটা চালান টিকা এসেছে। ওই টিকা মেডিকেল, নার্সিং শিক্ষার্থী এবং বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেওয়ার কথা। তারপরও টিকা অপ্রতুল।
জনসংখ্যার হার হিসেব করলে সংখ্যা অতি নগন্য। এত সংখ্যক মানুষের জন্য টিকা সংগ্রহ করা অনেকটা দুঃসাধ্য ব্যাপার। তারপরও সরকারের সদিচ্ছা রয়েছে। যতোদিন পর্যন্ত সবার জন্য টিাকা ব্যবস্থা করা সম্ভব না হয় ততোদিন আমাদের নিজস্ব সুরক্ষা ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দিতেই হবে। আর সেজন্য আমাদের করোনা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিরোধে নিজ নিজ উদ্যোগে ব্যবস্থা নিতে হবে।
করোনা মোকাবেলায় সারা দেশে সীমিত পরিসরে লকডাউন চলছে। এই লকডাউন যদি মেনে চলা সম্ভব হয় তাহলে অবশ্যই করোনা সহনীয় অবস্থায় আনা সম্ভব হবে। এর সঙ্গে আস্তে আস্তে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলে শিক্ষা ব্যবস্থা সচল করাও সম্ভব হবে। যার মাধ্যমে আগামীর সম্ভাবনার ফসল শিক্ষার্থীরা জীবনে স্বস্তি ফিরে পাবে। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অর্থনীতির চাকাও স্বাভাবিক হবে। এই নির্দেশনা অমান্য করলে আমরা নিজেরা নিজেদের পায়ে কুড়াল মেরে বসবো। সেটা যেন না হায় সেদিকে অবশ্য নজর দিতে হবে।
অমরা লক্ষ্য করছি সারা দেশের সঙ্গে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডেও রোগীর ভীড় বাড়ছে। বাড়ছে শনাক্তের হারও। গত ২৪ ঘন্টায় ৬জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। অথচ শনাক্ত ও মৃত্যুর হার কিন্তু প্রায় শূন্যে নেমে এসেছিল। কেবল মানুষের অসচেতনতা এবং স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করার কারণেই বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল এবং শনাক্তের সংখ্যা। এটাকে অবশ্যই বলতে হবে অশনিসংকেত। এই শংকা দূর করতে হলে আপনি, আমি, আমাদের সবাইকে মিলে উদ্যোগ নিতে হবে। কেবল ডাক্তার, প্রশাসন, পুলিশ দিয়ে এই মহামারী নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। সম্ভাবনাময় আগামীকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে, সবাইকে সমানভাবে করোনা মোকাবেলায় উদ্যোগী হতে হবে।